বন্যার পানি থেকে হেলমেটের ছেঁড়া ফিতা—ক্রিকেটের যত ‘টাইমড আউট’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের একটি পাতায় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের নাম আলাদা করে লেখা থাকবে। আর তাতে বাংলাদেশের অবদান যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আজ ‘টাইমড আউট’ হয়েছেন শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এই আউট হন ম্যাথুস।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ২৫তম ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমেছিলেন ক্রিজে। উইকেটে গিয়ে দেখেন, তাঁর হেলমেটের স্ট্র্যাপে কোনো একটা সমস্যা। সম্ভবত ছেঁড়া ছিল। ড্রেসিং রুমে ইশারা করেন নতুন হেলমেটের জন্য। অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের মাধ্যমে নতুন হেলমেট আনতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। এ সময় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বিপক্ষে ‘টাইমড আউট’–এর আপিল করে বাংলাদেশ।
টেলিভিশনে দেখা গেছে, আউট নিয়ে মাঠেই ম্যাথুস আম্পায়ারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন। একপর্যায়ে বিষয়টা নিয়ে সাকিবের কাছে গেছেন তিনি। সাকিব তাঁকে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত বদলাননি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাথুসই প্রথম ব্যাটসম্যান, যিনি টাইমড আউট হলেন। এর আগে ২০০৬–০৭ মৌসুমে নিউল্যান্ডস টেস্টে শচীন টেন্ডুলকার একবার টাইমড আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান। ক্রিজে আসতে দেরি করলেও আউটের আবেদন করেননি দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ‘টাইমড আউট’–এর নজির আছে ৬টি। আসুন এই ৬টি ঘটনা জেনে নিই—
অ্যান্ড্রু জর্ডান:
১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোর্ট এলিজাবেথে ট্রান্সভালের বিপক্ষে ইস্টার্ন প্রভিন্সের হয়ে ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু জর্ডান। বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনের খেলার বেশির ভাগ অংশ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ইস্টার্ন প্রভিডেন্সের ওপেনার জর্ডান ০ রানে অপরাজিত ছিলেন প্রথম দিনের খেলা শেষে। প্রচুর বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট প্রায় ভেসে গিয়েছিল। বন্যার পানি পেরিয়ে পরদিন সকালে সময়মতো মাঠে আসতে পারেননি জর্ডান। তাই ‘টাইমড আউট’ ঘোষণা করা হয় তাঁকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টাইমড আউটের এটাই প্রথম নজির।
হেমুলাল যাদব:
২০ ডিসেম্বর, ১৯৯৭। কটকে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচের মুখোমুখি ওডিশা ও ত্রিপুরা। ম্যাচে ত্রিপুরা ৯ম উইকেট হারানোর পর আম্পায়ার পানি পানের বিরতি দেন। ৩ মিনিটের পানি পান বিরতি শেষে ত্রিপুরার ১১তম ব্যাটসম্যান হেমুলাল যাদব মাঠে নামেননি। বাউন্ডারি সীমানায় বসে টিম ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প করছিলেন। মাঠে আম্পায়াররা নিজ নিজ অবস্থানে দাঁড়ানোর পর ওডিশার খেলোয়াড়েরা ‘টাইমড আউট’–এর আবেদন করেন এবং আম্পায়াররা তাতে সাড়া দিয়ে আউট ঘোষণা করেন হেমুলাল যাদবকে।
ভ্যাসবার্ট ড্রেকস:
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্ট লন্ডনে সুপারস্পোর্ট সিরিজে বোর্ডার–ফ্রি স্টেটের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। বোর্ডারের হয়ে এ ম্যাচ খেলার কথা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ভ্যাসবার্ট ড্রেকসের। শ্রীলঙ্কায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে কলম্বো থেকে ইস্ট লন্ডনের ফ্লাইট ধরার কথা ছিল ড্রেকসের। কিন্তু ফ্লাইট দেরি হয় আর ওদিকে ড্রেকসকেও ব্যাটিং অর্ডারে ধীরে ধীরে নিচে নামানো হয়। ড্রেকস এরপরও মাঠে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। উড়োজাহাজে থাকতেই ‘টাইমড আউট’ হন।
এজে হ্যারিস:
২০০৩ সালের এপ্রিল। নটিংহামে ডারহাম ইউসিসিইর বিপক্ষে লড়ছিল নটিংহামশায়ার। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬৫ রানে অলআউট হয় ডারহাম ইউসিসিই। জেসন গিলিয়ান ও বিলাল শাফায়াতের জোড়া শতকে শক্ত অবস্থানে পৌঁছে যায় নটিংহামশায়ার। ডারহাম একপর্যায়ে ৯ উইকেটে ৫৪২ রানে থাকতে, ক্রিস রিড যখন ৯৪ রানে অপরাজিত, তখন ১১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে নামার কথা ছিল এ জে হ্যারিসের। দুর্ভাগ্যবশত কুঁচকির চোটে ভুগছিলেন হ্যারিস। সে জন্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠে নামছিলেন এবং সেটা এতই মন্থরগতিতে যে ডারহাম ইউসিসির খেলোয়াড়েরা টাইমড আউটের আবেদন করেন এবং আম্পায়ারও সম্মতি দেন।
রায়ান অস্টিন:
২০১৩–১৪ মৌসুমে সেন্ট ভিনসেন্টের কিংস্টনে সম্মিলিত কলেজ ও ক্যাম্পাস মিলে উইন্ডওয়ার্ড আইল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল। উইন্ডওয়ার্ডের প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট নেন অস্টিন। কিন্তু নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রিজে যেতে না পারায় টাইমড আউট হন।
চার্লস কুঞ্জি:
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বুলাওয়েতে লোগান কাপে মাতাবেলেল্যান্ড টাস্কার্স মুখোমুখি হয়েছিল মাউন্টেইনার্সের। টাস্কার্স ৫ উইকেটে ৫৩ রান তোলার পর ব্যাটিংয়ে নামার কথা ছিল চার্লস কুঞ্জির। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুঞ্জি ক্রিজে যেতে পারেননি এবং ফিল্ডিং দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার।