>দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ নিয়ে বিশ্বসেরা ৩০ জন ফুটবলার ও কোচের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে শুধুই প্রথম আলোয়। আজ ছাপা হলো গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হামেস রদ্রিগেজের সাক্ষাৎকার
পাঁচ ম্যাচে ৬ গোল। মাত্র ২২ বছর বয়সী হামেস রদ্রিগেজ ২০১৪ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। তাঁর পারফরম্যান্সে চড়েই কলম্বিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। কিন্তু স্বাগতিকদের কাছে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে ফিরতে হয় তাদের। কাঁদতে থাকা রদ্রিগেজকে ডেভিড লুইজের সান্ত্বনা দেওয়ার দৃশ্য গত বিশ্বকাপেরই স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি-
প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পেছনে আপনার পারফরম্যান্স বড় ভূমিকা রেখেছিল। রাশিয়া বিশ্বকাপে আপনাদের কত দূর যাওয়ার লক্ষ্য?
রদ্রিগেজ: উম্, সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনাল! বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা দারুণ ব্যাপার হবে! মজা করছিলাম। অত দূরের ব্যাপার নিয়ে আপাতত ভাবছি না। আর সবার মতো আমরাও ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। আমাদের প্রথম লক্ষ্যই হলো ১৯ জুন জাপানের বিপক্ষে ভালো খেলা। টুর্নামেন্টের শুরুটা আমরা ভালোভাবে করতে চাই।
প্রশ্ন: ব্রাজিলেও আপনাদের গ্রুপসঙ্গী ছিল জাপান। গ্রিস ও আইভরিকোস্টকে নিয়ে গতবারের গ্রুপটা বেশি কঠিন ছিল? নাকি পোল্যান্ড-সেনেগালকে নিয়ে এবারের গ্রুপ?
রদ্রিগেজ: ব্রাজিলে আমরা গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই জিতেছিলাম। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তিনটি ম্যাচ নিয়েই আমরা চিন্তায় ছিলাম। তিন ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে যখন আমরা দ্বিতীয় পর্বে উঠলাম, তখনই শুধু মনে হয়েছে আমরা দারুণ কিছু করেছি। এবারই একই সূত্র প্রযোজ্য। ভাগ্যে কী আছে কেউ জানে না। আমরা অবশ্যই তিনটি ম্যাচই জিততে চাইব। কিন্তু ফুটবলে চাওয়ামতো জয় সব সময় মেলে না।
প্রশ্ন: আপনি বলতে চাইছেন এবারের গ্রুপটা বেশি কঠিন?
রদ্রিগেজ: আমি বলতে চেয়েছি, ব্রাজিলে গ্রুপ পর্ব শুরুর আগে আমাদের ভাবনাটা যা ছিল, এবারের বিশ্বকাপের আগেও তা-ই থাকছে। হ্যাঁ, এই গ্রুপ থেকে পরের পর্বে যাওয়াটা সহজ হবে না। আমার বায়ার্ন মিউনিখ সতীর্থ রবার্ট লেভানডস্কিই যেমন আমাদের জয়বঞ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে।
প্রশ্ন: আগের বিশ্বকাপ হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকায়। আর এবার ইউরোপে। এই কারণে ইউরোপের দলগুলো কি এগিয়ে থাকবে?
রদ্রিগেজ: ইউরোপের দেশ হয়েও জার্মানি ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতেছিল! দক্ষিণ আমেরিকার সব বড় তারকাই কিন্তু ইউরোপের বড় বড় লিগে খেলে। তাই রাশিয়ায় ভালো করতে এটা কোনো বাধা হবে না। তবে ইউরোপিয়ান দলগুলো চেনা আবহাওয়াতেই খেলবে। আর এটাই প্রতিযোগিতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
প্রশ্ন: সর্বশেষ তিনটি বিশ্বকাপই জিতেছে ইউরোপের দলগুলো। এবার এই ধারা বদলাবে?
রদ্রিগেজ: কেন নয়? আমার মতে, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানির জন্য নিঃসন্দেহে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বড় হুমকি হবে। আর্জেন্টিনা গতবারের ফাইনালিস্ট। আর পুরোনো কোচের সঙ্গে ব্রাজিল তাদের বাজে সময়টাও পেছনে ফেলে এসেছে। তাদের অসাধারণ কিছু তরুণ প্রতিভাও রয়েছে এবার। লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি ও দিয়েগো গডিনের উরুগুয়েও শক্তিশালী দল। আর হিসাবে আমাদেরও ধরুন!
প্রশ্ন: গতবার গোল্ডেন বল জিততে পারেননি...
রদ্রিগেজ: আমি ৬ গোল করেছিলাম। আমরা সেমিফাইনালে গেলে ওটা জেতার কথা ভাবতাম। আর এবার এটা নিয়ে ভাবছিই না। দলের হয়ে যত সম্ভব ম্যাচ জিততে চাই। এটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
প্রশ্ন: এবারের গোল্ডেন বল জেতার লড়াইয়ে কাদের এগিয়ে রাখবেন?
রদ্রিগেজ: অনেক নাম! ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, নেইমার, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, টনি ক্রুসসহ আরও অনেক মহাতারকা আছে এবারের বিশ্বকাপে। এদের প্রত্যেকেই নিজের দলকে এগিয়ে নিতে উন্মুখ হয়ে আছে। আর শেষমেশ দলের সাফল্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের যোগফলেই নির্ধারিত হবে গোল্ডেন বল। তাই এখনই কারও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া ঠিক হবে না। দলের হয়ে, দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সম্মান অর্জনের চেষ্টাই
করবে সবাই। আর সেটাই সেরা ফুটবলার হওয়ার লড়াইয়ে সবাইকে এগিয়ে দেবে।
প্রশ্ন: আপনি দলে থাকতে রিয়াল মাদ্রিদ টানা দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল। এবার থাকলে আপনিও হ্যাটট্রিক শিরোপার ভাগীদার হতেন...
রদ্রিগেজ: তাদের বিপক্ষে আমরা দুই লেগেই খারাপ খেলছি। নিজেরা গোল করতে পারিনি অথচ তাদের সুযোগ দিয়েছি। রিয়ালে থাকতে পারলে অসাধারণ হতো। কিন্তু ইতিহাসে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে নতুন পাতা যোগ করতে চেয়েছিলাম আমরা। সেই কারণেই আমি এখন বায়ার্নে। আর সত্যি বলতে আমি বায়ার্নে দারুণ তৃপ্ত আছি। যা-ই হোক, সামনের এক মাস শুধু বিশ্বকাপ নিয়েই ভাবব। বিশ্বকাপ শেষে আবার ক্লাব ফুটবল নিয়ে কথা বলা
যাবে।
এক নজরে |
পুরো নাম: হামেস দাভিদ রদ্রিগেজ রুবিও |
দল: কলম্বিয়া |
জন্ম: ১২ জুলাই ১৯৯১ |
জন্মস্থান: কুকুতা, কলম্বিয়া |
পজিশন: অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার |
বর্তমান ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিখ (রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে) |
পেশাদার ফুটবলে অভিষেক: ২০০৬ |
জাতীয় দলে অভিষেক: ২০১১ |
ম্যাচ: ৬২ |
গোল: ২১ |
|
ক্লাব ক্যারিয়ার |
ম্যাচ: ৩৭৩ |
গোল: ১০৪ |
ক্লাবে অর্জন |
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (২), ক্লাব বিশ্বকাপ (২), লা লিগা (১), বুন্দেসলিগা (১) পর্তুগিজ লিগ (৩) |