২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

'অন্য কেউ থাকলে গোলের হ্যাটট্রিক করত'

লাওসের গোলরক্ষককে একা পেয়েও বলটা শেষ পর্যন্ত জালে রাখতে পারেননি জীবন। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
লাওসের গোলরক্ষককে একা পেয়েও বলটা শেষ পর্যন্ত জালে রাখতে পারেননি জীবন। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
>মঙ্গলবার ঢাকায় লাওসের বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ের ম্যাচে বেশ কয়েকটি গোল মিস করেছিলেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। তাঁর গোল মিসের খেসারত দিয়ে গোল শূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। তাঁর জায়গায় অন্য কোনো স্ট্রাইকার হলে হ্যাটট্রিক করতে পারতেন বলে মনে করেন জীবন

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা দর্শকদের ক্ষোভ কি কমেছে? টিভির সামনে বসে লাওসের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি যারা দেখেছিলেন, তাদেরও নাবীব নেওয়াজ জীবনের ওপর ক্ষোভ জমে থাকার কথা।

দর্শকদের কথা বাদ দিন, নিজেকে তো ক্ষমা করতে পারছেন না জীবনই। কারণ সেদিন বাংলাদেশের জার্সি চাপালেও তাঁর খেলায় সুফল পাচ্ছিল লাওস দল। গোল মিসের মহড়া দিয়ে জীবন যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তা তাঁর ক্যারিয়ারের ‘মরণ’ও ডেকে আনতে পারত।

একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে সমমানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করার সুযোগই পাওয়া যায় হাতে গোনা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো সুযোগ সেদিন বরাদ্দ ছিল বাংলাদেশ দলের নম্বর নাইনের জন্য। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ পরিষ্কারভাবে গোলের সুযোগ পেয়েছিল চারটি। এর মধ্যে তিনটিই পেয়েছিলেন জীবন। সে সুযোগগুলো থেকে গোল না করাটাই ছিল কঠিন।

প্রথম গোলটা পেতে পারতেন ম্যাচের ২৫ মিনিটে। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও তালগোল পাকিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলরক্ষকের শরীরেই বল মেরেছেন। দ্বিতীয় মিসের দৃশ্যটা প্রথমটি ভুলিয়ে দিতে পারে। রক্ষণচেরা এরিয়াল থ্রু দেখে লাওস গোলরক্ষক পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বল গ্রিপে নেওয়ার আগে বল চলে আসে জীবনের নিয়ন্ত্রণে। আলতো ছোঁয়ায় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে পোস্টের মধ্যে রাখতে পারলেই গোল। কিন্তু তাঁর ভলি ক্রসবার উঁচিয়ে বাইরে।

তৃতীয় গোলের সুযোগ নষ্ট করার দৃশ্যটা আগের দুটির হতাশাকেও আড়ালে ফেলে দিয়েছে। গোলমুখের মাত্র ৬ গজ (প্রায়) দূর থেকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে যে হেডটি নিয়েছেন, সে বল লাওস গোলরক্ষক গ্রিপে নিয়েছেন হেঁটে গিয়ে। এতগুলো মিসের খেসারতও দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

প্রিমিয়ার লিগে এই জীবনের পায়েই গোলের ফোয়ারা। কখনো কখনো তাঁর গোলের সুরভি গ্যালারিতে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই তো এপ্রিলে এএফসি কাপে ভারতের মিনার্ভা পাঞ্জাবের বিপক্ষে দুর্দান্ত গোল করে আবাহনী লিমিটেডকে ফিরিয়েছিলেন সমতায়। প্রিমিয়ার লিগে ১৫ ম্যাচে ১০ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলে চিনতে হয় জার্সি নম্বর দেখে।

টানা গোল মিসের কষ্টগুলো ঘুমাতে দেয় না জীবনকে, ‘জাতীয় দলের জার্সিতে যে সহজ সহজ গোলের সুযোগ মিস করি, আমি ঘুমাতে পারি না। লাওসের বিপক্ষে ম্যাচে আমার জায়গায় অন্য কোনো স্ট্রাইকার থাকলে হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন। আমি নিজেকেই প্রশ্ন করি কেন এমন হচ্ছে।’ মন্দের ভালো হলো নিজের ভুল নিয়ে অনুশোচনা আছে জীবনের। খারাপ সময় থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ের আগে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও জীবনের গোল মিসের খেসারত দিতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। গোল না পাওয়াই এখন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সর্বনাশা রোগের নাম।

রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় জীবনের। এখন পর্যন্ত ১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে গোল মাত্র একটি। ২০১৬ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে করেছিলেন গোলটি। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৬-১ গোলে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি গোল আছে জীবনের। তবে সেটি ফিফার দ্বিতীয় পর্যায়ের স্বীকৃত ম্যাচ ছিল।