৮৩ মিনিটে রিয়ালের খরচ বাড়ল ১৮৮ কোটি টাকা
সিবেলেস চত্বরে তখন উদ্যাপন করতে ব্যস্ত রিয়াল মাদ্রিদ। এর মধ্যেই হঠাৎ এক খেলোয়াড়কে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন বাকিরা। তাঁকে ঘিরে গান গাইতে শুরু করলেন। খেলোয়াড়ের নাম? এডেন হ্যাজার্ড।
উদ্যাপনের সময় সমর্থকদের উদ্দেশে সব খেলোয়াড়কেই কিছু বলতে হয়। নিজের পালায় এসে বেলজিয়ান প্লেমেকার বলছিলেন, ‘এই বছর আমি পারিনি, কিন্তু আগামী বছর আমি আমার সবটুকু দিয়ে দেব আপনাদের জন্য।’
ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবারের মতো লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাবল জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এ অর্জনে হ্যাজার্ডের অবদান শুধু একটি গোলে সহায়তা। এটুকু অবদানের জন্যই রিয়াল মাদ্রিদের তহবিল থেকে খসে পড়ছে দুই কোটি ইউরো। বর্তমান মূল্যমানে যা প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা।
এ মৌসুমে দায়িত্ব পেয়ে কার্লো আনচেলত্তির পরিকল্পনা ছিল করিম বেনজেমার সঙ্গে এডেন হ্যাজার্ড ও গ্যারেথ বেলকে নিয়ে আক্রমণের ত্রিফলা বানাবেন। মৌসুমের প্রথম গোলেই অবদান রেখেছিলেন হ্যাজার্ড, তাঁর পাস থেকেই গোল করেছিলেন বেনজেমা। কিন্তু মৌসুমের বাকি সময়ে লিগে আর কোনো ম্যাচে কোনো অবদান নেই। কিছুদিন পরই চোটে পড়েছেন, ওদিকে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র একাদশে জায়গা পাকা করে নিয়েছেন।
চোট কাটিয়ে মাঝেমধ্যে ফিরেছেন হ্যাজার্ড। কোপা দেল রে-তে এক গোল ও এক সহায়তা করলেও লিগে আর নিয়মিত নামা হয়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগে তো আরও অনিয়মিত। মাত্র এক ম্যাচে শুরু থেকে খেলছেন। সে ম্যাচে নবাগত শেরিফ ক্লাবের কাছে বার্নাব্যুতে হেরেছিল রিয়াল। আরও দুই ম্যাচে খেলেছেন বদলি হিসেবে। পিএসজির মাঠে হারের ম্যাচটি তার একটি। সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে মাত্র ৮৩ মিনিট মাঠে ছিলেন হ্যাজার্ড। পুরো মৌসুমে ৯০৩ মিনিট মাঠে থেকে এক গোল ও দুই গোলে সহায়তা। আর এমন একজন খেলোয়াড়ের জন্যই দুই কোটি ইউরো বুঝিয়ে দিতে হবে চেলসির কাছে।
২০১৯ সালে হ্যাজার্ডকে পেতে আসলে কত অর্থ ব্যয় করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, সেটা এখনো রহস্যাবৃত। প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ইউরো বলা হলেও শর্ত সাপেক্ষে সেটা ১৫ কোটি ইউরো হতে পারে বলে শোনা যায়। সেই শর্তের একটি ছিল, চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে চেলসিকে আরও দুই কোটি ইউরো দেবে রিয়াল মাদ্রিদ। তখন ফর্মের তুঙ্গে থাকা হ্যাজার্ডের জন্য এ শর্ত রিয়াল মেনে নিয়েছিল।
একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য পিএসজি যেখানে নেইমার-এমবাপ্পের পেছনে ৪০ কোটি ইউরোর বেশি খরচ করেছে, তার তুলনায় বাড়তি দুই কোটি ইউরো আর কী! চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ওই দুই কোটি গায়ে লাগবে না, আর না জিতলে তো সে আলোচনা উঠছেই না।
তখন কেউ কল্পনা করতে পারেননি, পরের তিন বছর শুধু চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে ও অস্ত্রোপচার করেই কাটাবেন হ্যাজার্ড। সে কারণেই এভাবে তহবিল থেকে দুই কোটি ইউরো খসা হয়তো মেনে নেওয়া কঠিন হবে। তবে গতকাল সিবেলেসে হ্যাজার্ডের কথায় সমর্থকদের উল্লাস বলে দিয়েছে, যদি নিজের কথা রাখতে পারেন হ্যাজার্ড; তবে আগামী মৌসুমে তাঁর কারণে আরও কিছু অর্থ চেলসির তহবিলে যোগ হলেও সমর্থকদের আপত্তি থাকবে না।
তিন বছরে মাত্র ৬৬ ম্যাচ খেলে ৬ গোল করা ৩১ বছর বয়সী হ্যাজার্ডের হয়তো এটাই শেষ সুযোগ।