ম্যাচ শেষে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ স্টুয়ার্ট হল মাঠে ঢুকে সবার আগে জড়িয়ে ধরলেন জামাল ভূঁইয়াকে। বর্ষীয়ান ইংলিশ কোচ এই মিডফিল্ডারের মাথায় বুলিয়ে দিলেন স্নেহের পরশ। এমন ম্যাচে জামালকে অভিনন্দন না জানিয়ে উপায় আছে!
আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাড়ম্যাড়ে ড্রয়ে নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে সাইফ স্পোর্টিং–আরামবাগ ম্যাচ। অথচ সে ম্যাচটাই দারুণ রোমাঞ্চের পসরা ছড়াল শেষ ১৭ মিনিটে। ৭২ মিনিট পর্যন্ত ১-১ গোলে সমতায় থাকা এ ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার পর স্কোরলাইন ৪–৩!
সাইফ ৪–৩ গোলে হারিয়েছে আরামবাগকে। ৭ গোলের রোমাঞ্চকর এ ম্যাচে নায়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। দর্শনীয় এক ফ্রি কিক থেকে গোল করে তিনি ৩ পয়েন্ট এনে দেন সাইফ স্পোর্টিংকে।
শেষ কয়েক মিনিটে ম্যাচ ক্ষণে ক্ষণে রং বদলেছে। পেন্ডুলামের মতো দুলেছে ভাগ্য। দু–দুবার বার পিছিয়ে পড়া আরামবাগ সমতায় ফিরেছে দারুণভাবে। আর একেবারে শেষ দিকে এসে আরামবাগের উজবেক ফরোয়ার্ড ইসলমজন আবদুকদিরভের শট যেভাবে পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেল, নির্ঘাত রাতটা নির্ঘুমই কাটবে তাঁর!
এই ম্যাচের আগেই দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছিল আরামবাগকে। করোনা পজিটিভ চার ফুটবলার! জ্বরের কারণে ক্যাম্প ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে একাদশ গড়তেই কষ্ট হয়েছে আরামবাগ কোচ জাহিদুর রহমানের।
কিন্তু কে জানত, পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে পড়ে থাকা দুর্বল আরামবাগকে হারাতে এতটা ঘাম ঝরবে সাইফ স্পোর্টিংয়ের?
ম্যাচের ১১ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ঢোকেন। সে যাত্রায় গোল হয়নি। ৩০ মিনিটে এগিয়ে যায় সাইফ স্পোর্টিং। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক ফ্রি কিক নেন জামাল ভূঁইয়া। বক্সের মধ্যে থাকা ডিফেন্ডার ইম্যানুয়েল আরিওয়াচুকুর দর্শনীয় হেডে ১-০ করে সাইফ।
পিছিয়ে পড়েও খেলায় ফেরার দারুণ চেষ্টা ছিল আরামবাগের। ৩৬ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে সাইফ স্পোর্টিংয়ের ডিফেন্ডার সবুজ হোসেনের হাত লাগলে পেনাল্টি পায় আরামবাগ। পেনাল্টি থেকে আবদুকদিরভর গোলে সমতায় ফেরে আরামবাগ।
প্রথমার্ধে যেখানে মাত্র ২ গোল হয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধে এসেছে ৫ গোল। আক্রমণ ও প্রতি–আক্রমণে উপভোগ্য হয়ে ওঠে পুরো দ্বিতীয়ার্ধ। ৭৩ মিনিটে মারাজ হোসেনের দারুণ এক সাইড ভলিতে স্কোর ২-১ করে সাইফ স্পোর্টিং। এর ২ মিনিট পরই ফয়সাল হোসেন করেন ৩-১। মারাজের বাড়িয়ে দেওয়া বলে দারুণ প্লেসিংয়ে গোল করেন ফয়সাল।
৭৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান ৩-২ করে আরামবাগ। বল নিয়ে বক্সে ঢোকা আরামবাগের উজবেক মিডফিল্ডার কলমুরদ সিরিদিনকে ফেলে দেন সাইফ গোলরক্ষক শান্ত কুমার। পেনাল্টি থেকে গোল করেন সিরিদিন।
রক্ষণের ভুলে ৮০ মিনিটে গোল হজম করে সাইফ। আরামবাগের আরাফাত মিয়া ৩–৩ ব্যবধানে সমতায় ফেরান দলকে। ম্যাচ যখন ড্র বলে ধরা হচ্ছিল, ঠিক তখনই নায়কের ভূমিকায় জামাল ভূঁইয়া।
৮৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জামাল ভূইয়ার ফ্রি কিক ‘মানবদেয়াল’–এর ওপর দিয়ে রংধনুর মতো বেঁকে আশ্রয় নেয় জালে।
এই জয়ে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে উঠে এল সাইফ স্পোর্টিং। আর ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতেই আরামবাগ। এখন তো অবনমন চোখ রাঙাচ্ছে আরামবাগের।