২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

৫ গোল? মেসির আগে আরও ৬৩ বার

আর্জেন্টিনার জার্সিতে এক ম্যাচে পাঁচ গোল করেছেন মেসি। এমন কীর্তি কতজন করেছেন আর?ছবি: এএফপি

প্রীতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের ১১০ নম্বর দল। কাল রাতে এস্তোনিয়ার বিপক্ষে তাই প্রায় নতুন এক একাদশ নিয়ে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিওনেল মেসি তো ছিলেন। মেসি একাই করেছেন ৫ গোল। এর আগে যে কীর্তি ছিল আর্জেন্টিনার মাত্র দুই ফুটবলারের। সর্বশেষটি ৮০ বছর আগে।

সেই দুই ফুটবলার হুয়ান মারভেৎসি ও হোসে মরেনো আবার ছিলেন সতীর্থ। ১৯৪১ কোপা আমেরিকাজয়ী আর্জেন্টিনা দলের সদস্য ছিলেন দুজনই। সেই টুর্নামেন্টেই ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৬–১ গোলের জয়ে হুয়ান মারভেৎসির ৫ গোল। এক বছর পর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১২-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচেই ৫ গোল আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হোসে মরেনোর।

আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ৫ গোলের কীর্তি মাত্র তৃতীয়বার। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, জাতীয় দলের হয়ে মেসির আগে ৫ গোল করার ঘটনা আছে আরও ৬৩টি। একজন ফুটবলারের স্কোরিং দক্ষতার সর্বোচ্চ নিদর্শনও এই ৫ গোল নয়। রেকর্ডটা অবিশ্বাস্য—১৩ গোল! তাতে যাওয়ার আগে এক ম্যাচে ৫ গোল নিয়ে কথা সেরে ফেলা যাক।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাঁচ বা এর বেশি গোল করার কীর্তি দেখা গেছে ৮৯বার। ১০ গোল বা এর বেশি তিনবার!

কোপা আমেরিকা এই কীর্তি দেখেছে চারবার। যার দুটি তো বলাই হয়েছে। বাকি দুটির একটির নায়ক উরুগুয়ের এক্তর স্ক্যারোন, অন্যটির ব্রাজিলের এভারিস্তো। ১৯২৬ কোপা আমেরিকায় বলিভিয়ার বিপক্ষে উরুগুয়ের এক্তর স্ক্যারোনের চার গোল। ১৯৫৭ সালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের এভারিস্তোর। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দক্ষিণ আমেরিকার আর একজন ফুটবলারেরই এক ম্যাচে ৫ গোলের কীর্তি আছে। ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে চিলির ইভান জামোরানোর।

আরও পড়ুন

ইউরোপে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৫ গোলের ঘটনা সে তুলনায় অনেক। নির্দিষ্ট করে বললে সংখ্যাটা ৬। অস্ট্রিয়ার হান্স ক্র্যাঙ্কি তো এক ম্যাচে ৬ গোলও করেছেন। ১৯৭৭ সালে মাল্টার বিপক্ষে দলের ৯ গোলের ৬টিই ছিল তাঁর। ইউরোর বাছাইপর্বের ম্যাচে ৫ গোল করেছেন চারজন। এর দুজন নেদারল্যান্ডসের। একজনের নামটা খুব পরিচিত, মার্কো ফন বাস্তেন। বাস্তেনের ৫ গোলের কীর্তিও মাল্টার বিপক্ষেই, ১৯৯০ সালে।

মার্কো ফন বাস্তেন
ফাইল ছবি

সব মিলিয়ে যে ৬৪ বার কোনো ফুটবলারকে ম্যাচে পাঁচ গোল করতে দেখা গেছে, এর ২৭টি প্রীতি ম্যাচে। বাকিগুলো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। বিশ্বকাপও একবার সাক্ষী হয়েছে এই কীর্তির। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের বিপক্ষে রাশিয়ার ৬–১ গোলের জয়ে একাই ৫ গোল করেছিলেন ওলেগ সালেঙ্কো। তাঁর আগে বিশ্বকাপে ছয়জন এক ম্যাচে ৪ গোল করেছেন, তবে ৫ গোলের কীর্তিতে সালেঙ্কোই এক এবং অদ্বিতীয়।

৫ গোলের গল্প অনেক হলো। এক ম্যাচে এর চেয়ে বেশি গোল করেছেন কারা? এই তালিকাও যথেষ্ট লম্বা—যেখানে ২৫টি নাম। ৬ গোল দেখা গেছে ১৬বার। একটির কথা তো আগেই বলা হয়েছে, ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। আরেকটি ২০১৭ সালে এশিয়া কাপ বাছাইপর্বে ভুটানের বিপক্ষে ওমানের আবদুল আজিজ আল মুকবালির। তিনটি হয়েছে অলিম্পিকে। বাকি ১১টি প্রীতি ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মালদ্বীপের আলী আশফাকের ঘটনাটি তো মাত্র ৯ বছর পুরোনো।

আরও পড়ুন

আধডজন গোল দিয়েও অনেকের সাধ মেটে না। জর্জ সারোসি এমনই একজন। ১৯৩৭ সালে চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে হাঙ্গেরির এই স্ট্রাইকার সাত গোল করেছিলেন। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ৮-৩ স্কোরে। ১৯৯৩ সালে উত্তর ও মধ্য আমেরিকার মহাদেশীয় অঞ্চলের টুর্নামেন্ট গোল্ডকাপে মার্তিনিকের বিপক্ষে ৯-০ গোলে জিতেছিল মেক্সিকো। লুইস আলভেস একাই করেছিলেন ৭ গোল।

২০০৭ সালে সিঙ্গাপুরের নুর আলম শাহিনও লাওসকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে ‘লাকি সেভেনে’র দেখা পেয়েছিলেন। ম্যাচের স্কোর ছিল ১১-০। তবে দুঃস্বপ্নের কথা বললে গুয়ামের ধারেকাছে কেউ থাকবে না। ২০০৫ সালে চার দিনের ব্যবধানে হংকং ও উত্তর কোরিয়ার কাছে যথাক্রমে ১৫ ও ২১ গোল হজম করেছিল দলটি। হংকংয়ের চান সিউ হি এবং উত্তর কোরিয়ার কিম কোয়াং-হিয়োক করেছিলেন ৭টি করে গোল।

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার দাভিদ দ্রিলিচ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০ গোল করেছেন। তার ৪০ ভাগই এক ম্যাচে। ২০০১ সালে আমেরিকান সামোয়ার বিপক্ষে রেকর্ড ৩১-০ গোলে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সে ম্যাচে ৮ গোল করেছিলেন দ্রিলিচ।

তারপরও সেই ম্যাচের কথা উঠলে দ্রিলিচ আড়ালে পড়ে যান। কারণ, ওই ম্যাচেই যে অস্ট্রেলিয়ারই আর্চি থম্পসন করেছিলেন ১৩ গোল! ক্যারিয়ারের বাকি ৫৩ ম্যাচে ১৫ গোল করা থম্পসনের সেদিনই মূল একাদশে অভিষেক হয়েছিল!

আরও পড়ুন
দাভিদ দ্রিলিচ
ছবি: টুইটার

দুই অস্ট্রেলিয়ানের মধ্যে আরও দুজন আছেন। ঘটনাগুলো এত আগের যে মনে রাখা একটু কঠিন। ১৯০৮ অলিম্পিকে প্রথম রাউন্ডে ফ্রান্সের বি দলকে ৯-০ গোলে হারিয়েছিল ডেনমার্ক। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের মূল দলকে পেয়েছিল ডেনমার্ক। ফলাফল আরও তৃপ্তিদায়ক! ১৭-১ গোলে জিতেছিল ডেনমার্ক! এর ১০টিই করেছিলেন সফুস নিয়েলসন। ক্যারিয়ারে আর মাত্র ৬ গোল তাঁর। স্তব্ধ ফ্রান্স ব্রোঞ্জ জেতার ম্যাচে আর খেলতেই নামেনি।

চার বছর পর ফ্রান্সের ভাগ্য বরণ করেছিল রাশিয়া। অলিম্পিকের প্রথম দুই রাউন্ডে বাদপড়া দলগুলো আরেকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল। সে টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডে রাশিয়াকে ১৬-০ গোলে হারিয়েছিল জার্মানি! জার্মানির গট্রিড ফাচ একা করেছিলেন ১০ গোল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ফাচ এর বাইরে আর মাত্র ৩ গোল করেছিলেন।

আরও পড়ুন