৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আব্রামোভিচ-যুক্তরাজ্য সমঝোতা, খুলছে চেলসি বিক্রির দুয়ার
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচ পুতিনের ‘কাছের লোক’ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার তাঁর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে এর আগেই নিজের সন্তানের মতো প্রিয় ক্লাবটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আব্রামোভিচ, কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর চেলসি বিক্রি করার সেই প্রক্রিয়াও বন্ধ হওয়ার কথা ছিল।
ছিল বলতে হচ্ছে, কারণ ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই আব্রামোভিচ-যুক্তরাজ্য নাটকে নতুন মোচড়। ‘মেইল অনলাইন’ জানিয়েছে, চেলসিকে বিক্রি করার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছেন আব্রামোভিচ ও যুক্তরাজ্য সরকার।
রাশিয়ান তেল–গ্যাস ব্যবসায়ী আব্রামোভিচের পরামর্শক দলের সঙ্গে কাল এই চুক্তির বিষয়ে দেনদরবার শুরু করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট। বিক্রির প্রক্রিয়া দ্রুত সেরে ফেলতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার।
ফুটবল–সম্পর্কীয় সব কর্মকাণ্ড আপাতত একটি লাইসেন্সের মাধ্যমে সারছে চেলসি। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বিক্রির প্রক্রিয়া থামিয়ে রাখা হয়। চেলসি এই মৌসুম শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, চেলসিকে যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে দেওয়াই সমর্থক ও ক্লাবটির জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করছে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে সেখানে একটা শর্ত রেখেছে তারা। চেলসির কাছ থেকে ঋণ বাবদ যে ১৫০ কোটি পাউন্ড পাওনা আব্রামোভিচের, সেটি তো তাঁকে মওকুফ করতেই হবে, পাশাপাশি চেলসি বিক্রি থেকেও কোনো লাভ দাবি করতে পারবেন না তিনি।
দৃশ্যত সেটি মেনে নিয়েছেন আব্রামোভিচ। সপ্তাহখানেক আগে চেলসি বিক্রির সিদ্ধান্তের কথা জানানোর সময়ই অবশ্য আব্রামোভিচ জানিয়ে রেখেছিলেন, তিনি চেলসির কাছ থেকে ১৫০ কোটি পাউন্ড পাওনা মওকুফ করে দেবেন। এখন বিক্রি থেকে পাওয়া আয়ও যে ছাড় দিচ্ছেন, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
কারণ, যুক্তরাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পর আব্রামোভিচ চেলসি বিক্রির দায়িত্বে থাকা ব্যাংক রেইনি গ্রুপকে আবার বিক্রির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, একজন আদর্শ ক্রেতা খুঁজে বের করে ক্লাবটি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া শেষ করতে। যুক্তরাজ্য সরকার আব্রামোভিচের সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেওয়ার পর চেলসি বিক্রির প্রক্রিয়া থামিয়ে রেখেছিল রেইনি গ্রুপ।
আগ্রহী ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়ও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আব্রামোভিচের সম্পদ জব্দ করার সময় মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখন বাড়িয়ে আগামী সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত করা হয়েছে। আব্রামোভিচ চেলসি দ্রুত বিক্রি করতে চান।
এদিকে রেইনি গ্রুপের আশা, বিষয়টি আরও বেশিসংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। তবে টেলিগ্রাফ খারাপের ইঙ্গিতও দিয়েছে। আব্রামোভিচ যদি চেলসি বিক্রি করতে না পারেন এবং ক্লাবটি যে ছাড়পত্র নিয়ে খেলছে, সেখানে নিয়ম–নীতি আরেকটু শিথিল করা না হয়, তাহলে ‘কেয়ামত’ নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে টেলিগ্রাফ।
ব্রিটেনের ধনকুবের নিক ক্যান্ডি চেলসি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আগেই। ৪৯ বছর বয়সী এই প্রপার্টি ব্যবসায়ী চেলসির ভক্ত। রোববার প্রিমিয়ার লিগে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ম্যাচটি তিনি মাঠে থেকেই দেখবেন। চেলসিকে কিনতে পারলে পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে ভক্তদের রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সাহায্যও নেওয়া হবে।
মেইল অনলাইনকে ক্যান্ডির মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা ঘোষণাটি (বিক্রির) এখনো পর্যালোচনা করছি। কেনার প্রস্তাব পাঠাতে আমরা এখনো আগ্রহী। চেলসি–সমর্থকদের জন্য সময়টা অনিশ্চয়তার। আমরা মনে করি, ফুটবল ক্লাবটির মালিক কেউ নয়, ভক্ত ও সমাজের তরফ থেকে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে হয়।’
গত বছর ১৪৫ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক ক্ষতি হওয়ার পরও চেলসিকে লাভের মুখ দেখানো সম্ভব বলে মনে করেন ক্যান্ডি। বিশ্বব্যাপী চেলসির ব্র্যান্ডমূল্য আরও বাড়ানো, ব্যবসার নতুন পরিকল্পনা করে বাজার ধরা এবং স্টামফোর্ড ব্রিজের বহুমুখী ব্যবহারে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পথ দেখছেন তিনি।
নিক ক্যান্ডি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী টড বোয়েলি ও হ্যানসজর্গ ওয়েস চেলসিকে কিনতে আগ্রহী। আমেরিকান ফুটবলের (এনএফএল) দল শিকাগোর ক্লাবের মালিক টম রিকেটস এবং নিউইয়র্ক জেটের মালিক উডি জনসনও চেলসি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার আব্রামোভিচের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এরপর থেকে চেলসির প্রশাসনিক কার্যক্রম টালমাটাল হয়ে পড়েছে। ক্লাবের বিপণন ও টিকিটের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। কর্মীদের ছাঁটাই হওয়াও অবশ্যসম্ভাব্য।
মেইল অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বার্কলেস সাময়িকভাবে চেলসির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। চেলসি যে লাইসেন্স নিয়ে ফুটবল–সম্পর্কিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি তারা মূল্যায়ন করে দেখতে চায়।