২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

৪৬ বছর পর নেমে গেল ব্রাদার্স

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের মুখোমুখি হওয়ার আগে ব্রাদার্স ইউনিয়ন দলছবি: প্রথম আলো

রেফারি মিজানুর রহমান শেষ বাঁশি বাজাতেই হতাশায় ভেঙে পড়লেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের ফুটবলাররা। ডাগআউটে ব্রাদার্সের ম্যানেজার আমের খানকেও দেখা গেল বিষণ্ন চেহারায়। এই প্রথম বাংলাদেশের ফুটবলের শীর্ষ স্তর থেকে অবনমনের লজ্জা পেল গোপীবাগের দলটি।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ৪-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাদার্সকে। এই হারে ৪৬ বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেল ব্রাদার্স। মুক্তিযোদ্ধার হয়ে ১টি করে গোল করেছেন ইব্রাহিম ডিকো, কামারা ইউনুসা, শাকিল কিশোর ও ইউসুকে কাতো।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবার অবনমিত হবে দুটি দল। গতকাল অবনমন নিশ্চিত হয়েছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের। আজ মুক্তিযোদ্ধার কাছে হেরে তিন ম্যাচ বাকি থাকতেই ব্রাদার্সেরও অবনমন নিশ্চিত হয়ে গেল। আগামী মৌসুমে আরামবাগ ও ব্রাদার্স খেলবে দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপে।

১৯৭৪ সালে ব্রাদার্স দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এরপর থেকে এ পর্যন্ত টানা ৪৬ বছর দেশের ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছে ব্রাদার্স। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবনমিতই হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী কমলা জার্সিধারীরা।

গোলের আনন্দ উদযাপন মুক্তিযোদ্ধার। ব্রাদার্স দাঁড়াতেই পারেনি
ছবি: প্রথম আলো

এমনিতেই কয়েক মৌসুম ধরে ব্রাদার্স মোটেও ভালো মানের দল গড়ে না। তারপরও কোনো রকমে প্রিমিয়ারে টিকে ছিল বছরের পর বছর। কিন্তু এবার তা-ও হলো না। অথচ এই ক্লাবের তিনজন কর্মকর্তা—মহিউদ্দিন আহমেদ, আমের খান ও মহিদুর রহমান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন। মহিউদ্দিন বাফুফের সহসভাপতি, বাকি দুজন সদস্য।

নির্বাচনের মাঠে তাঁরা নিজেদের চেয়ার ধরে রাখার জন্য যতখানি সচেষ্ট ছিলেন, এর সামান্য চেষ্টাও যদি ফুটবল দল গড়ার পেছনে থাকত, তাহলে হয়তো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির আজ এমন দুর্দশা হতো না! অথচ এই ক্লাব থেকেই একসময় উঠে এসেছেন জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড় হাসানুজ্জামান বাবলু, ওয়াসিম ইকবাল, মাহমুদুল হক লিটনের মতো ফুটবলার।

ব্রাদার্স এবার লিগে যেমন খেলেছে, তাতে অবনমন এড়াতে অবিশ্বাস্য কোনো গল্পই লিখতে হতো। লিগে এখন পর্যন্ত ২১ ম্যাচের মাত্র ১টিতে জিতেছে ব্রাদার্স, ড্র ৩টি, হার ১৬টি। আজকের ম্যাচের পর ১৩ দলের লিগে ১১তম মুক্তিযোদ্ধার পয়েন্ট হলো ২১ ম্যাচে ১৮। পয়েন্ট তালিকায় ১২তম ব্রাদার্সের পয়েন্ট ২১ ম্যাচে ৬! বাকি তিন ম্যাচে জিতলেও ব্রাদার্সের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাকে ছোঁয়া সম্ভব হবে না।

কাদাভরা মাঠে আজ অবশ্য দুই দলের কেউই স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারেনি। তারপরও ম্যাচের ৪ মিনিটে জটলা থেকে করা ইব্রাহিম ডিকোর গোলে এগিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ডিফেন্ডার আলমগীর মোল্লার ক্রস ব্রাদার্স গোলকিপার তিতুমীর চৌধুরী প্রথম চেষ্টায় ফিরিয়ে দেন, কিন্তু ওই ফিরতি বলটিই গিয়ে পড়ে ডিকোর সামনে। দুর্দান্ত এক শটে ডিকো গোল করেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভঙ্গিমায় লাফিয়ে উঠে উদ্‌যাপন করেন।

হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ছেন ব্রাদার্সের দুই খেলোয়াড়
ছবি: প্রথম আলো

কাদা মাঠে আসলে এভাবে গোল খাওয়া ছাড়া কিছু করারও ছিল না তিতুমীরের। ব্রাদার্স যেখানে রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আরও বেশি আক্রমণ বাড়িয়েছে। ২১ মিনিটে যে স্কোরলাইন ২-০ হয়ে গেল, সে তো মুক্তিযোদ্ধার টানা আক্রমণেরই ফল! কর্নার থেকে সাজন মিয়ার উড়ে আসা বলে হেডে কামারা ইউনুসা করলেন ম্যাচের দ্বিতীয় গোল।

দ্বিতীয়ার্ধে মুক্তিযোদ্ধার আক্রমণের ধার আরও বেড়েছে। ম্যাচের ৫০ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢোকেন শাকিল কিশোর। এরপর তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে দুর্দান্ত এক শটে স্কোর ৩-০ করেন।

আক্রমণের ধার বাড়াতে ৭৪ মিনিটে দুজন ফুটবলারকে বদল করেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন কোচ রেজা পারকাস। ডিফেন্ডার অরূপ বৈদ্যর পরিবর্তে মাঠে নামেন মিডফিল্ডার জামাল হোসেন। আর ডিফেন্ডার মোকাররম হোসেনের বদলে মাঠে নামেন মিডফিল্ডার ছমির উল্লাহ। কিন্তু এই দুজনকে নামিয়েও ভাগ্য বদল হয়নি ব্রাদার্সের। বরং উল্টো আরও একটা গোল খেয়েছে ৭৮ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একাই বক্সে ঢোকেন কাতো। এরপর দুর্দান্ত এক প্লেসিং শটে ব্রাদার্স গোলকিপার তিতুমীর চৌধুরীকে বোকা বানিয়েছেন!

ম্যাচের ৮৯ মিনিটে অন্তত একটা সান্ত্বনার গোল পেতে পারত ব্রাদার্স। কিন্তু ফাঁকা পোস্ট পেয়েও মাগালান উগুচুকু মারলেন বাইরে!

১৯৮৩-৮৯ পর্যন্ত ব্রাদার্সের জার্সিতে খেলেছেন মাহমুদুল হক লিটন। ব্রাদার্সের অবনমনের খবরে হতাশ জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড, ‘ব্রাদার্সের রেলিগেটেড (অবনমিত) হয়ে যাওয়ার খবরটা আমি শুনেছি। খুবই খারাপ লাগছে আমার। এই ক্লাব থেকেই সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছি। এই ক্লাবের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। ক্লাবের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তা আছেন, এই ব্যর্থতার দায়টা তাঁদের ওপরই বর্তায়। কেন এই ক্লাব ভালো দল গড়তে পারে না? প্রত্যাশা থাকবে, আবারও যেন ভালো মানের দল গড়ে প্রিমিয়ারে ফিরে আসে তারা।’