৩২২ দিন পর ফেরা গোলে রাঙালেন বার্সার নতুন ‘১০’
কাকতালীয়? বলতে পারেন।
বিধিলিপি? তা তো সবই!
কাব্যিক? হয়তো সেটিই সবচেয়ে ভালো যায়!
লিওনেল মেসি চলে যাওয়ার পর অনেক আশা নিয়ে বার্সেলোনার দশ নম্বর জার্সিটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। জার্সিটার অধিকার যখন পেয়েছিলেন, তখনো চোটের পুনর্বাসনে মাঠের বাইরে ছিলেন। চোট কাটিয়ে আজই প্রথম মাঠে নেমেছেন। ৩২২ দিন পর তাঁর মাঠে নামা।
উপলক্ষটা রাঙাতে আনসু ফাতি সময় নিলেন কতক্ষণ? জার্সি নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে ঠিক ১০ মিনিটই! ৮১ মিনিটে বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন, ৯১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে গোল বার্সার নতুন ১০ নম্বর জার্সিধারীর। নিজেদের মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তে আজ লেভান্তের বিপক্ষে ম্যাচটাতে দারুণ ফুটবল উপহার দেওয়া বার্সা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে ৩-০ গোলে।
আগের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় বার্সার কোচ রোনাল্ড কোমান আজ ডাগআউটে ছিলেন না। সে জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন বার্সার সহকারী কোচ আলফ্রেড শ্রডার। কিন্তু এই মৌসুমে বার্সা সম্ভবত সবচেয়ে দারুণ পারফরম্যান্স আজ উপহার দিয়েছে কোমানকে ছাড়াই! ১৪ মিনিটের মধ্যেই দুই ডাচ ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাই ও লুক ডি ইয়ংয়ের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সা। মেম্ফিস বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট না করলে হ্যাটট্রিকই পেয়ে যেতে পারতেন।
গোলের হিসেব ছাড়াও বার্সার তরুণদের পারফরম্যান্স, বিশেষ করে মাঝমাঠে সের্হিও বুসকেতসের সঙ্গী হয়ে একাদশে সুযোগ পাওয়া দুই তরুণ নিকো গঞ্জালেস ও গাভির খেলা কাতালান ক্লাবটির সমর্থকদের নতুন করে আশা দেখাবে। মাঝমাঠ আর আক্রমণভাগের মাঝে প্লেমেকারের ভূমিকায় ফিলিপ কুতিনিও-ও খারাপ খেলেননি। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় আনসু ফাতিই।
তাঁকে ঘিরে কীভাবে বার্সা সমর্থকেরা নতুন আশা বুনছে, তার একটা প্রমাণ দেখাচ্ছিলেন ম্যাচের ধারাভাষ্য দিতে থাকা লা লিগা বিশেষজ্ঞ গিয়েম বালাগ। দ্বিতীয়ার্ধে তখন টাচলাইন ধরে গা গরম করছিলেন। বোঝা যাচ্ছিল, একটু পর বার্সেলোনা কোচ মাঠে নামাবেন তাঁকে। বালাগ তখন বার্সা সমর্থকদের অনুভূতির পালাবদলের চিত্রটা তুলে ধরলেন, কীভাবে দ্রুতই মেসি থেকে ফাতিতে ভরসা খুঁজে নিয়েছেন বার্সা সমর্থকেরা।
বালাগ বলছিলেন, মেসি যেদিন কান্নাভেজা সংবাদ সম্মেলনে বার্সা থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেদিন রাতেই হোয়ান গাম্পার ট্রফির ম্যাচ ছিল বার্সার। ম্যাচের দশ মিনিটে সেদিন 'মেসি' ‘মেসি’ রব তুলেছিলেন স্টেডিয়ামে থাকা বার্সা সমর্থকেরা। তার দিন দুয়েক পরই মেসির পিএসজিতে যাওয়া নিশ্চিত হলো, বার্সার এর পরের ম্যাচের দশম মিনিটে এবার বার্সা সমর্থকদের কণ্ঠে ছিল পিএসজির শাপশাপান্ত।
সে-ই শেষ! মাঝে গত কিছুদিনে দশম মিনিটে আর নতুন করে কিছু শোনা গেল না বার্সার সমর্থকদের কণ্ঠে। আজ আবার ফাতিকে বেঞ্চে রেখে বার্সা মাঠে নামতেই সমর্থকদের কণ্ঠ জোর পেল। এবার ‘মেসি’ ‘মেসি’ নয়, কণ্ঠে ‘ফাতি’ ‘ফাতি’ সুর!
সমর্থকদের প্রত্যাশা কী দারুণভাবেই না পূরণ করলেন ফাতি! ৮১ মিনিটে মাঠে নামার পর থেকেই গতি আর পায়ের ঝলকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, চোট তাঁর আত্মবিশ্বাসে চির ধরাতে পারেনি। আর আত্মবিশ্বাস যে আসলে কতটা টইটম্বুর, সেটা বোঝা গেল ৯১ মিনিটে।
তাঁর উদ্দেশে ডানদিক থেকে আসা পাসটা মাঝমাঠের একটু ওপরে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার প্রায় দখলে নিয়েই নিয়েছিলেন। কিন্তু ফাতি সেখানে প্রথমে লড়াই করলেন, ভাগ্যও সঙ্গী হলো। বল চলে এল ফাতির পায়ে। এরপর আর কী! লেভান্তের গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ফাতির ছুটতে শুরু করা! সামনে ডিফেন্ডার এলেন, পায়ের নাচনে তাঁকে পাশ কাটালেন ফাতি। এরপর আবার পায়ের ঝলক দেখিয়েই বিদ্যুৎগতির শট! বল যখন জালে জড়াল, লেভান্তে গোলকিপারের কিছু করারই ছিল না।
ফাতির উপলক্ষ রাঙানোর রাতে বার্সা আজ শুরু থেকেই দারুণ খেলেছে। বারবার নিজেদের মধ্যে জায়গা অদল-বদল করা, ত্রিভুজের আকারে ছোট ছোট পাসে প্রতিপক্ষকে হতবুদ্ধি করা...বার্সার পুরোনো দিনের ঝলক কিছুটা ছিল। নজর কেড়েছে বার্সার প্রেসিংও, লেভান্তের খেলোয়াড়দের পায়ে বল গেলেই সেটির দখলে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারুণ্যে ঠাসা বার্সা।
সেটির ফলই হয়তো, ৬ মিনিটে প্রতিপক্ষ বক্সে বল নিয়ে মেম্ফিস ঢুকে পড়লেন। তাঁকে লেভান্তে ডিফেন্ডার বাধা দিতেই পেনাল্টি, তা থেকে বল জালে জড়াতে ভুল হয়নি মেম্ফিসের। ৮ মিনিট পর আবার গোল। লেফটব্যাকে খেলা সের্হিনিও দেস্তের দারুণ থ্রু গেল বক্সে, সেটি ধরে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করলেন এই মৌসুমেই বার্সায় যাওয়া লুক ডি ইয়ং।