হুল ফোটালেন রোনালদো নিজেই, হলো তাঁর ১০০
রেকর্ডটা হয়তো আগের ম্যাচেই হয়ে যেত। সেদিন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে খেলতে দেয়নি মৌমাছির কামড়। পায়ের আঙুলে সংক্রমণের কারণে খেলতে পারেননি বলে প্রথমে জানা গিয়েছিল, পরে শোনা যায়, রোনালদোকে মৌমাছি কামড়েছিল।
কামড়ের কী বিষ, সেটি রোনালদো তখন টের পেয়েছিলেন। সুইডেন বুঝল সেটির ঝাঁঝ। সোলনাতে কাল সুইডেনের বিপক্ষে হুল ফোটালেন রোনালদো নিজেই। চোখজুড়ানো দুই গোল করলেন, উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচটা পর্তুগাল জিতল ২-০ গোলে। আর পর্তুগালের জার্সিতে ১৬৫তম ম্যাচে এসে রোনালদোর হলো অনন্য অর্জন। পর্তুগালের জার্সিতে ১০০ গোল করতে তাঁর আর একটি গোল দরকার ছিল। দুই গোলই করে ফেললেন ৩৫ বছর বয়সী পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। ফুটবল ইতিহাস দ্বিতীয়বারের মতো দেখল জাতীয় দলের জার্সিতে কোনো খেলোয়াড়ের শত গোল।
২০০৩ সালে ১৮ বছর বয়সে অভিষেক, প্রথম গোলটা পেয়েছিলেন ২০০৪ ইউরোতে গ্রিসের বিপক্ষে। অনেক শিরোপা, শত শত গোল আর ব্যক্তিগত অর্জনে উজ্জ্বল পথচলায় রোনালদোর জাতীয় দলে শততম গোলটিও চলে এল। যে গৌরব ফুটবল ইতিহাসে দুর্লভ।
শুধু ইরানের আলী দাইয়ি সামনে আছেন বলে রোনালদোকে একাই এক শ বলা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা যে দাইয়ি নিজের করে রেখেছেন এখন পর্যন্ত। তাঁর গোল ১০৯টি। অবশ্য রোনালদো তাঁকে যে পেরিয়ে যাবেন, তা নিয়ে সংশয় কারও আছে বলে মনে হয় না। তা পুরো বিশ্বে না হলেও ইউরোপে যে রোনালদো একাই ১০০ তা বলার তো অপেক্ষা রাখে না। ইউরোপিয়ান দলগুলোর মধ্যে এর আগে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড যে ছিল ফেরেঙ্ক পুসকাসের। হাঙ্গেরিয়ান কিংবদন্তি স্ট্রাইকারের গোল? ৮৪টি। সে বহু আগেই পেরিয়ে গিয়েছিলেন রোনালদো!
শততম গোলটা করার জন্য দারুণ এক স্টেডিয়ামই বেছে নিয়েছেন রোনালদো। ২০১৩ সালে এই মাঠেই করেছিলেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দারুণ হ্যাটট্রিকগুলোর একটি। ২০১৪ বিশ্বকাপের প্লে-অফের দ্বিতীয় লেগ ছিল সেটি। রোনালদোর পর্তুগাল বনাম ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন—ম্যাচটার বিজ্ঞাপনে আর কোনো বিশেষণের দরকার ছিল না। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে ১-০ গোলে পর্তুগাল জেতে। দ্বিতীয় লেগ দেখে রোনালদো-ইব্রার ‘গোল-বিনিময়।’ ইব্রা করেছিলেন দুই গোল, রোনালদো তাঁকে টেক্কা দিয়েছিলেন দারুণ হ্যাটট্রিকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোল করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে চার মিনিটের মধ্যে। যে হ্যাটট্রিকে পর্তুগালকে নিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপে!
মাইলফলক গড়ার মুহূর্তটা কাল রোনালদো রাঙিয়েছেনও কী দারুণ ঢংয়ে! বিরতির বাঁশি তখন বাজার অপেক্ষায়। ৪৪ মিনিটে সুইডেনের গুস্তাভ সভেনসন লাল কার্ড দেখেন, সুইডেন বক্সের সামনে একটু বাঁ দিকে ফ্রি-কিক পায় পর্তুগাল। তারপর সেই চেনা দৃশ্য। বলটাকে নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দুই পা ফাঁকা রেখে ‘ট্রেডমার্ক’ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রোনালদো। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচটি ছোট ছোট পদক্ষেপ! শট! রোনালদো নাকি ফ্রি-কিকে গোল পান না, পেনাল্টি থেকেই নাকি বেশি গোল করেন—সব সমালোচনাকে কাঁচকলা দেখিয়ে বল জড়িয়ে গেল জালে। সুইডিশ গোলকিপার রবিন ওলসেনের লাফ-ঝাঁপই সার!
১০০তম গোলের উদ্যাপনটা ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁর আরও শত গোলের মতোই হলো। দৌড়ে মাঠের এক কোণে যাওয়া, লাফিয়ে এক পাক ঘুরে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পড়া! রোনালদোর ‘সিউউউ’ উদ্যাপন!
দশ জনের সুইডেন ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা কম ছিল, সুযোগও তেমন আসেনি। কিন্তু রোনালদোর যে থামার কোনো ইচ্ছে নেই! ৭২ মিনিটে আবার স্কোরশিটে পর্তুগিজ মহানায়কের নাম! ১০০-র চেয়ে ১০১তম গোলও কী কম সুন্দর নাকি! বক্সের বাইরে বল পেলেন, একটু জায়গা করে নিয়ে ২০ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত শট। আরেকবার ওলসেনের লাফঝাঁপই সার! তাঁকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে। পর্তুগাল ২: ০ সুইডেন।
ভুল হলো। রোনালদো ২: ০ সুইডেন। পর্তুগালের এই দলটা দারুণ প্রতিভাবান, নিজেদের ফুটবলে দারুণ পরিকল্পনার ফল ছয়-সাত বছর ধরেই পাচ্ছে পর্তুগাল। একের পর এক প্রতিভা উঠে আসছে। কিন্তু দিন শেষে পর্তুগাল মানে তো এখনো রোনালদোই!