হালাল খাবার খেয়ে বায়ার্নে থেকে গিয়েছিলেন রিবেরি
ভালো খাবারের প্রতি দুর্বলতা কার নেই! সে আপনি যেই হোন, ভালো খাবার দেখলে খেতে মন চায়। মন নরম হয়। আর সেই খাবারের স্বাদে ভুলে অনেকে নিজের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসেন।
বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করুন ফ্রাঙ্ক রিবেরিকে। এক বেলা সুস্বাদু খাবার খেয়েই তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ভুলে বায়ার্ন মিউনিখেই থেকে যেতে মনস্থির করেছিলেন।
মার্শেই থেকে ২০০৭ সালে বায়ার্নে যোগ দেন ফরাসি উইঙ্গার। ২০১০ সালে একবার তিনি বায়ার্ন ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন।
৮ কোটি ইউরো দাম নিয়ে ধরনা দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ–চেলসি। জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’–এর কাছে ২০১৬ সালে তিনি এ নিয়ে বলেছিলেন, ‘তারা (রিয়াল) ও চেলসি ৮ কোটি ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছিল। আমার এজেন্ট মাদ্রিদের সঙ্গে কথা বলছিল। তখন ভেবেছিলাম মাদ্রিদে গেলেই ভালো থাকব।’
২০০৯ সালে লুই ফন গাল বায়ার্নের কোচ হয়ে আসার বায়ার্নে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ফ্রান্সের সাবেক এ উইঙ্গারের। গাল তখন তাঁকে বায়ার্ন থেকে বের করে দেওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু নাটকীয়ভাবে ২০১০ সালেই বায়ার্নের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন রিবেরি।
সে ঘটনাই এক যুগ পর জার্মান সংবাদ সংস্থা ‘ডিপিএ’কে জানিয়েছেন বায়ার্নের সাবেক সভাপতি উলি হোয়েনেস। দলবদলের বাজারে তখন রিয়ালের সঙ্গে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছিলেন হোয়েনেস। তিনি জানান, রিবেরির মাদ্রিদ–স্বপ্নের ‘প্রতিষেধক’ হিসেবে কাজ করেছে এক বেলা খাবার, আর সেই ‘প্রতিষেধক’ প্রস্তুত করেছিলেন তাঁরই স্ত্রী। সে সময় রিবেরি এবং তাঁর স্ত্রী ওয়াহিবাকে নিজেদের বাসায় রাতের খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন হোয়েনেস ও তাঁর স্ত্রী সুশি।
বাকিটা শুনুন হোয়েনেসের মুখেই, ‘২০১০ সালে রিবেরির সঙ্গে বায়ার্নের সঙ্গে প্রায় চুকেবুকে গিয়েছিল। তার এজেন্ট তাকে রিয়াল মাদ্রিদে প্রায় বিক্রিই করে দিয়েছিল। আমরা সে সময় তাকে এবং তার স্ত্রী ওয়াহিবাকে একদিন রাতের খাবার খেতে বাসায় দাওয়াত দিই। সুশি তার স্ত্রীর (ওয়াহিবা) জন্য হালাল খাবার রান্না করেছিল। দারুণ এক সন্ধ্যা কাটানোর পর মাঝরাতের দিকে হঠাৎ ওয়াহিবা বলল “ফ্রাঙ্ক, আমরা মিউনিখেই থাকছি!’”
রিবেরির স্ত্রী ওয়াহিবা বেলহামি আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ফ্রেঞ্চ মুসলিম। তাঁর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ২০০২ সালে ধর্মান্তরিত হন রিবেরি।
রিয়ালের সঙ্গে তখন দলবদল নিয়ে বাজার বেশ গরম করেছিলেন হোয়েনেস। রিবেরির পেছনে ঘুরঘুর করায় ফিফায় রিয়ালের নামে নালিশ করার হুমকিও দিয়েছিলেন হোয়েনেস। পরে যদিও জানান, ‘রিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ভালোই আছে। আমি কখনোই ফিফায় নালিশ করতাম না।’
তবে জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ ও ইউরোজয়ী সাবেক এ ফরোয়ার্ড জানিয়েছেন, বাসায় তিনি মাঝেমধ্যেই খেলোয়াড়, এজেন্ট কিংবা স্টাফ সদস্যদের মধ্য থেকে কাউকে না কাউকে নিয়ে আসতেন। আসার আগে স্ত্রীকে ফোনে জানিয়ে দিতেন, তাঁর সঙ্গে একজন আসবেন, খাবার রান্না করতে হবে। সুশি হাসিমুখেই খাবার রান্না করতেন।
২০১৯ সালে রিবেরি বায়ার্ন ছাড়ার আগে হোয়েনেসের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক জার্মান ফুটবলে সবাই জানতেন। ২০১৮–১৯ মৌসুমের শেষ দিনে রিবেরির গোলেই বুন্দেসলিগা শিরোপা জয় নিশ্চিত করে বায়ার্ন। জার্মান ক্লাবটির হয়ে সেটি ছিল তাঁর শেষ ম্যাচ। তা দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন হোয়েনেস।
বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে রিবেরি জানান, বায়ার্নে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল তাঁর জীবনে অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত, ‘পরে যা ঘটেছে তা কল্পনাও করিনি। বায়ার্নে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। এ জন্য উলি হোয়েনেসকে ধন্যবাদ।’
৩৮ বছর বয়সী রিবেরি অবশ্য এখনো পেশাদার ফুটবলে ইতি টানেননি। দুই মৌসুম ফিওরেন্তিনায় কাটিয়ে এখন সিরি ‘আ’র দল সালেরনিতানায় খেলছেন ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার।