‘হার্ট অ্যাটাক’ থেকে ফেরা এরিকসেনকে দেখে আনন্দের পাশাপাশি ভয়ও
যদি আবার কিছু হয়ে যায়!
ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনকে ঘিরে এই ভয় কাটতে সম্ভবত আরও সময় লাগবে যে কারোরই। ইউরোতে খেলতে নেমে হার্ট অ্যাটাকের শিকার ডেনিশ প্লেমেকার বুকে কৃত্রিম যন্ত্র বেঁধে আবার ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরেই ফিরেছেন, গতকাল আবার খেলেছেন ডেনমার্কের জার্সিতেও। কিন্তু এখনো তাঁকে মাঠে দৌড়াতে দেখলে যেকোনো সমর্থকেরই বুঝি আনন্দের পাশাপাশি শঙ্কাও হয়।
সমর্থকদের হয়, আর ডিফেন্ডারদের হবে না? তাঁরাও তো মানুষ! তাঁদেরই কারও ট্যাকলে আবার এরিকসেনের কিছু হয়ে গেলে! এই ভয় পাচ্ছেন জুভেন্টাসের ডাচ সেন্টারব্যাক ম্যাটাইস ডি লিখটও। আমস্টারডামে গতকাল প্রীতি ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে ৪-২ গোলে ডেনমার্কের হারের ম্যাচ দিয়ে ২৮৭ দিন পর আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছেন এরিকসেন, ম্যাচের পর ডি লিখট জানিয়েছেন তাঁর ভয়ের কথা।
গত জুনে ইউরোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধের শেষ দিকে মাঠে হঠাৎ লুটিয়ে পড়েন এরিকসেন। সৌভাগ্য, সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করা গেছে তাঁর। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামও মাঠে ছিল। প্রায় ১৫ মিনিট চিকিৎসার পর জ্ঞান ফেরে এরিকসেনের। হাসপাতালে নেওয়ার পর বুঝতে পারেন, হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে এরিকসেন সে অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ওই সময় পাঁচ মিনিট মৃতই ছিলেন তিনি!
সেই এরিকসেন মাস ছয়েকের মধ্যে ফুটবলে ফিরবেন, সেটিই কেউ আশা করেনি। অথচ এরিকসেন ফিরেছেন। ফিরেছেন একেবারে যেখানে থেমে গিয়েছিলেন, সেখানেই! মাঝে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিম যন্ত্র (আইসিডি) বসানো হয়েছে তাঁর বুকে, যেটি তাঁর হৃদ্যন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখবে। এই যন্ত্র নিয়ে ইতালিতে খেলার অনুমতি নেই বলে ইন্টার মিলান তাঁকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, গত জানুয়ারিতে এরিকসেন যোগ দেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ব্রেন্টফোর্ডে।
এরিকসেনকে ট্যাকল করা এখন আর সহজ কাজ নয়। ও যখন মাঠে নামছে, আমার লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল
গত মাসে ব্রেন্টফোর্ডের হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছেন, এরপর ডেনমার্কের দলেও ডাক এসে গেল। অবশ্য তাঁর ডাক পাওয়া তো আর ফর্ম কিংবা নিজের ফুটবল-দক্ষতা প্রমাণের ওপর নির্ভর করেনি, এরিকসেন স্বাভাবিকভাবে ফুটবল খেলতে পারছেন, তা নিশ্চিত হওয়াই যথেষ্ট ছিল।
নিশ্চিত হতেই গতকাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে আবার ডেনমার্কের জার্সিতে দেখা গেছে। প্রত্যাবর্তনটা কী দারুণভাবেই না রাঙিয়েছেন এরিকসেন! মাঠে নামার ২ মিনিটের মধ্যেই গোল করেছেন। অবশ্য তাঁর ফেরার ম্যাচটা জয়ে রাঙাতে পারেনি ডেনমার্ক, হেরে গেছে ৪-২ গোলে।
তবে একে তো প্রীতি ম্যাচ, তার ওপর এই ম্যাচ দিয়েই জুনের ওই দুঃস্বপ্নের পর ডেনমার্কের জার্সিতে প্রথম নেমেছেন এরিকসেন...এ ম্যাচে জয়-হার নিয়ে তাই কেউ ভাবেননি। যত ভাবনার কেন্দ্রে ম্যাচ শেষে এরিকসেনই। নেদারল্যান্ডসের ডিফেন্ডার ডি লিখটকেও এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলো। এরিকসেনকে ফিরতে দেখায় তাঁরা কতটা খুশি, সেটি জানাতে ভোলেননি ডি লিখট।
তবে জানিয়ে দিলেন ওই ভয়ের কথাও, ‘এরিকসেনকে ট্যাকল করা এখন আর সহজ কাজ নয়। ও যখন মাঠে নামছে, আমারও লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা খেলোয়াড়, কিন্তু আমরাও তো মানুষই। ওই মুহূর্তগুলোয় (এরিকসেন মাঠে নামার সময়) সব ভুলে আমাদের খেলা নিয়েই ভাবতে হয় বেশি, তবে আমরা সবাই-ই খুব খুশি যে এরিকসেন আবার এই পর্যায়ে ফিরেছে।’