হামজার ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর পেছনের গল্প
লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন লেস্টার সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হামজা চৌধুরী। এফএ কাপ জয়ের পর পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে যাওয়ার সময় হামজার সঙ্গে ছিলেন ফ্রান্সের ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানা। ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে ওয়েম্বলির এ ‘ভিক্টরি ল্যাপ’-এর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নৃশংস হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে হামজা আর ফোফানার এ ব্যাপার প্রশংসিত সর্বত্র। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম—সব জায়গায় চলছে তাঁদের প্রশংসা।
ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনাটা কী আগে থেকেই করে রেখেছিলেন তাঁরা। এর পেছনের গল্পটি কী! লেস্টার সিটির হয়ে অনেক দিন ধরে খেলা হামজা এ প্রথম স্বাদ পেলেন ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো শিরোপার। এফএ কাপ জয়ের এ আনন্দের মুহূর্তে প্রথম আলোকে হামজা শুনিয়েছেন ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর গল্পটা।
ফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন ১০ মিনিটের জন্য। আহামরি কিছু করার সুযোগই মেলেনি। কিন্তু ম্যাচ শেষে হামজাই আগ্রহের মধ্যমণি। মানবতাপ্রেমী মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন তিনি। অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য নিজের অবস্থান থেকে প্রতিবাদী হয়ে বার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলি দখলদারত্বকে—ফিলিস্তিনে তারা যা করছে, সেটি নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ। মানবিকতার অপমান। হামজার বক্তব্য খুবই পরিষ্কার, ‘আমি ফিলিস্তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমার দোয়া ও হৃদয় রয়েছে তাদের সঙ্গে।’
কীভাবে তাঁর মাথায় এল ম্যাচ শেষে ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানোর পরিকল্পনাটা—‘আমি খেলার শুরুতে গ্যালারিতে এক ব্যক্তির হাতে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা দেখি। তখনই আমার মাথায় পরিকল্পনা আসে খেলায় যদি আমরা জিতি, তাহলে সেটি ওড়াব। খেলা শেষে আমি স্টেডিয়ামের একজন নিরাপত্তারক্ষীকে দিয়ে সেই পতাকা আনিয়ে নিই।’
এ ঘটনায় আপ্লুত ফিলিস্তিনিরা। যুক্তরাজ্যে দায়িত্ব পালনকারী ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত এরই মধ্যে হামজাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন গোটা ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। সে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এফএ কাপ জয়ের ঐতিহাসিক মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার জন্য হামজা চৌধুরী ও ওয়েসলে ফোফানাকে ফিলিস্তিন সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের এ চিঠি ক্লাব হয়ে হামজার বাবা গোলাম মোর্শেদ চৌধুরীর কাছেও এসেছে। যিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে সে রাতে মাঠেও ছিলেন। সবকিছু দেখেছেন চোখের সামনে। পুরো বিষয়টিই তাঁর জন্য ছিল আনন্দ আর গর্বের উপলক্ষ। আবেগঘন একটা মুহূর্ত, ‘আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। ছেলে এফএ কাপ জিতেছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে! আমি তো কেঁদেই দিয়েছিলাম। কেঁদেছেন হামজার মাও। এর মধ্যে হঠাৎই দেখি ওর হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা। একজন মুসলমান হিসেবে একজন মানুষ হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ করা আমাকে আরও বেশি আনন্দ দিয়েছে। মুহূর্তটি ছিল আমাদের পরিবারের জন্য আনন্দ আর আবেগের। এ অনুভূতির কোনো তুলনা হয় না।’
হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে। তবে বাঙালি পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ থেকে কখনোই মানসিকভাবে দূরে থাকেননি।। দাদাবাড়ির সূত্রে বাংলাদেশে হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে তাঁর শিকড়। ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের সঙ্গে অনেকবারই এসেছেন বাংলাদেশে। সর্বশেষ এসেছিলেন প্রায় ছয় বছর আগে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য সব সময়ই ভালোবাসা জমা হামজার মনে, ‘আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষদের ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের সবার জন্য ভালোবাসা রইল।’