হরলান্ড কে? এক ম্যাচে ৬ গোল ম্যান সিটির হতে যাওয়া আর্জেন্টাইনের
আগামী মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে কোন খেলোয়াড়ের দিকে বেশি নজর থাকবে ইউরোপের? প্রশ্নটার উত্তরে যে কেউ একবাক্যে আর্লিং হরলান্ডের নামই যে বলবেন, সে সম্ভবত নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়।
সে জন্য ‘আইনস্টাইন’ হওয়ারও কোনো দরকার পড়ে না! এই মুহূর্তে কিলিয়ান এমবাপ্পের পাশাপাশি ইউরোপের ফুটবলে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল তরুণই হরলান্ড, তাঁকে পেতে ইউরোপের বড় সব ক্লাবই আগ্রহী ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬৫ কোটির বেশি টাকায় তাঁকে দলে টানার ঘোষণা কদিন আগে দিয়েছে ম্যান সিটি।
আগামী মৌসুমে সিটির জার্সিতে তাঁর গোলের বানে ভাসবে ইংল্যান্ড, ইউরোপ...এ আশায়ই দিন গুনছে সিটি। কিন্তু আর্জেন্টিনা থেকে আরেকজন বুঝি অনুচ্চারে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, হরলান্ডের চেয়ে তাঁর দিকেও কোনো অংশে কম মনোযোগ দেওয়া যাবে না!
কে? আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজ। তাঁকেও সিটি দলে টেনেছে আগেই, তিনিও হরলান্ডের মতো সিটিতে যোগ দেবেন জুলাইয়ে। কিন্তু মৌসুমের গোলের পর গোল করে যাওয়া আলভারেজ আজ অবিশ্বাস্য এক কাণ্ডই করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বসূচক টুর্নামেন্ট কোপা লিবার্তাদোরেসে এক ম্যাচে ৬ গোল করেছেন ২১ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
কোপা লিবার্তাদোরেসে গ্রুপ পর্বে আগের পাঁচ ম্যাচে কোনো গোল পাননি, করিয়েছেন মাত্র দুটি। আজ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আলিয়ান্সা লিমাকে পেয়ে একেবারে যেন ‘স্লুইসগেট’ খুলে গেল আলভারেজের! আগের পাঁচ ম্যাচের গোলখরার উসুলটাও আলিয়ান্সার ওপরই তুলেছেন!
বিরতির আগে তিন গোলে হ্যাটট্রিক হয়ে গেল, বিরতির পর করেছেন আরও তিন গোল। ম্যাচ শেষে তাই দুটি ম্যাচ বল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন আলভারেজ! তাঁর দল জিতেছে ৮-১ গোলে। রিভারপ্লেটের ১২১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কেউ এক ম্যাচে ছয় গোল করলেন!
রিভারপ্লেটের মনুমেন্তাল স্টেডিয়ামে আলভারেজের কীর্তির গল্প ইউরোপে ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। বিশেষ করে ম্যানচেস্টার সিটি তাঁকে আগেই কিনে রাখায় ইংল্যান্ডে তো আলভারেজকে নিয়ে বাড়তি আকর্ষণ আছেই। আজ ছয় গোলের পর তাই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, ম্যান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা কি নিজের কৌশলে হরলান্ড ও আলভারেজ দুজনকেই খেলাতে পারবেন?
হরলান্ডের বয়স ২১, তাঁর চেয়ে এক বছরের বড় হলেও আলভারেজকে নিয়ে মাতামাতি কম হওয়াই স্বাভাবিক। হরলান্ড যেখানে ইউরোপ মাতিয়ে চলেছেন দুই বছর ধরে, আলভারেজ আলো ছড়াচ্ছেন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটের জার্সিতে। একেবারে পাদপ্রদীপে আসার শুরু বছরখানেক ধরে।
২০১৮ সালে রিভারপ্লেটের জার্সিতে অভিষেক হলেও প্রথম তিন মৌসুমে আর্জেন্টাইন লিগে খেলার সুযোগই পেয়েছেন ২২ ম্যাচে, তাতে গোল করেছেন ৩টি। তবে গত মৌসুমে একেবারে গোলে ভাসিয়েছেন লিগের অন্য দলগুলোকে—৩৫ ম্যাচে করেছেন ২০ গোল।
সেটির পুরস্কার হিসেবে গত জুনে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন, এরই মধ্যে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৭ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তাঁর। মেসি, আগুয়েরো, দি মারিয়াদের সঙ্গে গত জুলাইয়ে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকাজয়ী দলেরও অংশ ছিলেন আলভারেজ। তখন থেকেই তাঁকে ঘিরে ইউরোপের ফুটবলে দলবদলের গুঞ্জনের কমতি ছিল না।
বার্সেলোনা তাঁকে পেতে আগ্রহী বলে শোনা গিয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, পিএসজি, ইন্টার মিলান, এসি মিলান...একেক সময় একেক দলকে ঘিরে গুঞ্জন এসেছে। কোনো গুঞ্জনে হয়তো বিশ্বাসের জোর বেশি ছিল, কোনোটিতে কম।
এর মধ্যে সিটি গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬০ কোটি টাকায় তাঁকে দলে টানে। চুক্তি সাড়ে পাঁচ বছরের, তবে এর মধ্যে আধা বছর—অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রিভারপ্লেটেই ধারে খেলবেন আলভারেজ, এমন শর্তেই দলবদল হয়েছে।
তবু নভেম্বরে কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপ বলে আলভারেজ নতুন দলে না গিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্তই ধারে ম্যান সিটিতে থেকে যাবেন কি না, এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে। কিন্তু আলভারেজের এমন ফর্মের পর সিটি জানিয়ে দিয়েছে, জুলাইয়েই তাঁকে দলে নিয়ে আসবে তারা।
এই মৌসুমেও আর্জেন্টাইন লিগে ১২ ম্যাচে ৮ গোল আলভারেজের। কোপা লিবার্তাদোরেসে গোল ছিল না, এক ম্যাচে ৬ গোলেই ‘খরা’ ঘুচিয়েছেন। তাতে রেকর্ডেও ভাগ বসানো হলো তাঁর। লিবার্তাদোরেসে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ৬ গোলের রেকর্ড সেই ১৯৮৫ সালের মার্চে গড়েছিলেন হুয়ান কার্লোস সানচেস। বলিভিয়ার ক্লাব ব্লুমিংয়ের জার্সিতে সানচেসের সেই রেকর্ডের পাশে নাম লিখিয়েছেন আলভারেজ।
এমন একজনকে আগামী মৌসুমে হরলান্ডের চেয়ে কম গুরুত্ব কীভাবে দেবেন গার্দিওলা?