স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখল জাপান
শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, জাপানের গ্রুপ–ভাগ্য তেমন শুভ নয়। বিশ্বকাপের প্রথম পর্যায়ের গ্রুপপর্বের খেলায় অন্য যে তিনটি দলের সঙ্গে জাপান পড়েছে, সেই বিভাজনে ফিফা র্যাঙ্কিং তালিকা অনুযায়ী জাপানের অবস্থান ছিল সবচেয়ে নিচে। অন্য তিন দলের কেউই সত্যিকার অর্থে প্রথম সারির দল হিসেবে গণ্য না হওয়ায় জাপানের ফুটবলপ্রেমীরা তাই এ রকম হিসাবগত অসুবিধার দিকে খুব বেশি মনোযোগ না দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন নিজের দলের খেলোয়াড়দের নৈপুণ্য দেখার ওপর।
তবে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে অনেকটা অপ্রত্যাশিত দ্বিতীয় এক বিড়ম্বনায় জাপানকে পড়তে হওয়ায় জাপানের ফুটবলপ্রেমীদের হতাশা মনে হয় আরও একটু বৃদ্ধি পায়। অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনা ছিল হঠাৎ করে জাতীয় দলের কোচকে বরখাস্ত করে তাঁর জায়গায় সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা আকিরা নিশিনোকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। এর বাইরে গ্রুপপর্বে শুরুতেই জাপানকে খেলতে হয় দক্ষিণ আমেরিকার শক্তিশালী দল কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে। ফলে প্রথম সেই খেলা নিয়ে জাপানিদের মধ্যে উৎসাহের ঘাটতি সহজেই লক্ষ করা গেছে। অনেকেই ভুলে যাননি চার বছর আগে ব্রাজিলে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ৪-১ গোলে পরাজিত হওয়ার কষ্টের স্মৃতি।
তবে প্রথম সেই খেলায় জাপান বলা যায় স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালিয়ে ছিনিয়ে এনেছে অসম্ভব এক বিজয়, যা জাপানের জাতীয় দলের পাশাপাশি দেশের নাগরিকদেরও করে তুলেছে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও নিজের সামর্থ্যের ওপর আস্থাশীল। তারপরও গ্রুপপর্বে অবশিষ্ট দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর শক্তি নিয়ে উপেক্ষা করার সুযোগ জাপানের সামনে ছিল না। প্রথম খেলায় কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের অপ্রত্যাশিত জয় ফুটবল নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে দেখা দেওয়া উদ্দীপনা আরও অনেক বেশি চাঙা করে দেয় এবং জাপানিরা অধীর আগ্রহে দলের পরবর্তী খেলার অপেক্ষায় থাকেন।
বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই তথাকথিত ফুটবল পণ্ডিতদের নানা রকম পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল যে এইচ গ্রুপ থেকে যে দুটি দল দ্বিতীয় পর্বে উন্নীত হবে, তারা হচ্ছে পোল্যান্ড ও কলম্বিয়া। ফলে ইংরেজিতে যাকে বলে ‘আন্ডার-ডগ’, সে রকম এক তকমা নিয়েই জাপানের জাতীয় দল রাশিয়ায় গিয়েছিল। পণ্ডিতদের কেউ কেউ এ রকমও বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনি যে জাপানকে হয়তো গ্রুপ পর্যায়ে কোনো পয়েন্ট ছাড়াই দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। সেই জাপান এখন গ্রুপপর্বের দুই খেলার পর আগের সেই হিসাব কেবল পাল্টেই দেয়নি, বরং গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় পর্বে উন্নীত হতে পারার সুযোগও জাতীয় দলের জন্য করে দিয়েছে। তবে এর সবটাই এখন দলের পরবর্তী পারদর্শিতা ছাড়াও অঙ্কের হিসাব–নিকাশের ওপর নির্ভর করলেও অবস্থানগত দিক থেকে হাওয়া কিন্তু এখন জাপানের অনুকূলে।
জাপান ও সেনেগাল—দুই দলের সংগ্রহেই এখন আছে দুই খেলায় চার পয়েন্ট করে। অন্যদিকে দুই খেলায় তিন পয়েন্ট নিয়ে কলম্বিয়া আছে দ্বিতীয় স্থানে। আর দুই খেলায় কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ না করতে পেরে ইতিমধ্যে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে পোল্যান্ড। গ্রুপপর্বের শেষ খেলায় সেনেগাল খেলবে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে এবং জাপান মাঠে নামবে পোল্যান্ডের বিপরীতে। আর এর মধ্যেই হয়তো নিহিত আছে জাপানের স্বপ্ন হাতের মুঠোয় ধরা পড়ার চাবিকাঠি।
কলম্বিয়া নিঃসন্দেহে খুবই শক্তিশালী দল। শেষ খেলায় দলকে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামতে হবে এ কারণে যে জিততে না পারলে গ্রুপপর্ব থেকেই দলটিকে ছিটকে পড়তে হবে। কলম্বিয়া সেই খেলায় ড্র করলেও দলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারা নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ এ কারণে নেই যে শেষ খেলায় পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাপান এক পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও গোলের ব্যবধানের হিসাবে তখন ভাগ্য নির্ধারিত হবে। সে রকম অবস্থায় কলম্বিয়া অবশ্যই চাইবে বিরাট ব্যবধানে সেনেগালকে পরাজিত করতে, যেটা হয়তো দলের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। অন্যদিকে খুব খারাপ এবং এই পর্যায়ে অনেকটা অপ্রত্যাশিত ফল হিসেবে পোল্যান্ডের কাছে জাপান পরাজিত হলেও বিশাল ব্যবধানের পরাজয় সেটা না হওয়ারই কথা। সে রকম অবস্থায় গোলের হিসাবে জাপান সেনেগালের চেয়ে এগিয়ে থাকবে এবং দ্বিতীয় পর্বে উন্নীত হবে। তবে জাপানের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এখন প্রতিযোগিতার শুরুর সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে শেষ খেলায় জয়ের জন্যই মরণপণ লড়াই জাপান করবে এবং জয়লাভ করতে পারলে হয়তো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে দল খেলবে। সেই প্রত্যাশা এখন জাপানের ফুটবলপ্রেমীদের।