স্পেন কোচের বিদায়ে মেসি-রোনালদো-নেইমারেরই লাভ হলো!
>বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে মাঠে নামার প্রায় ৫৬ ঘণ্টা আগে স্পেন কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হলেন লোপেতেগি। স্বাভাবিকভাবে এমন সময়ে কোচ বরখাস্ত হওয়ায় স্পেন দলের মধ্যে সৃষ্টি হবে অস্থিরতা। নতুন কোচের অধীনে খেলোয়াড়দের অভ্যস্ত হতেও তো সময়ের প্রয়োজন। সব মিলিয়ে লাভবান হতে যাচ্ছে স্পেনের প্রতিপক্ষরা
হোসে মরিনহো বিষয়টা কি আগে থেকেই জানতেন?
কোন বিষয়টা? স্পেন কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন হুলেন লোপেতেগি। না জেনে থাকলে অপরাজেয় রথে চড়ে বসা থাকা সত্ত্বেও স্পেনকে কেন নিজের ফেবারিটের তালিকায় রাখলেন না মরিনহো? স্পেশাল ওয়ানের এমন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার বিষয়টি না হয় পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত লোপেতেগির বরখাস্ত হওয়াতে লাভবান হতে পারে কারা, সে আলোচনায় আসা যাক।
রাত পোহালেই বিশ্বকাপ শুরু। একটু আনুষ্ঠানিকতা সাড়তে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এই যা। এক দিন পরেই পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে স্পেনের বিশ্বকাপ অভিযান। এই নিয়ে নিশ্চিত অনেক অঙ্ক কষে রেখেছিলেন স্পেন কোচ (পড়ুন সাবেক) লোপেতেগি। কিন্তু মাঠে নামার ৫৬ ঘণ্টা আগে সাবেক হয়ে যেতে হলো তাঁকে। স্বাভাবিকভাবে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে হুট করে কোচ বিদায় নেওয়াটা যে কোনো দলের জন্যই হুমকির বার্তা। ঠিক তেমনি প্রতিপক্ষ দলের জন্য মঙ্গলজনকও বটে। সে বিচারে লাভবান হতে যাচ্ছে স্পেনের গ্রুপে থাকা ও নকআউটপর্বের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ দলগুলো। তবে নকআউট পর্বে যে স্পেন খেলতই কিংবা কোচ বিদায়ে এখন আর পারবে না, এমন সিদ্ধান্তে যাওয়া এখনই ঠিক হবে না।
গ্রুপ ‘বি’তে স্পেনের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। নাম ও ভারের বিচারে পর্তুগালের সঙ্গেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের লড়াই হওয়ার কথা স্পেনের। ফলে লোপেতেগির বিদায়ে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে রোনালদোদের। পাঁচবারের ফিফা ব্যালন ডি’ অর বিজয়ীকে কীভাবে বোতলবন্দী করতে হবে, এই বিষয়ে নিশ্চিত পিকেদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা করে রেখেছিলেন লোপেতেগি। পুরো রক্ষণভাগটা কীভাবে জমাট হয়ে থাকবে, পাসিং জোনগুলো কীভাবে বন্ধ করতে হবে; বিশ্বকাপের আগে তা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল ট্যাকটিকস অনুশীলন।
কিন্তু আজ থেকে লোপেতেগি নেই। তাঁর স্থলে ফার্নান্দো হিয়েরো এসেছেন, তাঁর হাতে কোনো সময়ই নেই। নতুন কোচের সঙ্গে আগের কোচের কিছুটা হলেও পার্থক্য থাকবে ট্যাকটিকসে, এটাই তো স্বাভাবিক। আর এখানেই বাজিমাতের সুযোগ স্পেনের প্রতিপক্ষ দলগুলোর।
সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চললে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার কথা স্পেনের। মন গড়া কথা নয়। বড় পণ্ডিতেরা এই ভবিষ্যদ্বাণীই করেছেন। সে তালিকায় কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ মরিনহোও আছেন। লোপেতেগির বরখাস্ত হওয়ার অনেক আগেই স্পেশাল ওয়ান বলেছিলেন আর্জেন্টিনার সঙ্গে পারবে না স্পেন! তাই শুরুতেই বলা মরিনহো কি আগে থেকেই জানতেন, বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন লোপেতেগি!
নতুন কোচ নিয়ে স্পেন এখন শেষ আটে পা রাখতে পারবে কি না, এটাই এখন প্রশ্ন। আবার আর্জেন্টিনাও যে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে সেটাও নিশ্চিত নয়। তবে ফুটবল পণ্ডিতদের কথার ওপর ভর করে ধরেই নিতে হচ্ছে, সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও স্পেন। সে ক্ষেত্রে লোপেতেগির বিদায়ে তো লাভবান হতে যাচ্ছে মেসিরাও। আবার মেসি-বাধা পেরোলেও সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে স্পেনের। সে ক্ষেত্রে নেইমারও পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা।
২০১০ বিশ্বকাপে দুর্দান্ত প্রতাপ দেখিয়ে শিরোপা জয় করেছিল স্প্যানিশরা। কিন্তু ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। তাই এবার বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারের জন্য কোমর কষে নেমেছিল স্পেন। সে যাত্রায় লোপেতেগির হাত ধরে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিল লা রোজারা। তাঁর অধীনে ২০ ম্যাচের এক ম্যাচেও হারের মুখ দেখেনি স্পেন। ১৪ জয়, ড্র ৬ টিতে। ফলে রাশিয়ার ফুল হয়ে ফুটবে লাল জার্সিরা, এ আশাতেই বুক বেঁধেছিল স্প্যানিশরা।
লোপেতেগির বিদায়ে সবকিছুই যেন মিলিয়ে গেল হাওয়ায়। আর লাভবান হচ্ছে বিশ্বকাপ জয়ের ফেবারিটদের তালিকায় থাকা অন্য দলগুলো। শত্রু দুর্বল হয়ে পড়লে যা হয় আরকি!