কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
২৩ বছর পর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে স্কটিশরা। এর আগে দুবার ইউরো খেললেও কখনোই প্রথম রাউন্ডের গণ্ডি পেরোতে পারেনি তারা। এবার সে গেরো কাটাতে বদ্ধপরিকর স্কটল্যান্ড।
দল: স্কটল্যান্ড
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৪৪
দলে আছেন যাঁরা
গোলকিপার
ডেভিড মার্শাল (ডার্বি কাউন্টি), ক্রিগ গর্ডন (হার্ট অব মিডলোথিয়ান), জন ম্যাকলফলিন (রেঞ্জার্স)
সেন্টারব্যাক
গ্র্যান্ট হ্যানলি (নরউইচ সিটি), লিয়াম কুপার (লিডস ইউনাইটেড), ডেকলান গ্যালাঘার (মাদারওয়েল), জ্যাক হেন্ড্রি (সেল্টিক), স্কট ম্যাকেনা (নটিংহাম ফরেস্ট)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
স্টিফেন ও’ডনেল (মাদারওয়েল), নাথান প্যাটারসন (রাইটব্যাক)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
অ্যান্ডি রবার্টসন (লিভারপুল), কিয়েরান টিয়ের্নি (আর্সেনাল), গ্রেগ টেলর (সেল্টিক)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
স্কট ম্যাকটমিনে (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), জন ম্যাকগিন (অ্যাস্টন ভিলা), জন ফ্লেক (শেফিল্ড ইউনাইটেড), স্টুয়ার্ট আর্মস্ট্রং (সাউদাম্পটন), ক্যালাম ম্যাকগ্রেগর (সেল্টিক), বিলি গিলমোর (চেলসি), ডেভিড টার্নবুল (সেল্টিক)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
রায়ান ক্রিস্টি (সেল্টিক)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
রায়ান ফ্রেজার (নিউক্যাসল ইউনাইটেড), জেমস ফরেস্ট (সেল্টিক)
স্ট্রাইকার
চে অ্যাডামস (সাউদাম্পটন), লিনডন ডাইকস (কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স), কেভিন নিসবেট (হিবারনিয়ান)
কোচ
স্টিভ ক্লার্ক
অধিনায়ক
অ্যান্ডি রবার্টসন
ইউরোয় সেরা সাফল্য
প্রথম রাউন্ড (১৯৯২, ১৯৯৬)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
চেক প্রজাতন্ত্র (১৪ জুন)
ইংল্যান্ড (১৮ জুন)
ক্রোয়েশিয়া (২২ জুন)
শক্তি
দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা রক্ষণভাগের বাঁ দিক ও মাঝমাঠ। প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত খেলেন এমন অনেকেই দলটায় আছেন এবং প্রত্যেকের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন। আক্রমণ গড়ে দেওয়ার জন্য সাউদাম্পটনের আর্মস্ট্রং আর সেল্টিকের রায়ান ক্রিস্টি বেশ দক্ষ, ওদিকে দলের রক্ষণকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ ম্যাকটমিনে ও ম্যাকগ্রেগর ভালো করতে পারে। আদর্শ বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারের ভূমিকা নিতে পারেন শেফিল্ডের জন ফ্লেক আর অ্যাস্টন ভিলার জন ম্যাকগিন। চেলসির বিলি গিলমোর পারেন নিচ থেকে নিখুঁত পাসে আক্রমণ গড়ার কাজ।
লিভারপুলের রবার্টসন আর আর্সেনালের টিয়ের্নি—ইউরোর অন্য কোন দল লেফটব্যাকে দুজন এমন বিশ্বমানের খেলোয়াড় নিয়ে যাচ্ছে, গবেষণার বিষয় হতে পারে।
গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচই স্কটল্যান্ড খেলছে ঘরের মাঠে, এটা অনেক বড় একটা সুবিধা। কোচ স্টুয়ার্ট ক্লার্ক ক্যারিয়ারে জোসে মরিনিও, কেনি ডালগ্লিশ, রুড খুলিত ও ব্রেন্ডান রজার্সের মতো কোচের সাহচর্য পেয়েছেন—খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে। যা তাঁকে কোচ হিসেবে আরও পোক্ত করেছে। এটাও স্কটল্যান্ডের অনেক বড় সুবিধার বিষয়।
দুর্বলতা
দলের গোলরক্ষকের প্রত্যেকেই বয়সী। ডেভিড মার্শাল পেনাল্টি আটকে স্কটল্যান্ডকে ২৩ বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবলের স্বাদ এনে দিলেও বয়সের কারণে কতটুকু ভালো খেলেন, প্রশ্ন তোলাই যায়। রক্ষণভাগও অতটা শক্তিশালী নয়। ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়ার মতো দলের আক্রমণভাগকে এই রক্ষণভাগ আটকাতে পারবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। দলে চে অ্যাডামস যোগ দেওয়ার পরও গোল দেওয়া নিয়ে চিন্তা কমছে না। কারণ, স্কটল্যান্ডের কোনো স্ট্রাইকারই গোল দেওয়ার জন্য অতটা পরিচিত নন।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৩-৪-২-১)
স্কটল্যান্ড মূলত রক্ষণভাগে তিনজন রেখেই খেলতে পছন্দ করে। এর মূল কারণ দলটায় মানসম্পন্ন মিডফিল্ডারের ছড়াছড়ি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কট ম্যাকটমিনে, চেলসির বিলি গিলমোর, অ্যাস্টন ভিলার জন ম্যাকগিন, সাউদাম্পটনের স্টুয়ার্ট আর্মস্ট্রং, শেফিল্ডের জন ফ্লেক, সেল্টিকের ক্যালাম ম্যাকগ্রেগর—প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্লাবের বর্তমান ও ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।
মিডফিল্ডারদের এই আধিক্যের কারণে স্কট ম্যাকটমিনেকে সম্প্রতি সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলানো শুরু করেছেন কোচ স্টুয়ার্ট ক্লার্ক। এই ইউরোতেও ম্যাকটমিনেকে সেন্টারব্যাক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
অধিনায়ক অ্যান্ডি রবার্টসন ও আর্সেনালের কিয়েরান টিয়ের্নি, দুজনই বিশ্বমানের লেফটব্যাক। দুজনকে একই একাদশে খেলানোর ইচ্ছাও স্কটল্যান্ডকে ৩-৪-২-১ ছকে খেলতে সাহায্য করেছে, যেখানে টিয়ের্নি বাঁ দিকের সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলেন, তাঁর একটু সামনে লেফট উইংব্যাক হিসেবে খেলেন রবার্টসন। বাকি সেন্টারব্যাক হিসেবে নরউইচের গ্র্যান্ড হ্যানলি কিংবা লিডসের অধিনায়ক লিয়াম কুপারকে দেখা যেতে পারে। রাইট উইংব্যাক হিসেবে স্টিফেন ও’ডনেলের জায়গা পাকা।
মূল স্ট্রাইকার হিসেবে সদ্যই স্কটল্যান্ডের নাগরিকত্ব পাওয়া সাউদাম্পটনের স্ট্রাইকার চে অ্যাডামস খেলছেন, এটা নিশ্চিত। তাঁর পেছনে দুই ইনসাইড ফরোয়ার্ড হিসেবে সেল্টিকের জেমস ফরেস্ট ও নিউক্যাসলের রায়ান ফ্রেজারের খেলার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি।
আমরা ইউরোতে শুধু তিনটা গ্রুপপর্বের ম্যাচ খেলার জন্য যাচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি প্রথম রাউন্ড থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য। আমরা ইতিহাসের প্রথম স্কটিশ দল হিসেবে নকআউট পর্বে উঠতে চাই
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
স্কটল্যান্ড চাইবে যে করেই হোক পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য। কিন্তু গ্রুপের বাকি দলগুলো তাদের চেয়ে শক্তিশালী হওয়ায় সে আশা তারা কতটুকু পূরণ করতে পারে, প্রশ্ন তোলাই যায়।