সৌদি আরবের বিশ্বকাপ স্বপ্নে স্প্যানিশ-হতাশা
>২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পেরোতে পারেনি সৌদি আরব। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে তারা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নয়জন ফুটবলারকে খেলতে পাঠানো হয়েছিল স্পেনে। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে সেই পরিকল্পনা...
বাছাইপর্বের বাধা ডিঙিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা পাকা করার পর দারুণ একটি পরিকল্পনা নিয়েছিল সৌদি আরবের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষ। স্পেনের লা লিগা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি করে সেখানে জাতীয় দলের ৯ ফুটবলারকে ধারে খেলতে পাঠিয়েছিল তারা। মেসি-রোনালদোরা খেলে এমন লিগে খেলতে পারলে তারাও পরিণত হয়ে উঠবে, সৌদি কর্তৃপক্ষের এমনটাই ছিল আশা। কিন্তু কিসের কী, খেলোয়াড়েরা মাঠে নামারই সুযোগ পাননি। ফলে পরিকল্পনাটি চরম ব্যর্থ।
২৪ বছর বয়সী মিডফিল্ডার আবদুল মাজেদ আল সুলাইমানকে পাঠানো হয়েছিল স্পেনের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব রায়ো ভায়োকানোতে। প্রিমিয়ার ও দ্বিতীয় বিভাগে ওঠানামার মধ্যে থাকা দলটিতে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামা হয়নি তাঁর। পরিবেশের সঙ্গে নাকি খাপই খাইয়ে নিতে পারেননি। ক্লাবটির ক্রীড়া পরিচালক ডেভিড কভোনো বলেছেন, ‘খেলার বাইরে ভাষা, খাদ্য, শহর, সবকিছুই তাঁর জন্য কঠিন ছিল।’ সুলাইমান আরবি ছাড়া কোনো ভাষায় কথা বলতে পারতেন না। ফলে অনুশীলনে তাঁর সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল দোভাষীও। কিন্তু তারপরও কোনো ম্যাচে মাঠে নামানো যায়নি তাঁকে। নিজেও জায়গা দাবি করে নিতে পারেননি।
রায়ো ভায়োকানো ছাড়া আরও ছয়টি ক্লাব সৌদি আরবের আটজন ফুটবলারকে দলে রেখেছিল। উইঙ্গার সালেম আল দশারিকে নিয়েছিল লা লিগার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ভিয়ারিয়াল। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ইয়াহিয়া আল শেহরিকে লেগানেস। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিভাগের স্পোর্টিং গিজন, ভ্যালাদোলিদ ও নুমানসিয়া দলেও ছিল সৌদি ফুটবলার। কিন্তু একটি ক্লাবও মাঠে নামাতে পারেনি কোনো ফুটবলারকে।
শুধু খেলতে পেরেছেন স্ট্রাইকার ফাহাদ আল মুয়াল্লাদ। লেভান্তের হয়ে শুধু কয়েক মিনিট খেলার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। সেও না খেলার মতোই।
সন্দেহ নেই সৌদি আরব এশিয়ান ফুটবলের শক্তিশালী এক দল। তিনবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু স্পেনের ফুটবলে সৌদি আরবের ফুটবলাররা কুলিয়ে উঠতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। সেদিকেই মূলত ইঙ্গিত দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার লা লিগার পরিচালক ফার্নান্দো সানজ, ‘তারা হয়তো ভেবেছিল, তারা খেলতে পারবে। কিন্তু এখন এই বাস্তবতাও তারা বুঝতে পারছে, স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নশিপ অনেক, অনেক কঠিন।’
একটি বিশেষ চুক্তির আওতায় সৌদি খেলোয়াড়দের পাঠানো হয়েছিল স্পেনে, শীতকালীন দলবদলের সময়ে। সেখানে খেলোয়াড়দের বেতন ও খরচের অর্ধেক সৌদি ক্লাবগুলোই বহন করতে রাজি ছিল। কিন্তু এখন সৌদি আরবের সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলছে, লাভ হলো কী? প্রশ্ন উঠেছে এই চুক্তির সার্থকতা নিয়ে। খোদ স্পোর্টিং গিজনের সাবেক পরিচালক দাবি করেছেন, এই চুক্তি ছিল প্রহসন। যদিও কোনো কোনো ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেলোয়াড়েরা আধুনিক অনুশীলন সুবিধা ব্যবহার করে পেশি বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু মাঠের খেলাই তো আসল। তা-ই যদি খেলতে না পারে, আদৌ কোনো লাভ কি হলো!
এখন এ–ও বলা হচ্ছে, চুক্তির মূল লক্ষ্য আসলে ছিল সৌদি বাজার ধরা। স্প্যানিশ ফুটবলের জনপ্রিয়তা সৌদি আরবে আরও বাড়ানো। সৌদি আরবের টেলিকম প্রতিষ্ঠান সাতটি স্প্যানিশ ক্লাবে বিজ্ঞাপনের বড় অঙ্কের চুক্তিও করেছিল তখন। এভাবে ব্যবসা হয়েছে ঠিকই, সৌদি ফুটবলের কোনো লাভ হয়নি। এখন এই খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশ্বকাপে গেছে দেশটি। প্রথম রাউন্ডের বাধা কি পেরোতে পারবে?
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই রাশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে সৌদি আরব। এর আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে অবশ্য দারুণ ফুটবল খেলেছে তারা। বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারলেও সৌদি আরবের হাল না ছাড়ার খেলার প্রশংসা করেছে সবাই। এবার দেখা যাক বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে ভালো খেলে স্পেনের ক্লাবগুলোকে অবহেলার জবাব দিতে পারেন কি না এশিয়ার প্রতিনিধিরা।