সৌদি আরবে খেলা নিতে পিকের কমিশন ২২৫ কোটি
তাঁর বড় পরিচয় বার্সেলোনার ডিফেন্ডার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে খেলোয়াড় ছাপিয়েও জেরার্ড পিকের বড় পরিচয় সম্ভবত হয়ে উঠেছে তিনি ব্যবসায়ী!
কসমস নামে তাঁর একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে, টেনিসে ডেভিস কাপের সংস্কারেও তাঁর হাত আছে, স্প্যানিশ ক্লাব এফসি আন্দোরার মালিকানাও কিনে নিয়েছেন। কিন্তু এসবের পাশাপাশি যে কমিশন–বাণিজ্যেও আয়ের পথ বের করেছেন পিকে, সেটি কে জানত!
স্প্যানিশ পত্রিকা এল কনফিদেনসিয়ালের তদন্তে সেটিই উঠে আসছে। কয়েক বছর ধরেই স্প্যানিশ সুপারকাপ স্পেনের বদলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সৌদি আরবে, সেটির বিনিময়ে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ) প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ কোটি ইউরো পাবে বলে জানা গিয়েছিল।
এখন এল কনফিদেনসিয়ালের তদন্তে উঠে এসেছে, এই টুর্নামেন্টটা সৌদি আরবে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন বার্সা ডিফেন্ডার পিকে, আর সেটির ‘কমিশন’ হিসেবে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৫ কোটি টাকার বেশি!
পুরো প্রক্রিয়াটা কীভাবে হয়েছে, সেটিতে পিকে ও আরএফইএফ সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের ভূমিকা, অর্থের লেনদেন কীভাবে হয়েছে, সবকিছু নিয়ে পূর্ণ প্রতিবেদন আজ সোমবার প্রকাশ করেছে এল কনফিদেনসিয়াল। পিকে আর রুবিয়ালেসের মধ্যে ফোনালাপের অডিও আর চুক্তির কাগজপত্র তাদের কাছে আছে দাবি করে এল কনফিদেনসিয়াল দুজনের আলাপের কিছু অংশও ফাঁস করেছে।
এল কনফিদেনসিয়ালের প্রতিবেদনে লেখা, চুক্তি অনুযায়ী সৌদি আরবে স্প্যানিশ সুপারকাপের প্রতি আসরের জন্য অন্তত ৪ কোটি ইউরো পাবে স্প্যানিশ ফেডারেশন (আরএফইএফ)। আর পিকে? তাঁর প্রতিষ্ঠান এই চুক্তি থেকে প্রতি মৌসুমে ৪০ লাখ ইউরো পাবে। চুক্তি ছয় বছরের, অর্থাৎ সব মিলিয়ে পিকের পকেটে যাবে ২ কোটি ৪০ লাখ ইউরো!
দুজনের ফোনালাপের প্রকাশিত একটা অংশে বোঝা যায়, পিকেই রুবিয়ালেসকে চুক্তিতে রাজি হতে অনুপ্রাণিত করছিলেন। রুবিয়ালেস পিকেকে জানান, স্পেনের বাইরে এই টুর্নামেন্টের ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে অন্তত ৮০ লাখ ইউরোর নিচে রাজি হবে না রিয়াল মাদ্রিদ। পিকের জবাব, ‘যদি ব্যাপারটা অর্থেরই হয় আর রিয়াল মাদ্রিদ ৮ মিলিয়ন ইউরো চায়, তাহলে ওদের ৮ মিলিয়নই দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে বার্সেলোনাও ৮ মিলিয়ন পাবে। বাকিরা ২ মিলিয়ন আর ১ মিলিয়ন করে পাবে।’
স্পেনে আগের ছক অনুযায়ী সুপারকাপ যেভাবে হতো, তাতে শুধু আগের মৌসুমের লিগ আর স্প্যানিশ কাপজয়ীরাই দুই লেগের ফাইনাল খেলত। কিন্তু সৌদি আরবের সঙ্গে স্প্যানিশ ফেডারেশনের চুক্তিতে লিগ ও কাপজয়ীর পাশাপাশি কাপ ফাইনালিস্ট ও লিগে দ্বিতীয় দল (কাপজয়ী বা রানার্সআপের বাইরে) খেলে সুপারকাপে। দুটি সেমিফাইনালের পর এক লেগের ফাইনাল—নতুন ছক এটিই।
অন্য দেশে ম্যাচ নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্প্যানিশ ফেডারেশনের লাভ কী হবে, ফাঁস হওয়া ফোনালাপে সেটিও রুবিয়ালেসকে বোঝাচ্ছিলেন পিকে, ‘সব দল মিলিয়ে ১৯ মিলিয়ন পাবে, আর ফেডারেশন পাবে ৬ মিলিয়ন। আমরা সৌদি আরবকে আরও বেশি অর্থের জন্যও জোর দিতে পারি, বলব যে (আরও বেশি অর্থ) না দিলে রিয়াল মাদ্রিদ হয়তো সেখানে যেতে চাইবে না। আপনারা স্পেনে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে যেখানে ৩ মিলিয়ন আয় করতেও কষ্ট হয়ে যাবে, তার বদলে এই প্রস্তাব ভেবে দেখতে পারেন।’
এই চুক্তিতে পিকের প্রতিষ্ঠান কসমসের অ্যাকাউন্টে অবশ্য সরাসরিই টাকা ঢোকেনি। যতই ঝানু ব্যবসায়ী হোন, তিনি তো একজন খেলোয়াড়ই! তা-ও টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া বার্সেলোনারই খেলোয়াড়। সেই তিনিই টুর্নামেন্টের আয়োজনে অংশ নেওয়াই যেখানে স্বার্থের সংঘাত তুলে দেয়, সেখান থেকে কমিশন বাবদ পিকের অর্থ পাওয়া তো আরও বড় প্রশ্ন তুলে দিত। সে কারণে সরাসরি স্প্যানিশ ফেডারেশন বা সৌদি আরব থেকে টাকা যায়নি পিকের প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ পর্যন্ত চুক্তিটা যখন হলো, সেখানেও পিকে আর রুবিয়ালেসের মধ্যে ফোনে বার্তা আদান–প্রদান হয়েছে। পিকেকে রুবিয়ালেসের বার্তা, ‘দারুণ দেখিয়েছ, জেরি (পিকের ডাকনাম)। আমি এটা তোমাকে গতকালের অসাধারণ ম্যাচের জন্য (আগের দিন ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বার্সা জিতেছিল) বা তোমার গোলের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি না। যেটা বোঝাচ্ছি তা হলো সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে। সবকিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার যখনই কিছুর দরকার হবে, আমি আছি।’
সৌদি আরবে না হলে আগের ছকের সুপার কাপ বার্সেলোনার মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তে আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল পিকে-রুবিয়ালেসের।
সে জন্য রিয়াল মাদ্রিদকে কীভাবে রাজি করানো হবে, সেটিও উঠে এসেছে দুজনের কথোপকথনে, ‘জানি রিয়াল মাদ্রিদ (ক্যাম্প ন্যু-তে খেলার প্রস্তাবে) ‘‘না’’ বলবে, তবে সেটা তো আরও ভালো। তাহলে আমরা ভবিষ্যতে বলতে পারব, আমরা সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম (ক্যাম্প ন্যু) কিংবা লিগ চ্যাম্পিয়নদের (বার্সেলোনা) স্টেডিয়ামে খেলতে চেয়েছিলাম। সে ক্ষেত্রে আমাদের কথায় যুক্তিও থাকবে।’
শুধু স্প্যানিশ সুপারকাপ নয়, এর বাইরে জাপানি কোম্পানি রাকুটেনের বার্সেলোনার স্পনসর হওয়ার পেছনেও পিকের হাত ছিল বলে তদন্তে জানা গেছে।