গোল, দুই মিনিটের ব্যবধানে পাল্টা গোলে সমতা, আবার এগিয়ে যাওয়া। পেনাল্টি মিস। এক ম্যাচে এর চেয়ে বেশি নাটকীয়তা আর কী হতে পারে!
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা কিংস ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মধ্যে ম্যাচটা সেই রোমাঞ্চই উপহার দিল। নাটকীয় ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। চলতি মৌসুমে লিগে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বসুন্ধরার এটি প্রথম হার।
৩৯ মিনিটে প্রথম গোল করে এগিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম আবাহনীই জয়ের দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু শেষের দিকে দুই মিনিটের নাটক! ৮৭ মিনিটে রবসনের দুর্দান্ত গোলে সমতায় ফেরে বসুন্ধরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের স্বস্তিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
৮৯ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে দলকে জয় এনে দিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ। এ মৌসুমে লিগে অন্যতম সেরা গোল বলা যায় সেটাকে, মিনিট কয়েক আগে যে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি তুলেছিল রবসনের গোলটি! চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রথম গোলটিও চিনেদুর।
১৮ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষ স্থানে শক্ত অবস্থান বসুন্ধরার। সমান ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে চট্টগ্রাম আবাহনী।
আজকের আগে লিগে বসুন্ধরার সর্বশেষ হারটি ছিল এই চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষেই। করোনার কারণে সর্বশেষ বাতিল হওয়া লিগে নীলফামারীতে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ৪-৩ গোলে হেরেছিল বসুন্ধরা।
এরপর চলতি লিগে ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর আজ আবার সেই মারুফুলের দলের কাছেই হার। এ মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ও লিগ মিলিয়ে মোট ২২ ম্যাচ খেলে আজই প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেলে বসুন্ধরা।
বসুন্ধরা কিংসের আক্রমণভাগে তারকার অভাব নেই। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে ব্রাজিলিয়ান রবসন রবিনিও, লিগে এখন পর্যন্ত যিনি সর্বোচ্চ গোলদাতাও। তবে মাঠে আজ তাঁর শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল ‘ডে অফ’–এ আছেন।
বলের ওপর তাঁর নিখুঁত সাইড স্টেপগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। ‘হাফ চান্স’ থেকে গোল করা যার কাছে সাধারণ ব্যাপার, তিনিই কিনা আজ বল পোস্টেও রাখতে পারছিলেন না।
১৩ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বক্সের মধ্যে ঢুকে রবসন শট নিলে সেভ করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। ২ মিনিট পরেই বিপলুর কাটব্যাকে গোলমুখ থেকে বার উঁচিয়ে মারেন রবসন। শেষ পর্যন্ত প্রথমে পিছিয়ে পড়া বসুন্ধরা সময়তায় ফেরে রবসনের গোলেই।
চোখধাঁধানো সে গোল! বক্সের বাইরে ইনসাইড-আউটসাইড ডজে দুই খেলোয়াড়কে বিবশ করে রাখলেন, এরপর জায়গায় দাঁড়িয়েই তাঁর বাঁ পায়ের বুলেট গতির শট দূরে পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়।
দুই বিদেশি ছাড়াই একাদশ সাজিয়েছিলেন মারুফুল। স্থানীয়দের নিয়ে বসুন্ধরাকে থামানোর পরিকল্পনা কাজে লেগে যায়। অ্যাটাকিং থার্ডে রবসনকে ‘ডাবল টিমিং’ করে তাঁর সহজাত খেলা নষ্ট করেছেন।
বসুন্ধরার মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করেন আরেক ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেজ। প্রথাগত ফরোয়ার্ড সোহেল রানাকে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলিয়ে জোনাথনের সঙ্গে আঠার মতো লাগিয়ে দিয়ে তাঁর পাসিং লেন বন্ধ করে দিয়েছেন মারুফুল।
দুই ব্রাজিলিয়ানের জ্বালানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমনিতেই নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা। স্থানীয় দুই সেন্টারব্যাক শওকত রাসেল ও মনজুর রহমানের মধ্যে থেকে কখনোই ফণা তুলতে পারেননি তিনি। বরং মিস করেছেন পেনাল্টি।
প্রতি আক্রমণে বরং বসুন্ধরার রক্ষণভাগকে ঝাঁকুনি দিয়েছে আবাহনীর আক্রমণভাগ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রাইটব্যাক নাসিরুল ইসলাম। ডান প্রান্ত দিয়ে নাসির আর ম্যাথিউয়ের রসায়নটা ছিল চমৎকার। ৩৯ মিনিটে আবাহনীর এগিয়ে যাওয়া এই দুজনের রসায়নেই। নাসিরুল ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে ম্যাথিউকে পাস দিলে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে কাছের পোস্ট দিয়ে জালে জড়িয়েছেন ম্যাথিউ।
৪৮ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারত বসুন্ধরা। কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন রাউল বেসেরা। ইব্রাহিমের উদ্দেশে থ্রু দিয়েছিলেন জোনাথন। বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে ইব্রাহিমকে ফাউল করেন আবাহনী গোলরক্ষক। পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারি। কিন্তু স্পটকিক থেকে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন বেসেরা। তাঁর শট ক্রসবার ছুঁয়ে বাইরে চলে যায়।
৮৭ মিনিটে বসুন্ধরাকে সমতায় ফেরান রবসন। কিন্তু ৮৯ মিনিটে ম্যাথিউ যা করলেন, তা অবিশ্বাস্য। মাঝমাঠের একটু ওপরে বল পেয়ে ছুটলেন বসুন্ধরা থেকে বল নিয়ে ওপরে উঠে তিনজনের মধ্যে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে দৃষ্টিনন্দন এক গোল। অনেকের মতে যেটি এবার লিগের সেরা গোল। এরপর অল্প সময়ে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বসুন্ধরা।
এই হারের পরেও ১৮ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষ স্থানে শক্ত অবস্থান বসুন্ধরার। সমান ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে চট্টগ্রাম আবাহনী।