সুপার লিগ নিয়ে মুখ খুললেন বার্সা সভাপতি
‘অল কোয়াইট অন বার্সা ফ্রন্ট!’
রোববার রাতে বাকি ১১ ক্লাবের দেখাদেখি একটি বিবৃতি ও টুইট দিয়ে বার্সেলোনা জানিয়ে দিয়েছিল তারা ইউরোপিয়ান সুপার লিগে যোগ দিচ্ছে। ২০১৫ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতা ক্লাবটি আর খেলতে চাইছে না ইউরোপের সেরা টুর্নামেন্টে। বরং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গী হয়ে নতুন এক লিগ শুরু করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাইছে তারা।
সেই বিদ্রোহী লিগের সুবাদে গত তিন দিনে বিশ্ব ফুটবল অনেক কিছুই দেখেছে। প্রথমে বিস্ময়, আতঙ্ক এবং সবশেষে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এই খবর। ইংলিশ ক্লাবগুলোর সমর্থকদের নিজ নিজ ক্লাবের বিরুদ্ধে খেপে ওঠা ও কড়া প্রতিবাদে টনক নড়তে বাধ্য করেছে তাদের। একে একে সবাই সে প্রকল্প থেকে সরে এসেছে। একই পথে হেঁটেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান। জুভেন্টাস সরে আসার ইঙ্গিত না দিলেও আপাতত প্রকল্প স্থগিত করা হচ্ছে, এমন বিবৃতি জানিয়েছে। ওদিকে রিয়াল সভাপতি একাই সুপার লিগের হয়ে লড়ে যাচ্ছেন। উয়েফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তুলেছেন।
এর মধ্যে আশ্চর্য রকমের চুপ ছিল বার্সেলোনা। ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে সুপার লিগের অবলুপ্তি হয়েছে, এমনটা জেনে আনন্দিত হয়ে টুইট করেছেন। কিন্তু ক্লাবের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বলা হচ্ছিল না। অবশেষে ক্লাব সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা সুপার লিগের ব্যাপারে নিজের মতটা জানিয়ে দিলেন আজ। তাঁর কার্যক্রম নিয়মিত অনুসরণ করেন, এমন যে কেউ তাতে চমকে যেতে পারেন।
গতকাল উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন বার্সেলোনা সভাপতির বেশ প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, সুপার লিগে যোগ দেওয়ার আগে ক্লাবের সদস্যদের অনুমতি লাগবে—এই শর্ত যোগ করে দিয়েছেন লাপোর্তা। সেফেরিনের কাছে কাজটা বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয়েছে। তাঁর ধারণা, এভাবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুপার লিগে যেতে রাজি হলেও বের হয়ে যাওয়ার একটি সহজ রাস্তা খোলা রেখেছেন লাপোর্তা। এটাও বলেছেন, তাঁকে দুই–তিনবার ফোন করে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন লাপোর্তা। বলেছেন, ক্লাব আর্থিক দুরবস্থায় থাকাতেই অমন এক লিগে যাওয়ার কথায় রাজি হয়েছিলেন।
আজ টিভি থ্রির সঙ্গে কথা বলেছেন বার্সেলোনা সভাপতি। সেখানেই জানা গেল, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা ক্লাবের সদস্য ও সাধারণ সভার ওপর ছেড়ে দিলেও সুপার লিগের পক্ষেই ভোট দিচ্ছেন লাপোর্তা। টিভি থ্রিকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেখেশুনে এগোচ্ছি। আমাদের জন্য এটা জরুরি, কিন্তু সিদ্ধান্ত সদস্যরা নেবেন। বড় ক্লাবগুলো অনেক চাপের সৃষ্টি করছে এবং আর্থিক বণ্টনে আমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে।’
সুপার লিগ কেন তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে, সেটা ব্যাখ্যা করার পর উয়েফার সঙ্গে সমঝোতা করার আশাও জানিয়েছেন বার্সা সভাপতি, ‘এটা আকর্ষণীয় একটা প্রতিযোগিতা হতে হবে, ক্লাবের খেলার যোগ্যতা মাথায় রেখেই তা করতে হবে। আমরা ঘরোয়া লিগের পক্ষে এবং উয়েফার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। এটাকে আকর্ষণীয় করতে চাইলে আমাদের আরও কিছু দরকার। আশা করি, সমঝোতায় আসতে পারব।’
এরই মধ্যে ইংলিশ ক্লাবগুলো সরে গেছে। আতলেতিকো নাম কাটিয়ে নিয়েছে। মিলানের দুই ক্লাবও নাম কাটিয়ে নিয়েছে প্রায়। সরাসরি না বললেও আপাতত যে এই লিগ চালু হচ্ছে না, সেটা মেনে নিয়েছে জুভেন্টাসও। কিন্তু লাপোর্তার ধারণা, এখনো সুপার লিগ আয়োজন করা সম্ভব, ‘কিছু কিছু ক্লাবকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে (সরে যাওয়ার জন্য), কিন্তু এখনো প্রস্তাবটা আছে। আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করেছি। আমাদের বেতন অনেক বেশি এবং এ সবকিছুই হিসাবে রাখতে হবে। খেলার দিকটাও মাথায় রাখতে হবে।’
লাপোর্তার এমন খোলামেলাভাবে সুপার লিগকে সমর্থন করা বিস্ময় জাগাতে পারে। কারণ, অনেকেই ধারণা করেছিলেন, বার্সেলোনার সুপার লিগে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউই নিয়েছেন। লাপোর্তার পক্ষে এ সিদ্ধান্ত বদলানো সম্ভব হয়নি। উয়েফা সভাপতি সেফেরিনও এমন কিছুই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন লাপোর্তার কথার সুর পুরো উল্টো মনে হচ্ছে।
মজার ব্যাপার, গত অক্টোবরে বার্তোমেউ বিদায় নেওয়ার সময় যখন সুপার লিগের পক্ষে কথা বলেছিলেন, তখন এর চরম বিরোধী ছিলেন লাপোর্তা। এমনকি জানুয়ারিতে নির্বাচনী প্রচারণার সময়টায় স্প্যানিশ পত্রিকা কোপকে বলেছিলেন, ‘আমি ইউরোপিয়ান সুপার লিগ সমর্থন করি না। আয়ের অনেক উৎস আছে, এটা এমন কোনো টুর্নামেন্ট নয়, যা খেলাটায় ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। আমার মতে, ফুটবলের যত খারাপ ব্যাপার, সবকিছুর বহিঃপ্রকাশ হলো ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। এটা শুধুই অর্থের লোভ। এটা সুন্দর খেলাটাকেই নষ্ট করে দেবে।’
নির্বাচনে জেতার পর সুর বদলে ফেলাটা রাজনীতির মাঠে নতুন কিছু নয়। লাপোর্তা ফুটবল ময়দানে সেটা টেনে এনেছেন, এটুকুই যা ব্যতিক্রম।