২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সিটি না লিভারপুল—ড্র-তে কার লাভ বেশি, এরপর কার রাস্তা কেমন

সিটি আর লিভারপুলের ম্যাচে কাল শেষ পর্যন্ত কোনো দলই জেতেনি, তবে জয় হাতছাড়া হওয়ার হতাশা গার্দিওলার সিটিরই বেশিছবি: রয়টার্স

রিয়াদ মাহরেজকে ধন্যবাদ দেবে লিভারপুল!

ইতিহাদে কাল ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড, গোলটা হলেই ৩-২ গোলে জিতে যায় সিটি। লিভারপুলকে হারিয়ে শিরোপাও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেত! কিন্তু লিভারপুল গোলকিপার আলিসনই শুধু সামনে, এমন অবস্থায় মাহরেজের শট গেল বার উঁচিয়ে। ম্যাচ শেষ ২-২ গোলে। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা শেষে বেঁচে থাকল শিরোপাদৌড়ের রোমাঞ্চ।

লিগে আর ৭ ম্যাচ বাকি। তিনে থাকা চেলসি শিরোপাদৌড়ে আর নেই, লড়াইটা এখন শুধু সিটি আর লিভারপুলের মধ্যেই। শীর্ষে থাকা সিটির (৭৪ পয়েন্ট) চেয়ে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে লিভারপুল। ইতিহাদে কাল শেষ পর্যন্ত ড্র-তে তাহলে কে খুশি থাকবে বেশি? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, সামনের রাস্তাটা কার জন্য বেশি কঠিন? শেষ পর্যন্ত সিটি না লিভারপুল—অবিশ্বাস্য এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কার হবে?

জিতলে লিভারপুলের চেয়ে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে যেত সিটি, লিভারপুল জিতে গেলে সিটিকে পেছনে ফেলত ২ পয়েন্টে। ড্র শেষে অবস্থাটা ম্যাচের আগের মতোই, সিটি ১ পয়েন্ট এগিয়ে। অবস্থাদৃষ্টে সিটিরই ড্র-তে লাভটা বেশি হলো। দুই দলের কেউই তো সেভাবে পয়েন্ট হারায় না, এখন পর্যন্ত ৩১ ম্যাচে সিটি সম্ভাব্য ৯৩ পয়েন্টের মধ্যে হারিয়েছে ১৯ পয়েন্ট (৫ ড্র, ৩ হার), লিভারপুল ২০ (৭ ড্র, ২ হার), বাকি সাত ম্যাচে কেউ পয়েন্ট না হারালেও সিটিই জিতবে শিরোপা।

বাকি ৭ ম্যাচ

লিভারপুল: ম্যান ইউনাইটেড (হোম), এভারটন (হোম), নিউক্যাসল (অ্যাওয়ে), টটেনহাম (হোম), অ্যাস্টন ভিলা (অ্যাওয়ে), সাউদাম্পটন (অ্যাওয়ে), উলভারহ্যাম্পটন (হোম)
ম্যান সিটি: উলভারহ্যাম্পটন (অ্যাওয়ে), ব্রাইটন (হোম), ওয়াটফোর্ড (হোম), লিডস (অ্যাওয়ে), নিউক্যাসল (হোম), ওয়েস্ট হাম (অ্যাওয়ে), অ্যাস্টন ভিলা (হোম)

লিভারপুলের এখন প্রার্থনায় থাকতে হবে, সিটিকে হারাতে না পারুক, কেউ অন্তত তাদের জয়টা রুখে দিক। আর এদিকে নিজেদের বাকি ৭ ম্যাচের সবগুলোই জিততে হবে। তবে সেই সমীকরণই সামনে নিয়ে আসছে দুই দলের বাকি ৭ ম্যাচের বিশ্লেষণ—কার জন্য পথটা বেশি সহজ, কার পথটা কঠিন।

সালাহদের সামনে রাস্তাটা বেশি কঠিন
ছবি: রয়টার্স

সে প্রশ্নেও সিটিকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। প্রতিপক্ষের মান, ম্যাচে বৈরিতার ইতিহাস কিংবা পাওয়া-হারানোর সমীকরণ, ঘরের মাঠের সুবিধা—সব বিশ্লেষণই যে গার্দিওলার কপালে ভাঁজ কমানোর মতো! বাকি সূচি দেখে আপাতত কাগজে-কলমের হিসাবে এতটুকু বলে দেওয়া যায়, শুধু উলভারহ্যাম্পটন আর ওয়েস্ট হাম ম্যাচ দুটিই যা কঠিন হতে পারে সিটির জন্য। আর লিভারপুলের? ক্লপের হাসিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস একটু কমে যাওয়ার শঙ্কা!

উলভারহ্যাম্পটন, নিউক্যাসল ও অ্যাস্টন ভিলা—এই তিন দলের সঙ্গে ম্যাচ আছে লিভারপুল ও সিটি দুই দলেরই। এর বাইরে বাকি চার ম্যাচে সিটির প্রতিপক্ষ যেখানে ব্রাইটন, ওয়াটফোর্ড, লিডস ও ওয়েস্ট হাম; লিভারপুলকে খেলতে হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এভারটন, টটেনহাম ও সাউদাম্পটনের সঙ্গে।

এভারটন এই মৌসুমে লিগে ধুঁকছে বটে, এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকায় তারা অবনমন অঞ্চলের (১৮ থেকে ২০ নম্বর দল) এক ধাপ ওপরে হতে পারে, তবে ম্যাচটা যে ‘মার্সিসাইড ডার্বি!’ নিজেদের ভাগ্যে যা-ই হোক, নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের শিরোপার উল্লাস থামানোর চেষ্টা এমনিতেই কখনো কম করার কথা নয় এভারটনের, তার ওপর এবার লিভারপুলের কাছ থেকে পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া তাদের নিজেদের জন্যও দরকার!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও কি একই চেষ্টা করবে না? লিভারপুলের সঙ্গে গত চার-পাঁচ মৌসুমে শিরোপার লড়াইয়ে দ্বৈরথটা ম্যানসিটির সঙ্গেই হচ্ছে বটে, তবে ইংল্যান্ডে লিভারপুলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের নাম নিতে গেলে তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নামই আসবে! লিগে এর পরের ম্যাচটাই রোনালদোদের সঙ্গে খেলবে লিভারপুল, তার পরের ম্যাচ আবার এভারটনের সঙ্গে।

মানের এই গোলেই কাল একটা পয়েন্ট পেয়েছে লিভারপুল
ছবি: রয়টার্স

এর এক ম্যাচ পর কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে আন্তোনিও কন্তের অধীনে নতুন করে নিজেদের ফিরে পাওয়া, লিগের সেরা চারে থেকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্ন উজ্জ্বল করা টটেনহাম তো আছেই!
কে জানে, যে শিরোপাদৌড় নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, দেখা গেল সেটিতে চার ম্যাচ পরই সিটির উচ্ছ্বাস!

সিটির এসব হিসাব-নিকাশ নেই। তাদের প্রতিপক্ষ দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণই যা ম্যাচগুলো কঠিন করতে পারে গার্দিওলার দলের জন্য, সেখানেও অবনমন বাঁচাতে লড়তে থাকা ওয়াটফোর্ডই যা প্রাণপণে লড়তে পারে।

আরও পড়ুন

লিগের পয়েন্ট তালিকায় ১৫তম নিউক্যাসল আর ১৬তম লিডসের বিপক্ষেও ম্যাচ আছে সিটির, সেখানেও নিউক্যাসল-লিডসের একেবারে সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সম্ভাবনা জাগতে পারত। কিন্তু এই মুহূর্তে অবনমন অঞ্চলের তিন দলের মধ্যে সবার ওপরে থাকা, অর্থাৎ ১৮তম দল বার্নলির (২৪ পয়েন্ট) চেয়ে লিডস ও নিউক্যাসল যথাক্রমে ৯ ও ১০ পয়েন্ট এগিয়ে থাকায় তাদের অবনমন নিয়ে তেমন শঙ্কাই আসলে নেই।

গার্দিওলার দলের জন্য কাজটা সহজ মনে হবে লিভারপুলের সঙ্গে তাদের প্রতিপক্ষদের পয়েন্ট তালিকায় অবস্থানের কথা চিন্তা করলেও। সিটির বাকি সাত প্রতিপক্ষের মধ্যে এই মুহূর্তে সেরা দশে আছে শুধু উলভস ও ওয়েস্ট হাম। লিভারপুলের ক্ষেত্রে সে তালিকায় দল তিনটি-ইউনাইটেড, টটেনহাম ও উলভস।

ম্যাচ শেষে দুই কোচের আলাপেও কি সামনের পথ কার বেশি কঠিন আলোচনাটা জায়গা পেয়েছে?
ছবি: রয়টার্স

লিভারপুলকে অবশ্য এগিয়ে রাখছে ঘরের মাঠের সুবিধা। বাকি সাত ম্যাচের চারটিই লিভারপুল খেলবে নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে। ক্লপের জন্য কিছুটা বাড়তি স্বস্তি হতে পারে এই যে বাকি ৭ ম্যাচের মধ্যে কাগজে–কলমে সবচেয়ে কঠিন চার ম্যাচই—ম্যান ইউনাইটেড, এভারটন, টটেনহাম ও উলভারহ্যাম্পটন হবে অ্যানফিল্ড। সিটির ‘হোম’ ম্যাচ আছে তিনটি। উলভারহ্যাম্পটন ও ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিই প্রতিপক্ষের মাটিতে।

তবে এসব তো কাগজে-কলমের হিসাব। ফুটবল এত কাগজে-কলমের হিসাবের ধার ধারে না বলেই তো লড়াইটা রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে। শেষ দিন পর্যন্তই কি ছড়াবে? এখনই ‘না’ বলার সাহস কে দেখাবে!

প্রতিপক্ষ ৭ দলের এই মুহূর্তে অবস্থান  

লিভারপুল: ম্যান ইউনাইটেড (৭), এভারটন (১৭), নিউক্যাসল (১৫), টটেনহাম (৪), অ্যাস্টন ভিলা (১২), সাউদাম্পটন (১৪), উলভারহ্যাম্পটন (৮)।
ম্যান সিটি: উলভারহ্যাম্পটন (৮), ব্রাইটন (১১), ওয়াটফোর্ড (১৯), লিডস (১৬), নিউক্যাসল (১৫), ওয়েস্ট হাম (৬), অ্যাস্টন ভিলা (১২)।