সব দলে অন্তত একজন সমকামী ফুটবলার আছে

ওয়াটফোর্ড স্ট্রাইকার ট্রয় ডিনি। ছবি: এএফপি
ওয়াটফোর্ড স্ট্রাইকার ট্রয় ডিনি। ছবি: এএফপি

পশ্চিমা বিশ্বে এটি বৈধতা পেয়ে গেছে। বৈধতা পেয়েছে পাশের দেশ ভারতেও। কিন্তু সমকামী হলেও নিজেকে তা বলে দাবি করা কোনো সেলেব্রিটির ক্ষেত্রে যেন বিরল এক ঘটনা। সমকামী ক্রিকেটার-ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, ক্যারিয়ার শেষেই হয়তো কেউ জানাচ্ছেন, তিনি সমকামী। এটি নিয়েই এবার মুখ খুলেছেন ওয়াটফোর্ডের ইংলিশ স্ট্রাইকার ট্রয় ডিনি। তাঁর কথা, খোঁজ করলে হয়তো দেখা যাবে, প্রায় প্রতিটি দলেই এক-দুজন সমকামী খেলোয়াড় আছেন!

ফুটবলারদের মধ্যে সমকামীতার কথা এলে জাস্টিন ফাসানুর নাম আসবেই। তেমন খেলার সুযোগ না পেলেও এক সময় ম্যানচেস্টার সিটি-নিউক্যাসলের মতো ক্লাবে ছিলেন। খেলেছেন নরউইচ, ব্রাইটন, নটিংহ্যাম ফরেস্টেও। সেই ফাসানু আশির দশকে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে সংবাদমাধ্যমে খোলাখুলিই জানিয়ে দেন, তিনি সমকামী। ফুটবলারদের মধ্যে এভাবে প্রকাশ্যে সমকামিতার কথা স্বীকার করার প্রথম ঘটনা সেটি। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সমকামিতাই সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ডের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সময়টা তখন ১৯৯৮ সাল, এক বছর আগেই ক্যারিয়ারের যতি টেনে দেওয়া ফাসানু তখন যুক্তরাষ্ট্রে। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। অভিযোগ, ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর জানিয়েছে ফাসানু তাকে যৌন নির্যাতন করেছে। ১৯৯৮ সালের ৩ এপ্রিল ফাসানুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু ততক্ষণে নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়েছেন ফাসানু। ইংল্যান্ড চলে আসেন। ১৯৯৮ সালের ২ মে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়, আত্মহত্যা করেছিলেন ফাসানু। তাঁর সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, সমকামী হওয়ার দোষে হয়তো সঠিক বিচার পাবেন না। সঙ্গে এ-ও লিখেছিলেন, ওই কিশোরের সঙ্গে জোর করে কিছু করেননি। যা হয়েছিল, পারস্পরিক সম্মতিতেই হয়েছিল।

তা এতদিন পর তাঁর কথা এল ট্রয় ডিনির কথার প্রসঙ্গ ধরে। বিবিসির ‘গ্রাউন্ডেড উইদ লুইস থেরো’ পডকাস্টে ৩১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার বলেছেন, ‘আমি সবার সামনেই বলতে পারি যে প্রতিটি ফুটবল দলেই সম্ভবত এক-দুজন সমকামী বা বাইসেক্সুয়াল খেলোয়াড় আছে।’ কিন্তু তাঁরা সেটি প্রকাশ্যে কেন জানান না, তা নিয়ে ডিনির কথা, ‘আমার মনে হয় যাঁরা সমকামী, তাঁরা সেটি জানানো প্রথম ব্যক্তি হতে চান না। কিন্তু একজন যদি প্রকাশ্যে সেটি স্বীকার করে, নিশ্চিত আরও ১০০ জন এসে বলবে ‘হ্যাঁ, আমিও তা-ই।‘’

খেলা চলার সময়েই নিজেদের সমকামিতার কথা সবার জানানোর ব্যাপারে আরও সাহসী হওয়া উচিত বলে মনে হচ্ছে ডিনির, ‘আমি মাঝে মাঝে ভাবি, কেন মানুষ ফুটবল, রাগবি বা যে খেলায়ই থাকুক সেটির ক্যারিয়ার শেষে এসে জানায় ‘আমি সমকামী।’ মাঝে মাঝে মনে হয়, পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে এটা কাউকে না জানিয়ে একা বয়ে নিয়ে বেড়ানো কত চাপেরই না হওয়ার কথা!’