করোনা ধরতেই অনন্য উদাহরণ রাখলেন জার্মান ফুটবলার
>করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া প্রথম পেশাদার ফুটবলার তিনি। কিন্তু আক্রান্ত হয়েছেন, এই শঙ্কা ঘিরে ধরতেই টিমো হুবার্স যা করেছেন তা এই সংকটময় সময়ে সবার জন্যই দারুণ উদাহরণ
তাঁর নিজের শরীরে কোনো লক্ষণ তখনো ধরা পড়েনি। শুধু শুনেছেন সম্প্রতি যে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, সেখানে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গেই নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটলেন টিমো হুবার্স। পরে পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেল বিশ্বজুড়ে ভয়ের চাদর বিছিয়ে রাখা ভাইরাসটি ২৩ বছর বয়সী জার্মান ফুটবলারের শরীরেও বাসা বেঁধেছে।
জার্মান ফুটবলে দ্বিতীয় স্তর ‘টু বুন্দেসলিগা’র দল হ্যানোভারের ডিফেন্ডার হুবার্স। হ্যানোভারই তাঁর শরীরের করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এতেই একটা ‘প্রথমে’ নাম লিখিয়েছেন হুবার্স। যে প্রথম কেউই এখন হতে চায় না। পেশাদার ফুটবলারদের মধ্যে হুবার্সই প্রথম, যাঁর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেল। তবে সেটি নয়, হুবার্স শিরোনামে আসছেন প্রশংসা কুড়োচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে-পরে আচরণে দারুণ পরিপক্বতার ছাপ রাখার জন্য।
গত শনিবার হিল্ডেশেইমে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন হুবার্স। হ্যানোভারের ধারণা, সেখান থেকেই ভাইরাসটা তাঁর শরীরে ঢুকেছে। বিবৃতিতে হ্যানোভার লিখেছে, হুবার্স যখনই শুনেছেন ওই অনুষ্ঠানে যাঁদের আশপাশে ছিলেন, তাঁদের একজন করোনায় আক্রান্ত, সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের কাছে গেছেন। পাশাপাশি নিজেকে নিজে গৃহবন্দীও করে রাখেন। যাতে নিজ শরীর থেকে আর কারও শরীরে সেটি না যেতে পারে। হ্যানোভারের ধারণা, হুবার্সের শরীর থেকে ক্লাবের আর কারও শরীরের ভাইরাস সংক্রমিত হয়নি। শনিবারের পর ক্লাবের কারও সঙ্গে হুবার্সের দেখাই হয়নি। তবু সতর্কতাবশত সব খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টেস্ট করিয়ে নিচ্ছে হ্যানোভার।
তাতে ফল কী আসবে সময় বলবে। তবে হুবার্সের আচরণ প্রশংসিত হচ্ছে চারদিকে। হ্যানোভারের ক্রীড়া পরিচালক গেরহার্ড জুবেরের চোখে হুবার্সের আচরণ ছিল ‘অসাধারণ ও অন্য সবার জন্য উদাহরণ গড়ার মতো।’
কোনো পেশাদার ফুটবলারের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম হলেও ইউরোপে পেশাদার ফুটবলে করোনাভাইরাসের কালো ছায়া পড়তে শুরু করেছে ভালোভাবেই। ইতালির শীর্ষ লিগ সিরি আ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ আছে। ইংল্যান্ডে আজ রাতে ম্যানচেস্টার সিটি ও আর্সেনালের ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে। স্পেনে আগামী দুই সপ্তাহ লিগের ম্যাচগুলো দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে। ইংল্যান্ডেও লিগ স্থগিত করা বা দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলার দাবি জোরালো হচ্ছে। ফরাসি লিগে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে বা সর্বোচ্চ ১০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে ম্যাচ হবে। জার্মানিতে লিগ বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন স্বয়ং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্ফান। ২০২০ ইউরো এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবিও অনেকে জানাচ্ছেন ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার কাছে।
স্পেনের ক্লাব সেভিয়ার মাঠে ইউরোপা লিগের ম্যাচ খেলতে যেতে চেয়েও স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি ইতালির ক্লাব রোমা, আবার ইতালির ইন্টার মিলানের মাঠে ইউরোপা লিগের ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে না স্পেনের গেতাফে। চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল রাতে ভ্যালেন্সিয়া-আতালান্তা ম্যাচ হয়েছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে, আজ রাতে পিএসজি-ডর্টমুন্ড ম্যাচও হবে সেভাবেই।
অবশ্য জীবনই যেখানে শঙ্কায়, সেখানে ফুটবল আর কী? বিল শ্যাঙ্কলির কথাটা এ বেলায় ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। লিভারপুলের কিংবদন্তি কোচ ফুটবলের গুরুত্ব বোঝাতে একবার বলেছিলেন, ‘সবাই বলে ফুটবল নাকি জীবন-মরণের ব্যাপার। আমি বলি সেটা ভুল। ফুটবল এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।’
অতিরঞ্জিত করেই কথাটা বলেছিলেন শ্যাঙ্কলি। কিন্তু তখন কী আর জানতেন আসলেই এমন দিন আসবে, যেদিনে সত্যি সত্যি জীবন-মরণের প্রশ্ন থমকে দেবে ফুটবলকে।