লেভানডফস্কির বিকল্প হিসেবে ম্যাথাউসের স্বপ্নে রোনালদো
কিংবদন্তি লোথার ম্যাথাউস এখন স্বপ্ন দেখছেন। বায়ার্ন মিউনিখের গোলমেশিন রবার্ট লেভানডফস্কির আর ক্লাবে মন টিকছে না। তিনি বায়ার্ন ছাড়তে চান এবং ক্লাব বদলে কোথায় যেতে চান, সেটাও সবার জানা—বার্সেলোনা। এ নিয়ে কারও মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে, সেটাও গত পরশু বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা দূর করে দিয়েছেন। নিজের ক্লাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে লাপোর্তা লেভানডফস্কিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বার্সেলোনায় যাওয়ার ইচ্ছা জানানোয়।
পোলিশ স্ট্রাইকারকে তাই বায়ার্ন মিউনিখে নতুন মৌসুমে আর নাও দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এমন একজনের বিকল্প তো খুঁজে নিতে হবে বায়ার্নকে। জার্মান ক্লাবের জন্য দুর্দান্ত এক বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন ম্যাথাউস। নিজের সাবেক ক্লাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে চাইছেন তিনি।
একদিকে ব্যালন ডি’অর জেতার সম্ভাবনা বাড়াতে বার্সেলোনায় যেতে চাইছেন লেভানডফস্কি, ওদিকে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ দিকটায় সে সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়তে চাইছেন রোনালদো। কিন্তু চাইলেই তো নতুন ক্লাবে যাওয়া সম্ভব না। এমন এক ক্লাব বেছে নিতে হবে, যে ক্লাব লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতার দৌড়ে থাকে, সে ক্লাবে তাঁকে সহযোগিতা করার মতো সতীর্থ আছে এবং যে ক্লাব তাঁর উচ্চ বেতন দিতে পারে।
রোনালদো ক্লাব ছাড়তে চান, এটা তাঁর ক্লাব জানে। রোনালদো নিজেই ক্লাবকে সেটা জানিয়েছেন। কিন্তু পর্তুগিজ তারকাকে নিতে পারবে—এমন ক্লাব কয়টি আছে ইউরোপে? ফ্রেঞ্চ লিগে পিএসজি, জার্মানিতে বায়ার্ন, সিরি ‘আ’তে জুভেন্টাসে আগেই ঘুরে গেছেন, আছে শুধু মিলানের দুই ক্লাব। স্প্যানিশ লিগে একটি ক্লাবেই যেতে পারেন—রিয়াল মাদ্রিদ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষ ছয় ক্লাবের বাকি পাঁচ আর আছে পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্তিং, রোনালদোর প্রথম ক্লাব।
মিলানের দুই ক্লাব তাঁর উচ্চ বেতন দিতে আগ্রহী নয়, পিএসজি মেসি-এমবাপ্পে-নেইমারকে নিয়ে ব্যস্ত। রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে নিয়ে দলের রসায়ন নষ্ট করতে চায় না। ইংলিশ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে রোনালদোকে ইউনাইটেড ছাড়তে রাজি হবে, সেটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। রেড ডেভিল সমর্থকেরাও সে ক্ষেত্রে রোনালদোকে কখনো ক্ষমা করবেন না। সব দিক থেকে বায়ার্ন মিউনিখে যাওয়াটাই রোনালদোর জন্য যুক্তিযুক্ত।
কথা হচ্ছে বায়ার্ন রোনালদোকে চায় কি না। দলবদলের বাজারের নির্ভরযোগ্য সব সূত্র বলছে, লেভানডফস্কি বায়ার্ন ছাড়লেও রোনালদোর কথা ভাববে না দলটি। বয়স ৩৭ হয়ে গেছে, এমন কোনো খেলোয়াড়ে বিনিয়োগে আগ্রহী নয় তারা। দলবদলের বাজারে ক্লাবটির অতীত আচরণও এমন দলবদল হওয়ার কোনো আশা দেখাচ্ছে না।
ম্যাথাউস অবশ্য এমন সম্ভাবনার কথা ভেবে পুলকিত। স্কাই জার্মানিতে নিজের কলামে লিখেছেন, ‘বায়ার্নে রোনালদো যোগ দিলে ব্যাপারটি আকর্ষণীয় হবে! অন্তত আপনার উচিত ব্যাপারটা একবার হলেও মাথায় নেওয়া, ভেবে দেখা। বায়ার্নে যদি মনে হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো শারীরিকভাবে আরও এক বা দুই বছর সাহায্য করতে পারে এবং লেভানডফস্কির কারণে পাওয়া দলবদলের অর্থ যদি পর্তুগিজ মহাতারকার পেছনে বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে আমি অবশ্যই এটা ভেবে দেখতাম।’
লেভানডফস্কি ক্লাব ছাড়বেন কি না, সেটা জানার অপেক্ষায় অবশ্য বসে নেই বায়ার্ন। নতুন মৌসুমের প্রস্তুতিতে এরই মধ্যে লিভারপুল থেকে সাদিও মানেকে নিয়ে রেখেছে তারা। টমাস মুলার, কিংসলে কোমান, সার্জ নাব্রি ও লিরয় সানের সঙ্গে মানেকে যোগ করলে এমনিতেই দুর্দান্ত একটি আক্রমণভাগ পাচ্ছে বায়ার্ন। লেভানডফস্কি বা রোনালদো এমন আক্রমণের সঙ্গী পেয়ে বুন্দেসলিগা বা চ্যাম্পিয়নস লিগে গোলবন্যা বইয়ে দিতেই পারেন।
যদিও ম্যাথাউসের ধারণা, রোনালদোকে নিতে চাইলে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে বায়ার্ন মিউনিখকে। দুটি শর্তই অর্থ সংক্রান্ত, ‘যদি লেভানডস্কির বেতনে সে “সন্তুষ্ট” হয়, তাহলে রোনালদো নিয়ে উৎসাহিত হওয়াই যায়। তাহলে নাগেলসমানের হাতে জার্মান দলের দুজন দারুণ মিডফিল্ডার থাকবে এবং খুব ভালো একটা ব্যাকআপও থাকবে। আক্রমণে মানে, মুলার, রোনালদো ও কিংসলে কোমান মিলে অনেক গোল করতে পারবে। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও পারফরম্যান্সের চাপ সবার জন্য অনেক বেশি থাকবে এবং কেউই হাত-পা ঝাড়া হয়ে থাকতে পারবে না। নাব্রি হয়তো ক্লাব ছাড়বে, সে ক্ষেত্রে আর্থিক দিক থেকে পুরো ব্যাপারটা যৌক্তিক মনে হবে।’