লেভা ৪০ গোলে থামলেই খুশি মুলারের স্ত্রী
গার্ড মুলারের ৪৯ বছরের একটি রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রবার্ট লেভানডফস্কি। এরই মধ্যে বায়ার্ন মিউনিখের শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গেছে। বুন্দেসলিগা ঘিরে বায়ার্নের সমর্থকদের এখন যেটুকু আগ্রহ তা শুধু লেভার রেকর্ড নিয়েই। লেভার হাতে ম্যাচ আছে দুটি। আর মাত্র একটি গোল করলেই ছুঁয়ে ফেলবেন কিংবদন্তি মুলারকে। দুটি গোল করলে মুলারকে রেকর্ড বই থেকে মুছে দিয়ে এককভাবে রেকর্ডটির মালিক হয়ে যাবেন লেভা।
রেকর্ডটি বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ৪০ গোল করে বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি গড়েছিলেন জার্মান কিংবদন্তি মুলার। টানা নবমবারের মতো লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুখবর পেয়ে বায়ার্ন যেদিন মাঠে নেমেছিল, সেই রাতেই দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে নিজের গোলসংখ্যা এবারের লিগে ৩৯-এ নিয়ে গেছেন লেভানডফস্কি। তাঁর হ্যাটট্রিকে বরুসিয়া ম’গ্লাডবাখকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বায়ার্ন।
বায়ার্ন তাদের পরের ম্যাচটি খেলতে মাঠে নামবে আগামী শনিবার। সেদিন তারা অতিথি হবে এসসি ফ্রাইবুর্গের। সেই ম্যাচে কি লেভা পারবেন মুলারকে ছুঁয়ে ফেলতে বা ছাড়িয়ে যেতে? লেভা পারুন কি না পারুন, সেটা দেখতে পাবেন না মুলার। ভীষণ অসুস্থ মুলার ২০১৫ সাল থেকেই বাড়িতে নিবিড় পরিচর্যায় আছেন। মাঝে তো কোমাতেই চলে গিয়েছিলেন ৭৫ বছর বয়সী জার্মানির সাবেক তারকা। কে গোল করল আর কে রেকর্ড ভাঙল—এসব জাগতিক বিষয় নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ এখন আর তাঁর নেই। কিন্তু মুলারের রেকর্ডটি নিয়ে জার্মানির পত্রিকা ‘দ্য বিল্ড’-এর সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁর স্ত্রী উশি মুলার। উশির কথা, লেভা মুলারের রেকর্ডটি স্পর্শ করলে তিনি খুশিই হবেন। তবে তিনি চাইবেন রেকর্ডটি যেন না ভেঙে যায়!
বুন্দেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচ খেলে ৩৬৫ গোল করা মুলারের স্ত্রী উশি বলেছেন, ‘গার্ড তার (লেভানডফস্কি) জন্য খুশিই হবে। তাকে প্রথম অভিনন্দনটা হয়তো ও-ই জানাত।’ বর্তমানে স্মৃতিভ্রষ্টতা রোগে ভোগা মুলার নিজের এত বছরের পুরোনো রেকর্ড নিয়ে কী ভাবতেন, সেটাও বলেছেন উশি, ‘ও সব সময় বিস্ময় নিয়ে বলত আরও আগে কেন ওকে কেউ ছুঁতে পারেনি!’
ফুটবল বিশ্বে ডার বোম্বার নামে পরিচিত মুলার ৪০ গোল করেছিলেন ৩৪ ম্যাচ খেলে। সেই মৌসুমে চারটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখের ১১-০ গোলের জয়ে করেছিলেন ৪ গোল। একটি ৫ গোলও ছিল। সেটি তিনি করেছিলেন ওবেরহাউসেনের বিপক্ষে দলের ৭-০ গোলের জয়ে।
এদিক থেকে লেভাকেও কৃতিত্ব দিতে হবে। চলতি মৌসুমে বায়ার্নের হয়ে মাত্র ২৭টি ম্যাচই খেলেছেন। এই কয়টি ম্যাচ খেলেই পোলিশ স্ট্রাইকারের গোলসংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে আছে পাঁচটি হ্যাটট্রিক। একটি ম্যাচে চার গোলও পেয়েছেন লেভা। সব মিলিয়ে উশির মনে হচ্ছে মুলারের রেকর্ডটিতে ভাগ বসাতে পারবেন লেভা, ‘আমি নিশ্চিত যে লেভানডফস্কি এটা করে ফেলবে। দুর্দান্ত একটি মৌসুম কেটেছে তার। সে খুব পরিশ্রমী একজন খেলোয়াড়।’
এরই মধ্যে বায়ার্নের গোলমেশিন আখ্যা পেয়ে গেছেন বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে বুন্দেসলিগায় ৩৪৮ ম্যাচে ২৭৫ গোল করা লেভানডফস্কি। তবে দুই যুগের দুই ফুটবলার মুলার ও লেভার তুলনা করতে চান না উশি, ‘দুই যুগের দুজনের তুলনা আপনি কখনোই করতে পারবেন না।’ তুলনার কথা যখন এসেছে, উশি অন্যভাবে তাঁর জীবনসঙ্গীকে এগিয়ে রেখেছেন, ‘রবার্ট পুরোদস্তুর একজন অ্যাথলেট। আর গার্ড ছিল শিল্পী। সে (মুলার) ছিল রাবারের বলের মতো। গার্ডের পায়ের কাছে সব সময় দুজন দাঁড়িয়ে থাকত (পাহারা দেওয়ার জন্য)।’
সবকিছু বলার পর মুচকি হেসে মুলারের স্ত্রী যা বললেন তাঁর মানে একটাই—তিনি চাইছেন গত বছরের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার লেভা রেকর্ডটি স্পর্শ করলেও যেন ভাঙতে না পারেন! বিল্ডকে উশি বলেছেন, ‘স্ত্রী হিসেবে আমি চাইব রেকর্ডটি গার্ডেরই থাকুক। প্রিয় রবার্ট লেভানডফস্কি ৪০ গোলই যথেষ্ট!’