২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

লিভারপুলের মালিককে হারিয়ে নিজের প্রথম ক্লাব কিনলেন রোনালদো

ক্রুজেইরোর জার্সি হাতে রোনালদো নাজারিওছবি: ইনস্টাগ্রাম

স্পেনে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ আর ইতালিতে ইন্টার মিলান ও এসি মিলানের মতো ক্লাবে খেলেছেন রোনালদো নাজারিও। নামকরা এসব ক্লাবে খেললেও ব্রাজিলের দল ক্রুজেইরো তাঁর মনে সব সময়ই আলাদা একটি জায়গা নিয়েই থাকবে। পেশাদার ফুটবলে ক্রুজেইরো রোনালদোর প্রথম ক্লাব। অনেকটা প্রথম প্রেমের মতো। আর জীবনের প্রথম প্রেম কেউ ভুলতে পারে কখনো!

এ কারণেই হয়তো রোনালদো যখন খবর পেলেন ক্রুজেইরো বিক্রি হবে, তিনি ছুটে গেলেন ব্রাজিলে। উদ্দেশ্য একটাই—নিজের পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের প্রথম ক্লাবটি কিনে নেবেন। ব্রাজিলের ফুটবলে ইদানীং অনেকটাই পিছিয়ে পড়া ক্লাবটিকে আবার নিজের মতো করে সাজাবেন। কিংবদন্তি স্ট্রাইকারের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ক্রুজেইরো কিনে নিতে পেরেছেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, প্রিয় ক্লাবটিকে তিনি হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারেন কি না।

ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার রোনালদো
ফাইল ছবি

রোনালদোর যখন ১১ বছর বয়স, তাঁর মা–বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পড়ালেখার প্রতি তখনই মন উঠে যায় রোনালদোর। স্কুল ছেড়ে তাঁর জায়গা হয় রাস্তায়, পড়ালেখার বদলে সময় কাটতে শুরু হয় ফুটবল খেলে। মায়ের কাছে থাকতেন, অর্থের অভাব ছিল প্রকট। কিন্তু রাস্তায় ফুটবল খেলতে খেলতে চোখে পড়ে যান সাও ক্রিস্তোভাও ক্লাবের স্কাউটদের নজরে। ক্লাবটির যুব দলে ঠাঁই হয় ছোট্ট রোনালদোর।

এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রোনালদোকে। সাও ক্রিস্তোভাও থেকে তাঁকে দলে টানে ক্রুজেইরো। ১৯৯৩ সালে এ ক্লাবের হয়েই পেশাদার ফুটবলে আবির্ভাব তাঁর। কিন্তু এখানে শুধু একটি মৌসুমই কাটিয়েছেন। ক্রুজেইরো তাঁকে বিক্রি করে দেয় পিএসভি আইন্দহোফেনের কাছে। এরপর আইন্দহোফেন হয়ে রোনালদো ফুটবল ফেরি করে বেড়ান বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান ও করিন্থিয়ানসে। এসব ক্লাবে খেলে অনেক অর্থ আয় করেছেন রোনালদো। কিন্তু জীবনের প্রথম ক্লাব ক্রুজেইরো, যারা তাঁকে খুব বেশি অর্থ দিতে পারেনি, সেই ক্লাবকে কখনোই ভুলতে পারেননি।

রোনালদো নাজারিও
ফাইল ছবি

রোনালদোর এখন অর্থের অভাব নেই। তাই তো ক্রুজেইরো কিনতে গিয়ে তিনি হারিয়ে দিতে পেরেছেন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের মালিক পক্ষ ফেনওয়ে স্পের্টস গ্রুপকেও। আর নিজের প্রথম ক্লাবটির প্রতি অগাধ ভালোবাসা আছে বলেই দলটি দুই মৌসুম ধরে ব্রাজিলের সিরি ‘বি’তে খেলার পরও তিনি কিনে নিতে একটুও দ্বিধা করেননি। রোনালদো ক্রুজেইরো কিনে নেওয়ার পর ক্লাবটির সভাপতি সের্হিও সান্তোস রদ্রিগেজ একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন। সেখানে নিজের খুশির কথা বলেছেন রোনালদো, ‘এ চুক্তি করতে পেরে আমি খুব খুশি।’

৪৫ বছর বয়সী রোনালদো এরপর বলেন, ‘ক্রুজেইরোকে আমার অনেক কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আছে।’ ভিডিওতে দেখা যায়, রোনালদো ৯ নম্বর একটি জার্সি ধরে আছেন। খেলোয়াড়ি জীবনে ৯ নম্বর জার্সি গায়েই খেলতেন তিনি। ক্রুজেইরোর যে জার্সি রোনালদো ধরে ছিলেন, সেটির নম্বরের নিচে তাঁরই ডাকনাম ‘ফেনোমোনন’ লেখা। এই জার্সি দেখিয়ে তিনি ক্রুজেইরোকে নিয়ে নিজের লক্ষ্যের কথা জানান, ‘ক্রুজেইরোর যেখানে থাকার কথা, আবার সেখানে নিয়ে যেতে হবে।’

তবে কাজটা যে সহজ নয়, তা খুব ভালো করেই জানেন রোনালদো। সেটিও সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আমাদের সামনে এখন অনেক কাজ। আমি চাইব, সমর্থকেরা আমাদের সঙ্গে থাকুন, আবার মাঠে আসুন। কারণ, আমাদের এখন অনেক শক্তি লাগবে, লাগবে একতা।’ এরপর রোনালদো যোগ করেন, ‘আমাদের অনেক কাজ করতে হবে এবং আমার লক্ষ্য ক্রুজেইরোকে আবার সেরা ক্লাবে পরিণত করা।’

এর আগে রোনালদো স্পেনের লা লিগার দল রিয়াল ভায়াদোলিদের ৫১ শতাংশের মালিকানা কিনে নিয়েছেন ২০১৮ সালে। ভায়াদোলিদের এ অংশের মালিকানা পেতে তাঁকে খরচ করতে হয়েছে তিন কোটি ইউরো। ব্রাজিলের গ্লোবোইস্পোর্তে ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্রুজেইরোর বেশির ভাগ অংশের মালিক হতে দিতে হবে ছয় কোটি ইউরো।