ইয়ুর্গেন ক্লপের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হলো।
গতকাল টটেনহামের সঙ্গে ড্র করে পয়েন্ট হারানোর পর লিভারপুল কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘ম্যানচেস্টার সিটিও পয়েন্ট হারাবে, এমন আশা করছেন কি না?’ ক্লপ সোজাসুজিই বলে দিয়েছিলেন, ‘এ রকম কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। অন্যভাবে ভাবতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু আমি আসলেই ও রকম কিছুর সম্ভাবনা দেখছি না।’
ও রকম কিছু আসলে হয়ওনি। ইতিহাদে আজ সিটি দাপটের সঙ্গে খেলেই নিউক্যাসলকে হারিয়েছে ৫-০ গোলে। তাতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার জন্য গায়ে গা লাগিয়ে চলতে থাকা লড়াইটায় একটু হলেও ব্যবধান এলো—লিভারপুলকে ৩ পয়েন্ট পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল সিটি। ৩৫ ম্যাচ শেষে সিটির পয়েন্ট ৮৬, লিভারপুলের ৮৩।
রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হৃদয়ভাঙা হারের সেই ম্যাচের একাদশে চারটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান পেপ গার্দিওলা। কাইল ওয়াকার ছিলেন না চোটের কারণে, বেঞ্চে বসানো হয় বের্নার্দো সিলভা, ফিল ফোডেন ও রিয়াদ মাহরেজকে। এই চারজনের জায়গায় একাদশে আনা হয় ওলেকসান্দর জিনচেঙ্কো, ইলকায় গুন্দোয়ান, রাহিম স্টার্লিং ও জ্যাক গ্রিলিশকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল থেকে ওভাবে বাদ পড়ার ধাক্কা কতটা সামলাতে পেরেছে সিটি সেটাই দেখার অপেক্ষা ছিল আসলে। গার্দিওলার দল সেই ধাক্কার আঁচ লিগ শিরোপার স্বপ্নে লাগতে দেয়নি।
এমনিতে অবশ্য নিউক্যাসলকে নিয়ে সিটির ভয়ের খুব একটা কারণ ছিল না। লিগে এর আগে নিউক্যাসলের বিপক্ষে সর্বশেষ ২৮ ম্যাচে মাত্র একবার হেরেছে সিটি, সেটা ২০১৯ সালে। ইতিহাদে এর আগে কোনো ম্যাচ জেতা হয়নি নিউক্যাসলের, ১৪টি হারের সঙ্গে দুটি ড্র। সিটির মাঠে নিউক্যাসল সর্বশেষ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে, অ্যালান শিয়ারারের একমাত্র গোলে। তখন মেইনে রোড স্টেডিয়াম ছিল ম্যানচেস্টার সিটির মাঠ।
২২ বছর আগের সেই সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনার কোনো আভাস দেওয়ার আগেই আজ গোল খেয়ে বসে নিউক্যাসল। ম্যাচের ১৯ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা গুন্দোয়ানের ক্রসে হেড করে স্টার্লিংয়ের দিকে বাড়ান নিউক্যাসলের বক্সে থাকা জোয়াও কানসেলো। বল জালে পাঠাতে ভুল হয়নি স্টার্লিংয়ের। ইতিহাদে এটা স্টার্লিংয়ের ৫০ তম গোল। সের্হিও আগুয়েরোর (১০৬) পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ঘরের মাঠে অর্ধশত গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সিটির উইঙ্গার।
মিনিট পাঁচেক পরে সিটির জালে বল পাঠিয়েছিল নিউক্যাসলও। কিন্তু ক্রিস উডের সেই গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। সেই হতাশা ভুলতে না ভুলতেই দ্বিতীয় গোলটা হজম করে বসে নিউক্যাসল, এবং সেটা গোলরক্ষক ডুব্রাভকার ভুলে। কেভিন ডি ব্রুইনার ক্রস পড়েছিল ডি-বক্সের সীমানায় গুন্দোয়ানের পায়ে। জার্মান মিডফিল্ডারের শট ডুব্রাভকা ঠেকিয়ে দিলেও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। সেই বল প্রথমে রুবেন দিয়াস জালে পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও এমেরিক লাপোর্তে ভুল করেননি কোনো।
দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া সিটি ব্যবধান ৩-০ করে ৬১ মিনিটে। ডি ব্রুইনাই গোলটা বানিয়ে দিয়েছেন, রদ্রি শুধু জালে পাঠানোর কাজটা করেছেন। এরপর আর এই ম্যাচের ফল নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু সিটি বোধ হয় সেখানেই থামতে চায়নি। ৮৯ মিনিটে বদলি নামা ফোডেনের গোলের পর যোগ হওয়া সময়ে স্টার্লিং করলেন ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল।
পয়েন্টে তো এগিয়েই, এখন গোল ব্যবধানেও লিভারপুলের (৬৪) চেয়ে বেশ এগিয়ে গেল সিটি (৬৮)।