লিভারপুল-সিটি? রিয়াল-পিএসজি? খরচের দৌড়ে টটেনহামই সেরা!
আনুষ্ঠানিকভাবে দলবদলের বাজার খোলার এখনো সপ্তাহও পেরোয়নি। কিন্তু এ যুগে ইউরোপিয়ান ফুটবলে কোনো ক্লাব যে দলবদলের চুক্তি সম্পাদনের জন্য আর দলবদলের বাজার খোলার অপেক্ষা করে না, সে তো নতুন কোনো তথ্য নয়। প্রায় সব বড় দলবদলের ক্ষেত্রেই চুক্তি-সমঝোতা আগেই হয়ে যায়, দলবদলের বাজার খুললে শুধু নিবন্ধনটা সেরে নেওয়া হয় – এই যা!
তা ইউরোপের ফুটবলে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে প্রথম সপ্তাহ শেষে হিসেব-নিকেশ যা দাঁড়িয়েছে, তাতে একটু চমকেই যেতে হয়। সাধারণত দলবদলে খরচের হিসেব-নিকেশ এলে কোন ক্লাবের কথা মাথায় আসে? বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, গত কয়েক বছরে ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে ঘুরে দাঁড়ানো লিভারপুল কিংবা গত এক যুগে ইউরোপের ফুটবল বাজারের খোলনলচেই বদলে দেওয়া দুই নব্যধনী পিএসজি ও ম্যানচেস্টার সিটি... এই ক্লাবগুলোই তো?
বার্সেলোনা না হয় আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ায় এখন বিনামূল্যে খেলোয়াড় কেনার দিকেই ঝুঁকছে। কিন্তু তাদের বাদ রেখেও অন্য ক্লাবগুলোরই তো খরচের তালিকায় ওপরে থাকার কথা! অথচ ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব বলছে, এবারের গ্রীষ্মকালীন বাজারের প্রথম সপ্তাহের প্রতিবেদন বলছে, এসব ক্লাব নয়, খরচের হিসাবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে টটেনহাম।
আন্তোনিও কন্তের প্রভাব এমনই! যে ক্লাবেই গেছেন ইতালিয়ান কোচ, সেখানে সাফল্য যেমন নিয়ে এসেছেন, তেমনি খরচও করেছেন দুহাতে। গত নভেম্বরে তিনি টটেনহামে যোগ দেওয়ার সময় লিগের পয়েন্ট তালিকায় স্পার্স ছিল নয় নম্বরে, সেখান থেকে চার নম্বরে উঠিয়ে লিগ শেষ করেছেন কন্তে। নিশ্চিত করেছেন, এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে টটেনহাম।
কিন্তু এতটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে কেন! কেইন-সনরা তো ছিলেনই, দলের শক্তি বাড়াতে এরই মধ্যে এভারটন থেকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন, ইন্টার মিলান থেকে ক্রোয়েশিয়ার উইঙ্গার (যিনি কন্তের কৌশলে উইংব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন) ইভান পেরিসিচ, ব্রাইটন থেকে তরুণ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইভস বিসুমাকে এনেছেন। এতটুকু হয়তো বলে দেওয়া যায়, এবারের ইংলিশ লিগের লড়াই শুধু লিভারপুল আর ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যেই থাকবে না!
তা এত এত খেলোয়াড় আনতে গিয়েই এখন পর্যন্ত দলবদল মৌসুমে সবচেয়ে খরুচে ক্লাবের উপাধি জুটে গেছে টটেনহামের। অবশ্য স্পার্সের ৮ কোটি ৭২ লাখ ইউরোর চেয়ে লিভারপুল খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বেনফিকা থেকে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার দারউইন নুনিয়েজকে নিয়ে আসা লিভারপুলের দলবদলে মোট খরচ ৮ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর কাছাকাছি।
তালিকার তিন নম্বরে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে গত মৌসুমে নিজেদের ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতা রিয়ালের ৮ কোটি ইউরো খরচের পুরোটাই এক খেলোয়াড়ের পেছনে – অরেলিয়াঁ চুয়ামেনি। আর্লিং হরলান্ডকে কিনে আনার পরও মাত্র ৬ কোটি ইউরো খরচ নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির তালিকার ছয় নম্বরে থাকা একটু অবিশ্বাস্যই বটে।
লিগ হিসেবে খরচের তালিকাটা করলে কোন লিগ সবার ওপরে থাকবে, সেটি অনুমান করতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। প্রিমিয়ার লিগ তো সব সময়ই খরচের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে! এবারও দলবদলের বাজারের প্রথম ছয় দিন শেষের হিসাব বলছে, ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের অন্য যেকোনোটির চেয়ে অন্তত দ্বিগুণের কাছাকাছি খরচ ইংলিশ লিগের।
৫৮ কোটি ১২ লাখ ইউরো খরচ হয়েছে ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোর, তাদের পরই আছে ইতালিয়ান সিরি আ (৩০ কোটি ৬৭ লাখ ইউরো)। মজার ব্যাপার, মাত্র ১৩ কোটি ৫৪ লাখ ইউরো খরচ নিয়ে সবার পেছনে আছে স্প্যানিশ লা লিগা। করোনার ধাক্কা কোন দেশের ফুটবল-অর্থনীতিতে বেশি প্রভাব ফেলেছে, বুঝতে কষ্ট হয় না। তিন নম্বরে বুন্দেসলিগা (২৩ কোটি ৬৯ লাখ), চারে ফরাসি লিগ আঁ (২৩ কোটি ৬৯ লাখ)।
কোনো একক খেলোয়াড়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচের রেকর্ডটি লিভারপুলের। দারউইন নুনিয়েজের জন্য ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো নিশ্চিতভাবেই খরচ হচ্ছে ক্লাবটির, এর পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষ খরচ আরও ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো।
আর হিসেবটা যদি হয় কোন দেশে কোন ক্লাবের সবচেয়ে বেশি খরচ, সেটির? ইংল্যান্ডে তো সেটি টটেনহামই, ইতালিতে জুভেন্টাসকে (৪ কোটি ইউরো) টপকে সবচেয়ে খরুচে ক্লাব আতালান্তা (৪ কোটি ২০ লাখ)। জার্মানিতে সবার ওপরে দুই পরাশক্তি বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (৫ কোটি ৫০ লাখ) ও বায়ার্ন মিউনিখ (৫ কোটি)।
ফ্রান্সে পিএসজিরই সবচেয়ে খরুচে ক্লাব হওয়া কোনো চমক নয়, বরং দুইয়ে থাকা অলিম্পিক মার্শেইয়ের (প্রায় সাড়ে চার কোটি) চেয়ে পিএসজির খরচ যে এরই মধ্যে দ্বিগুণের কাছাকাছি (প্রায় ৮ কোটি), সেটিই স্বাভাবিক মনে হয়। স্পেনে রিয়াল মাদ্রিদের (৮ কোটি) পরই খরচের তালিকার দুই নম্বরে আছে রিয়াল বেতিস (১ কোটি ৮০ লাখ)।
সবচেয়ে খরুচে দশ ক্লাব
টটেনহাম ৮ কোটি ৭২ লাখ
লিভারপুল ৮ কোটি ৫৮ লাখ
রিয়াল মাদ্রিদ ৮ কোটি
পিএসজি ৭ কোটি ৯৫ লাখ
নিউক্যাসল ৬ কোটি ৬০ লাখ
ম্যানচেস্টার সিটি ৬ কোটি
লিডস ইউনাইটেড ৫ কোটি ৭৮ লাখ
বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ৫ কোটি ৫০ লাখ
অ্যাস্টন ভিলা ৫ কোটি ৪৫ লাখ
বায়ার্ন মিউনিখ ৫ কোটি ৫ লাখ