লাল কার্ড দেখেও মন জিতে নেওয়া যায়
নয়ে নয় হয়ে গেল জিনেদিন জিদানের। নয়টি ফাইনাল খেলে রিয়াল মাদ্রিদকে নয়টি শিরোপা এনে দিয়েছেন এই কোচ। গতকাল স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা রিয়ালের ডাগ আউটে এই কিংবদন্তির দশম শিরোপা। গোল শূন্য ম্যাচের পর পেনাল্টি শুট আউটে ৪-১ ব্যবধানে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়েছে রিয়াল। কিন্তু এসব কিছুই হয়তো লেখা যেত না একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে ফেদে ভালভার্দে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে।
অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছিল তখন। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে প্রতি আক্রমণে উঠেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। গোলের নেশায় তীব্র গতিতে ছুটছিলেন আলভারো মোরাতা। সামনে কোনো ডিফেন্ডার নেই, একা দাঁড়িয়ে গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। রিয়ালের সবচেয়ে দ্রুত গতির খেলোয়াড় হয়েও তাঁকে ছোঁয়া সম্ভব হচ্ছিল না ভালভার্দের। এক মুহূর্ত পরেই ডি-বক্সে ঢুকে পড়বেন মোরাতা। গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ানে মোরাতার বাজে রেকর্ডের ওপর তো আর যাই হোক বাজি ধরা যায় না তাই বক্সের সামনে আটকাতে হতো মোরাতাকে। পা বাড়িয়ে আটকে দিলেন ভালভার্দে। সরাসরি লা কার্ড দেখলেন এই মিডফিল্ডার।
দশজনের দলে রূপ নিলেও ভালভার্দের ওই লাল কার্ডের পর ম্যাচের আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি ছিল। বাকি সময়টা কাটিয়ে দিয়ে টাই ব্রেকারে ঠিকই শিরোপা জিতে নিয়েছে ভালভার্দে। পুরো ম্যাচ ভালো খেলে পেনাল্টিতে একটি শট আটকে দিয়েছেন কোর্তোয়া। তবু ম্যাচ সেরা হয়েছেন ফেদে ভালভার্দে। ম্যাচে খুব ভালো খেললেও লাল কার্ড দেখার পর কোনো খেলোয়াড়ের পক্ষে সেরা হওয়া কঠিন। কিন্তু তাঁর গতকাল সেরা হওয়াতে বিস্মিত হননি কেউ।
এমনকি প্রতিপক্ষ দলের কোচ ডিয়েগো সিমিওনেও বলছেন, ‘এ ম্যাচে অন্য কেউ সেরা হতে পারেন না, আমার ধারণা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের সিদ্ধান্ত একদম সঠিক। কারণ ওই কাজ দিয়েই সে ম্যাচ জিতে নিয়েছে। এটাই ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। খেলা চললে এটা সম্ভবত গোল হতো। আমি ওকে বলেছি চিন্তা করো না, তুমি তাই করেছ যা করা উচিত ছিল।’
ম্যাচের ওই মুহূর্তে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিপক্ষ কোচই প্রশংসা করছেন। সেখানে জিদান যে স্তুতি বাক্যে ভাসিয়ে দেবেন-এটাই স্বাভাবিক, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো সে মোরাতার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ওকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এবং আমি খুব খুশি। কারণ সে অসাধারণ কাজ করেছে। ওর যা করা দরকার ছিল তাই করেছে। সে খুব নিষ্ঠুর ফাউল করেছে কিন্তু সে এটা ভালোভাবেই করেছে।’
ক্লাবের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও ভালভার্দে মুগ্ধ। এ মৌসুমে রিয়ালের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত পাওয়া এই উরুগুইয়ানকে নিয়ে তৃপ্ত পেরেজ, ‘আমি জানি না এর পর (ফাউল না করলে) কী হতো কিন্তু সে মোরাতার একটি পরিষ্কার সুযোগ আটকে দিয়েছে। হয়তো গোলরক্ষক সেটা ঠেকাতেও পারত। অনেক কিছুই হতে পারত। কিন্তু এটা আমাদের ম্যাচে রেখেছে, সেটা পেনাল্টিতে নিতে দিয়েছে এবং আমরা কাপ জিতেছি।’
ম্যাচে মোরাতাকে ভয়ংকর এক ট্যাকল করেছেন,সরাসরি লাল কার্ড দেখেছেন। বেশ কয়েক ম্যাচ নিষিদ্ধ হবেন সেটা নিশ্চিত। ভালভার্দে আরেক খেলোয়াড়কে এভাবে ফাউল করায় অনুতপ্ত কিন্তু দলের প্রয়োজন তো তাঁকে দেখতেই হতো, ‘আমি মোরাতার কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমি যা করেছি সেটা ভালো কিছু না, কিন্তু আমাকে করতেই হতো। আমি শিরোপার জন্য আনন্দিত। আমি খুবই রেগে গিয়েছিলাম কারণ আমার দলের একজন খেলোয়াড় কমে গিয়েছিল। কিন্তু তারা (জিদান ও সিমিওনে) আমাকে সহযোগিতা করেছে। সিমিওনে এগিয়ে এসে আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। কী বলেছে আমি তা বলব না কিন্তু এটা সবাই করবে না।’