রোনালদোরা সামনে, তাই ৪০ মাস পর ‘সুপার মারিও’কে ফেরাচ্ছে ইতালি
টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে জায়গা না পাওয়ার শঙ্কা ইতালির সামনে। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার শেষ লড়াইয়ে সম্ভাব্য বাধা হতে পারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। এমন কঠিন ম্যাচে জয়ের লক্ষ্যে নিজের সব অস্ত্র নিয়েই তো নামতে চাইবেন ইতালি কোচ রবার্তো মানচিনি। সেই অস্ত্রের খোঁজে মানচিনির চোখ পড়ল ভুলে যাওয়া এক খেয়ালি সৈন্যের দিকে—মারিও বালোতেল্লি!
সেই ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচে সর্বশেষ ইতালি দলে খেলেছেন বালোতেল্লি। ৪০ মাস ফিরে ইতালির বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচাতে পারবেন ৩১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার? সময়ই বলবে।
ইতালি আর পর্তুগাল মুখোমুখি হবেই, এমনটা এখনই বলে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কাতার বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বে তুলনামূলক সহজ গ্রুপে পড়েও নিজ নিজ গ্রুপে সেরা হতে পারেনি সর্বশেষ দুই ইউরোজয়ী দুই দল। বাছাইপর্বের প্লে-অফে খেলতে হচ্ছে তাদের, সেখানে দুই দল পড়েছে একই পথে।
ইউরোপিয়ান অঞ্চলের গ্রুপ পর্ব থেকে ৯টি দল সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে, এখন প্লে-অফে তিনটি ভিন্ন ভাগ থেকে যাবে ৩ দল। তিনটি ভাগে চারটি করে দল প্রথমে দুই সেমিফাইনালে লড়বে, সেখান থেকে জয়ী দুই দল খেলবে প্লে-অফ ফাইনাল।
ইতালি ও পর্তুগালের ভাগে সেমিফাইনালে ইতালি লড়বে উত্তর মেসিডোনিয়ার সঙ্গে, পর্তুগালের প্রতিপক্ষ তুরস্ক। সেখানে দুই দল জিতলেই ফাইনাল হবে ইতালি-পর্তুগালের। সর্বশেষ দুই ইউরোজয়ী দল—ইতালি ইউরো জিতেছে গত জুলাইয়ে, পর্তুগাল ২০১৬ সালে।
ফুটবলপ্রেমীদের জন্য ফাইনালটা বেদনার আগাম বার্তাই নিয়ে আসে। পর্তুগাল জিতলে পরাশক্তি ইতালিকে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে না দেখার কষ্ট সইতে হবে। আর ইতালি জিতলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপটা আর খেলা হবে না!
কিন্তু আবেগ একপাশে সরিয়ে ইতালি আর পর্তুগালকে তো জয়ের সম্ভাব্য সব পথ নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। ইতালি কোচ মানচিনির ভাবনায় আসছে বালোতেল্লির নাম।
ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করছে, বালোতেল্লির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে মানচিনির। ‘সুপার মারিও’কে আরেকটি সুযোগ দিতে চান ইতালি কোচ।
বিখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানোও টুইটে নিশ্চিত করেছেন, ‘মারিও বালোতেল্লি ফিরছেন! ইতালি জাতীয় দলের পরের ম্যাচগুলোর জন্য তাঁকে ডাকবেন রবার্তো মানচিনি। গতকাল যে এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন হয়েছিল এ নিয়ে, সেটি আনুষ্ঠানিক রূপ পাবে কয়েক ঘণ্টা পর। ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বালোতেল্লি এরই মধ্যে মানচিনির সঙ্গে নিজে কথা বলেছেন।’
অমিত প্রতিভা নিয়ে এলেও খামখেয়ালিপনায় সেটির নিদারুণ অপচয় হতে দিয়েছেন বালোতেল্লি নিজেই। ইন্টার মিলান, ম্যানচেস্টার সিটি, এসি মিলান, লিভারপুলের মতো ক্লাবে একসময় খেলেছেন, কোথাও ধারাবাহিক হতে পারেননি। মাঠের বাইরে অযাচিত আচরণেই বরং শিরোনাম হয়েছেন বেশি।
এরপর ফ্রান্সে নিস আর মার্শেইয়ের জার্সিতে কিছুটা ফিরে আসার আশা জাগিয়েছিলেন, কিন্তু সেটিও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ইতালিতে ব্রেসিয়ার হয়ে ফিরেও কিছু করতে পারেননি, পরে খেলেছেন দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব মনজায়। সেখান থেকে তুরস্কের ক্লাব আদানা দেমিরস্পরে গিয়ে আবার পুরোনো ঝলক দেখাচ্ছেন বালোতেল্লি।
ফুটবলের পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্য অনুযায়ী, তুরস্কের প্রিমিয়ার লিগ সুপারলিগায় এবার ১৯ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন বালোতেল্লি, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ৩ গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২১ ম্যাচে ৯ গোল, অ্যাসিস্ট ৫টি।
ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ফুটবল ইতালিয়া জানাচ্ছে, বালোতেল্লির নিজের ফর্মের পাশাপাশি ইতালির স্ট্রাইকার-সংকটও সুপার মারিওর ফেরার পথ সহজ করে দিয়েছে। চিরো ইম্মোবিলে আর আন্দ্রেয়া বেলোত্তিই এই মুহূর্তে ইতালির আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো পরিচিত নাম। কিন্তু ইম্মোবিলে লাৎসিওর ফর্ম কখনো ইতালি জাতীয় দলের জার্সিতে টেনে আনতে পারেননি, বেলোত্তি এই মুহূর্তে চোটের কারণে মাঠের বাইরে।
এর বাইরে আরও দুজন স্ট্রাইকারকে গত বছর দুয়েকে সুযোগ দিয়েছেন মানচিনি, কিন্তু সাসসুয়োলোর সেই দুই ফরোয়ার্ড জিয়ানলুকা সামাক্কা ও জিয়াকোমো রাসপাদোরির বয়স ২৩-এর নিচে, ইতালির জার্সিতে দুজনের মিলিত অভিজ্ঞতা মাত্র ৯ ম্যাচের।
সেই তুলনায় বালোতেল্লি তো ইতালির জার্সিতে পরীক্ষিত গোলশিকারিই। এ পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন সুপার মারিও। পাশাপাশি তাঁকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, সেটি মানচিনির চেয়ে ভালো তো আর কেউ জানেন না! ইন্টার মিলান ও ম্যানচেস্টার সিটিতে কোচের দায়িত্ব পালনের সময়ে বালোতেল্লিকে দলে পেয়েছিলেন মানচিনি।
এবার বালোতেল্লিকে নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন মানচিনি? রোনালদো আর পর্তুগাল তা নিশ্চিতভাবেই চাইবে না।