রোনালদোর মতো কোকাকোলা সরালে শাস্তি হতে পারে ফুটবলারদের
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজের মতো করে কাজটা করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সামনে রাখা কোকাকোলার বোতল সরিয়ে রেখেছিলেন। সবাইকে বলেছেন, সুস্থ থাকতে চাইলে পানি পান করতে। এ ঘটনায় কোমলপানীয় প্রতিষ্ঠান বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছে। ধীরে ধীরে ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও প্রাথমিকভাবে আধঘণ্টায় ইউরোর শেয়ারবাজারে ১.৬ শতাংশ দাম কমে গিয়েছিল কোকাকোলার।
এ প্রসঙ্গে কোকাকোলার পক্ষ থেকে তেমন তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। এক মুখপাত্র শুধু বলেছিলেন, স্পনসর প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা সেখানে পণ্য রেখেছেন। কারও পছন্দ না হলে সেটা না খেলেই হয়। তবে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও স্পনসররা বেশ খেপেছে, সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে।
উয়েফা গতকাল এক বিবৃতি দিয়ে দলগুলোকে তাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। স্পনসরদের সঙ্গে করা চুক্তি সম্মান না করলে শাস্তি দেওয়া হবে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রোনালদো যা শুরু করেছেন, সেটা যেন এক ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল। সোমবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো টেবিলে থাকা কোকাকোলার বোতল সরিয়ে বলেছেন ‘আগুয়া’ (পর্তুগিজ ভাষায় পানি) পান করতে। পরদিনই ইসলাম ধর্মের অনুসারী পল পগবা আরেক স্পনসরকে রাগিয়েছেন। জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচসেরা ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার টেবিল থেকে সরিয়েছেন বিখ্যাত বিয়ার ব্র্যান্ড হেইনিকেনের বোতল।
উয়েফার সঙ্গে হেইনিকেনের সম্পর্ক বহুদিনের। আর টেবিলে থাকা সে বোতলে থাকা পানীয় নাকি অ্যালকোহল ছিল না। কিন্তু পগবার তো সেটা জানা ছিল না, আর ব্র্যান্ড মূল্যে ধাক্কা তো লেগে গেছে ততক্ষণে।
অন্য ফুটবলাররাও এ নিয়ে মজা শুরু করেছেন। ইতালির ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি সংবাদ সম্মেলনে এসে কোকাকোলার বোতল সরিয়ে দিয়ে পানির বোতল রেখেছেন। আর তাঁর মজা পূর্ণ করতে আবার মুখে বলেছেন ‘আকুয়া’ (ইতালিয়ান ভাষায় পানি)। ওদিকে রাশিয়ান কোচ স্তানিস্লাভ চেরচেশভ ম্যাচ জেতার পর সংবাদ সম্মেলনে এসেই কোকাকোলার বোতল খুলে দুবার চুমুক দিয়েছেন। আরামে কোকাকোলার বোতলে চুমুক দিয়ে স্পনসরদের পক্ষে দাঁড়ানোর বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
কাল আবার ইউক্রেনের আন্দ্রি ইয়ারমোলেঙ্কো সংবাদ সম্মেলনে এসে রোনালদোর সঙ্গে মজা করতে চাইলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘একটা কাজ করতে পারি? রোনালদোকে কোকাকোলার বোতল সরিয়ে রাখতে দেখেছি। কিন্তু আমি কোকাকোলার বোতল রাখছি, এই যে হেইনিকেনের বোতলও এখানে রাখলাম। তোমরা (স্পনসর প্রতিষ্ঠানগুলো) আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারো।’ বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকুও স্পনসরদের তাঁর এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
গতকালই ইউরোর আয়োজকদের পক্ষ থেকে সব দলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে উয়েফা মনে করিয়ে দিতে চায়, টুর্নামেন্ট আয়োজন করার জন্য স্পনসর খুবই জরুরি একটা অংশ। ইউরোপজুড়ে ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের মধ্যে, এ সহযোগিতা প্রতিষ্ঠানের সাহায্য খুবই প্রয়োজনীয়।’
২০২০ ইউরোর টুর্নামেন্ট পরিচালক মার্টিন ক্যালেন রোনালদোর কাজটা সমর্থন করতে না পারলেও পগবার দিকটা সহানুভূতির সঙ্গেই দেখছেন, ‘এটা যদি ধর্মীয় কারণে করে থাকেন, তবে সেখানে বোতল রাখার দরকার নেই।’
এ ব্যাপারে উয়েফা কোনো শাস্তি দেবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্যালেনের দাবি, এ কাজ খেলোয়াড়ের ফেডারেশনের, ‘উয়েফা থেকে আমরা কখনো কোনো খেলোয়াড়কে সরাসরি জরিমানা করি না। এ কাজটা অংশগ্রহণকারী দেশের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমেই করা হয় এবং তারাই দেখবে এ নিয়ে কত দূর যাওয়া যায়।’
তাই বলে ভবিষ্যতে এমন কিছু করার ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ক্যালেন বলেছেন, ‘আমাদের নিয়মনীতির অংশগ্রহণকারী সব দলের স্বাক্ষর আছে। আমি সবাইকে তাদের দায়িত্বের কথা জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু জরিমানার সুযোগ সব সময়ই থাকে।’