রোনালদো-এমবাপ্পে সমানে-সমান

হতাশায় কেটেছে রোনালদোদের রাত।ছবি : রয়টার্স

ম্যাচ শুরুর আগে তা একটু হলেও ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াল। হাজার হোক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ইউরো চ্যাম্পিয়নদের খেলা, সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই খেলোয়াড়ের একজনের দলের বিপক্ষে খেলা এমন এক খেলোয়াড়ের দলের, যাঁর ভবিষ্যতে বিশ্ব শাসনের যোগ্যতা আছে। গত ইউরোর ফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই দল। তার পর প্রথম মোকাবিলা। কিন্তু ম্যাচটি হলো রীতিমতো ম্যাড়মেড়ে। গোলশূন্য ড্র’য়েই শেষ হয়েছে রোনালদো-এমবাপ্পে অর্থাৎ, পর্তুগাল-ফ্রান্সের মধ্যকার নেশনস লিগের ম্যাচ।

গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছিল দুই দলই। তাই গতকালকের এ ম্যাচ ছিল গ্রুপের শীর্ষস্থান দখলের লড়াই। পয়েন্টের লড়াইয়ে এই ম্যাচ শেষে দুই দল সমানে-সমান থাকলেও, গোল ব্যবধানে শীর্ষে উঠেছে রোনালদোর পর্তুগাল। ৪-৩-৩ ছকে খেলতে নেমে পর্তুগাল দল সাজিয়েছিল ঠিক এভাবে—উলভসের গোলরক্ষক রুই পাত্রিসিওর সামনে রক্ষণভাগে বর্ষীয়ান পেপে ও সদ্যই বেনফিকা থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়া সেন্টারব্যাক রুবেন দিয়াস। বাঁয়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের রাফায়েল গেরেইরো, ডানে বার্সা ছেড়ে কিছুদিন আগে উলভসে যোগ দেওয়া নেলসন সেমেদো। মিডফিল্ডে ছিলেন এবার পিএসজিতে যোগ দেওয়া দানিলো পেরেইরা, রিয়াল বেতিসের উইলিয়াম কারভালহো ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ব্রুনো ফার্নান্দেস।

এমন গতি দিয়েও পর্তুগালকে পরাস্ত করতে পারেননি এমবাপ্পে।
ছবি : রয়টার্স

আক্রমণভাগে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন আতলেতিকো মাদ্রিদের জোয়াও ফেলিক্স। তাঁকে মাঝে রেখে দুপাশে খেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও ম্যানচেস্টার সিটির বের্নার্দো সিলভা।

গ্রিজমানও ছিলেন নিষ্প্রভ।
ছবি : রয়টার্স

ওদিকে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম যে দলটিকে নিয়মিত খেলিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, সেই দলের দুজন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন কাল। ব্লেইজ মাতুইদি ও স্যামুয়েল উমতিতিই কেবল ছিলেন না। গোলরক্ষক উগো লরিস তো ছিলেনই, সামনে রিয়াল মাদ্রিদের রাফায়েল ভারান জুটি বেঁধেছিলেন পিএসজির প্রেসনেল কিমপেম্বের সঙ্গে। দুদিকে আতলেতিকো মাদ্রিদের লুকাস এর্নান্দেস (বামে) ও বায়ার্ন মিউনিখের বেঞ্জামিন পাভার (ডানে)। মাঝমাঠে চেলসির এনগোলো কান্তের দুপাশে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পল পগবা আর জুভেন্টাসের আদ্রিয়াঁ রাবিও। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডে বার্সেলোনার আতোয়াঁ গ্রিজমানকে রেখে স্ট্রাইকার হিসেবে ছিলেন চেলসির অলিভিয়ের জিরু আর পিএসজির এমবাপ্পে।

ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই জিরুকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ডিফেন্ডার রুবেন দিয়াস। ১২ মিনিটে মাঝমাঠের বাঁ প্রান্ত থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেসের একটা লব ডি-বক্সে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন ফেলিক্স, ফলে আক্রমণটা দানা বাঁধেনি। ১৭ মিনিটে রাবিওর ক্রস থেকে ডি-বক্সে পগবার মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা এমবাপ্পের কাছে। গোল হয়নি যদিও, পরে জানা যায় এমবাপ্পে অফসাইডে ছিলেন। ৩২ মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে গ্রিজমানের বাঁ-পায়ের একটা জোরালো শট আটকে দেন পাত্রিসিও। ৪৪ মিনিটে জিরুর একটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দেখা যায় এমবাপ্পের ঝলক। দুর্দান্তভাবে ডি-বক্সে ঢুকে গেলেও পাত্রিসিওকে হারাতে পারেননি তিনি। ৭৩ মিনিটে ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে বসেন পেপে, কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। ম্যাচের পুরোটা সময় এভাবেই একের পর এক সুযোগ নষ্ট করে গেছেন দুই দলের স্ট্রাইকাররা। রোনালদো তাঁর স্বভাবসুলভ ঝলক দেখাতে পারেননি। এমবাপ্পে মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠলেও দলকে জেতানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

ওদিকে একই ফল হয়েছে পোল্যান্ড-ইতালি ম্যাচেও। গোলশূন্য ড্র করেও পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের গ্রুপের শীর্ষেই আছে ইতালি। তৃতীয় স্থানে পোল্যান্ড। জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ডেনমার্ক। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের জয়টা ৩-০ গোলের। গোল পেয়েছেন ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন ও হফেনহেইমের স্ট্রাইকার রবার্ট স্কভ। বাকি গোলটা রুনার মার সিগুরইয়োনসনের আত্মঘাতী।

আগামী বুধবার সুইডেনের বিপক্ষে খেলতে নামবেন রোনালদোরা। ওদিকে ফ্রান্স খেলবে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে, একই দিনে।