‘রোনালদো সর্বকালের সেরা ফুটবলার’
কথাটা তিনি আগেও বলেছেন। একবার নয়, একাধিকবার। কিন্তু লোকটা তো জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, মনে যা আসে তা অকপটে বলতে কুণ্ঠা করেন না, সেটা একবার নয়, বারবার। নিজের খুব পছন্দের খেলোয়াড় বলেই কথাটা তাই আবারও বললেন ইব্রা—রোনালদোর সেরা সময়ে ‘সবাই’ তাঁর মতো খেলতে চেয়েছে।
এই রোনালদো অবশ্যই বর্তমান রোনালদো নয়। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সর্বকালের সেরার স্বীকৃতি দেননি এসি মিলান তারকা।
ইব্রা ক্যারিয়ারের শুরুতে যাঁকে আদর্শ মেনে এসেছেন, ব্রাজিলের সেই রোনালদো লুইস নাজারিও ডি লিমাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলে মনে করেন। সুইডেনের সাবেক ফরোয়ার্ড ইব্রার মতে, রোনালদোই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার।
ইউরোপা লিগে কাল রাতে রেড স্টার বেলগ্রেডের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করে মিলান। এ ম্যাচের আগে ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক স্ট্রাইকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইব্রা।
সর্বকালের সেরাদের তালিকায় এই সময়ের লিওনেল মেসি–ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়েও ‘ফেনোমেনন’কে এগিয়ে রাখছেন তিনি। ৩৯ বছর বয়সী ইব্রা মনে করেন, ২০০২ বিশ্বকাপ মাতানো রোনালদো ফুটবল খেলার ধারা পাল্টেছেন এবং তাঁর মতো প্রতিভা আর পাওয়া যায় না।
পিএসভি আইন্দহোফেন, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ মাতানো রোনালদোকে বরাবরই পছন্দ করেন ইব্রা। ব্রাজিলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৬২ গোল করা কিংবদন্তিকে নিয়ে ডিসকভারি প্লাসকে ইব্রা বলেন, ‘রোনালদো কেমন তা আমার না বললেও চলে। ফেনোমেনন! সব সময়ই বলেছি, কিছু খেলোয়াড় আছেন যাঁরা খেলাটা খেলে থাকেন, আর কিছু খেলোয়াড় আছেন যাঁরা নিজেরই খেলা। তাঁর খেলা দেখে সবাই তাঁর মতো খেলতে চেয়েছেন, তাঁর মতো হতে চেয়েছেন।’
অমিত প্রতিভাধর রোনালদোকে বিশ্লেষকেরা সর্বকালের সেরাদের কাতারে রাখেন। হাঁটুতে বড় দুটি চোট না পেলে রোনালদোর পেশাদার ক্যারিয়ার আরও বড় হতে পারত।
ইন্টারে খেলার সময় ১৯৯৯ সালে লেচ্চের বিপক্ষে হাঁটুতে চোট পান ৪৪ বছর বয়সী সাবেক এ স্ট্রাইকার। এরপর সেই অবিশ্বাস্য গতি এবং দৌড়ানো অবস্থায় চকিত ড্রিবলিংয়ের ধার আর আগের মতো থাকেনি রোনালদোর।
১৯৯৮ বিশ্বকাপের রোনালদো ও ২০০২ বিশ্বকাপের রোনালদোর মধ্যে তাই পার্থক্য থাকলেও শিরোপা ঠিকই ধরা দিয়েছিল।ক্যারিয়ারে কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারা রোনালদোকে সবাই বেশি মনে রেখেছেন তাঁর খেলার বৈশিষ্ট্যের জন্য।
ফ্রান্সের সাবেক ডিফেন্ডার মার্সেল দেজাইলি একবার বলেছিলেন, ‘শরীর বাঁকানো ডজের সঙ্গে স্টেপওভার—সেটি প্রতিবারই একই রকম, বাঁ দিক থেকে বের হবে, এটা জানা সত্ত্বেও ডিফেন্ডাররা ছিটকে পড়ত বারবার।’
এই দক্ষতায় মুগ্ধ ইব্রা তাই সোজাসাপ্টাই বললেন, ‘যেভাবে সে দৌড়াত, যেভাবে স্টেপওভার করত, যেভাবে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলত—কোনো সন্দেহ নেই, আমার কাছে সে–ই সর্বকালের সেরা ফুটবলার।’
পেশাদার ফুটবলে ৪৫২ ম্যাচে ২৯৬ গোল করেছেন রোনালদো। ক্যারিয়ারে জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ (১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলে স্কোয়াডে থাকলেও মাঠে নামেননি)। তিনবার ফিফা বর্ষসেরা এবং দুবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রোনালদো।
এর মধ্যে ২১ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বর্ষসেরার ট্রফি জিতে রেকর্ডও গড়েছেন। বার্সা ও ইন্টারের দিনগুলোয় রোনালদোকে থামানোর মতো ডিফেন্ডার ছিল না বললেই চলে।
১৮ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ১৩টি ট্রফিজয়ী রোনালদোকে ইব্রা সর্বকালের সেরার স্বীকৃতি দিয়েছেন তাঁর খেলার বৈশিষ্ট্যের জন্যই। ইব্রা নিজেই যেখানে নেদারল্যান্ডস, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সের ফুটবল মিলিয়ে জিতেছেন ৩১ ট্রফি।
২১ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারে ইব্রার গোলসংখ্যা তাঁর আদর্শ রোনালদোর চেয়ে বেশি—সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রায় ৮০০–র মতো ম্যাচ খেলে করেছেন ৫০০–র বেশি গোল।
শেষ চার দশকেই পেশাদার ফুটবলে গোল করা ইব্রা জানেন, তাঁর ক্যারিয়ারের যাত্রাপথেই ফুটবল অনেক পাল্টেছে, ‘এখন তরুণেরা পাঁচ মিনিট খেললেই তাদের গ্রেট হিসেবে দেখা হয়। পুরোনো ধাঁচের ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠায় আমি খুশি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। এখন খেলোয়াড়দের অনেকে প্রায় তেমন কিছু না করেই চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেয়ে থাকে।’