রোনালদো তো ইউরোপা লিগের সূচনা সংগীতই জানে না: ফার্ডিনান্ড
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়তে চান। এটা আর গুঞ্জনে আটকে নেই, খবর বলেই প্রমাণিত। শুধু তাঁকে কোন দলে দেখা যাবে, এটাই এখনো নিশ্চিত হওয়া বাকি। সম্ভাব্য ক্লাবের তালিকায় কম নাম আসেনি—বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজি, স্পোর্তিং লিসবন, চেলসি, এমনকি বার্সেলোনাও।
রোনালদোর বার্সেলোনায় যাওয়ার সম্ভাবনায় রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের ক্রোধের উদ্রেক হচ্ছে। ইউনাইটেডের সমর্থকদের অবস্থাও করুণ। একদিকে ক্লাব কিংবদন্তি ক্লাব ছাড়তে চাইছেন, আবার তাঁর সম্ভাব্য ক্লাব হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব চেলসির নামই সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে। এক মৌসুম আগেই ক্লাবে ফেরা রোনালদোকে নিয়ে তাই দ্বিধাবিভক্ত ইউনাইটেড-সমর্থকেরা।
রিও ফার্ডিনান্ডের সেই ঝামেলা নেই। একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর ইউনাইটেড ছাড়ার ইচ্ছাটা বুঝতে পারছেন তিনি। ইউনাইটেডে থাকলে যে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা হবে না রোনালদোর।
ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত প্রতিটি মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেছেন রোনালদো। ইউরোপের সেরা টুর্নামেন্টটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। গত মৌসুমে ইউনাইটেডে ফেরার পর ৬ গোল করে নিজের চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল সংখ্যা ১৪০-এ নিয়েছেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি ১৫ গোল পিছিয়ে আছেন তালিকার দুই নম্বরে।
এ মৌসুমে সে ব্যবধান কমে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা। গত মৌসুমে লিগে রোনালদোর ১৮ গোলের পরও লিগের সেরা চারে থাকতে পারেনি ইউনাইটেড। শেষ পর্যন্ত ষষ্ঠ হওয়ায় এবার ইউরোপা লিগই খেলতে হচ্ছে রেড ডেভিলদের। গত মৌসুমেই রোনালদো বলে দিয়েছিলেন, ছয় বা সাতে থাকার জন্য ইউনাইটেডে যাননি, তিনি যোগ দিয়েছেন শিরোপা জেতার জন্য।
কিন্তু এবার নতুন কোচ এরিক টেন হাগকে দায়িত্ব দিলেও দলবদলের বাজারে একটু নিশ্চুপ ইউনাইটেড। যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়ে ইউনাইটেডের দলটাকে নাকি রোনালদোর চোখে ম্যানচেস্টার সিটি বা লিভারপুলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল মনে হচ্ছে না। ক্লাবের মধ্যে শিরোপা জেতার কোনো চেষ্টা না দেখে নাকি বিরক্ত তিনি।
এ ব্যাপারে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন ফার্ডিনান্ড, ‘অবশ্যই সে খুশি নয়! আপনারা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ব্যাপারে কথা বলছেন! আমি বুঝতে পারছি না, ম্যান ইউনাইটেডে যা হচ্ছে তাতে রোনালদো খুশি না, এটা কীভাবে বড় খবর হয়। সে খুশি হতেই পারে না। আমিও হতাম না।’
সাবেক ইউনাইটেড ডিফেন্ডারের দাবি, শিরোপা জিততে অভ্যস্ত রোনালদোর মাঝারি মানের ক্লাবের মতো আচরণ সহ্য হবে না, এটাই স্বাভাবিক, ‘যারা ফুটবল ম্যাচ বা শিরোপা জিততে চায়, যারা জিতে অভ্যস্ত এবং প্রতিবছর লিগের শীর্ষে থাকার বা পুরস্কার জেতার চেষ্টা করে অভ্যস্ত, এমন একজনকে হঠাৎ সেটা করতে না দিলে, এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগেই উঠতে না পারলে, সে খুশি থাকবে এটা আশাই করতে পারেন না।’
ক্যারিয়ারে কখনো ইউরোপা লিগ না খেলা রোনালদোর ক্লাব ছাড়ার পক্ষে বা ক্লাবের ওপর বিরক্ত হওয়ায় কোনো দোষ দেখছেন না ফার্ডিনান্ড, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগে যেতে না পেরে সে মোটেও খুশি নয়, সে তো ইউরোপা লিগের সাউন্ড ট্র্যাক কেমন, সেটাই জানে না! সেটা যখন শুরু হবে, ও তো ভাববে, “আমি এখানে কোন মুদ্রায় নাচব?”’
প্রাক–মৌসুমে এখনো দলের অনুশীলনে যোগ দেননি রোনালদো। এ নিয়ে প্রতিদিনই খবর আসছে নতুন করে। পারিবারিক কারণে যোগ দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন রোনালদো, কিন্তু অনেকেই এটাকে দলবদলের চেষ্টা বলে ধরে নিচ্ছেন। ফার্ডিনান্ডের আপত্তি এখানেই। তাঁর ধারণা, রোনালদোর মতো পেশাদার ফুটবলার এমন আচরণ করতেই পারেন না।
‘মানুষ একটু অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছে। মানুষ যেভাবে প্রশ্ন রাখছে ওর (অনুশীলনে) না আসা নিয়ে এবং এ নিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ওর পরিবারের একজন ভালো নেই, এ কারণে অনুশীলন করছে না। এ দেশে খেলা সবচেয়ে প্রতিভাবান ও পেশাদার ফুটবলার ও। গত ১৫ বছরে আমাদের দেখা সবচেয়ে পেশাদার অ্যাথলেট। আর মানুষ এই লোকের পেশাদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বলছে সে কেন অনুশীলন মাঠে নেই’—ফার্ডিনান্ডের ক্ষোভ।
রোনালদো যদি ইউনাইটেড ছেড়েও যান, ফার্ডিনান্ডের এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ থাকবে না। কারণ, তিনি জানেন, ইউনাইটেডের মধ্যে শিরোপা জেতার ইচ্ছা দেখলে রোনালদো ক্লাব ছাড়তে চাইতেন না, ‘সে হয়তো চলে যাবে, ক্লাবের কিছু জিনিস নিয়ে সে হয়তো খুশি নয়, কিন্তু পেশাদারি আচরণের দিক থেকে? সে যেখানে আছে ওখানেই অনুশীলন করছে, আমরা সে ছবি দেখেছি। ওর পরিবার সেখানে, ওরা যেখানে থাকবে সেখানেওই তো ওর থাকা দরকার। আপনাকে এটা সম্মান করতেই হবে। ক্লাব কি আরেকটু ভালোভাবে ব্যাপারটা জানাতে পারত? সম্ভবত পারত।’
দলবদলের বাজারে ইউনাইটেড এখন পর্যন্ত লেফটব্যাক টাইরেল মালাসিয়াকে কিনেছে। মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের সঙ্গেও নাকি চুক্তি প্রায় পাকা। বার্সেলোনা থেকে আরেক মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকেও কেনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে ইউনাইটেড।
ফার্ডিনান্ডের ধারণা, এঁরাই যথেষ্ট নন, ‘রোনালদো হয়তো নিজের ইয়ট বা জেটে বসে রোদ পোহাচ্ছে। যখন সেখান থেকে বাস্তবে ফিরে দেখছে ম্যানচেস্টার সিটি আরলিং হরলান্ডকে নিচ্ছে, লিভারপুল দারউইন নুনিয়েজকে নিচ্ছে। কেলভিন ফিলিপসও সিটিতে গেছে। সে হয়তো তখন ভাবছে, “এদের ধরতেই আমাদের অনেক কষ্ট করতে হতো। আর এখন আরও বড় বড় দলবদল করে ওরা আমাদের নাগালের আরও বাইরে চলে যাচ্ছে।” আর্সেনাল খেলোয়াড় কিনছে। আর রোনালদো ভাবছে, “আমার দল কখন শুরু করবে?” আমরা সবাই জানে নতুন কিছু লোক দরকার। কিন্তু সে তো ক্লাবের আচরণে এমন কিছু দেখছে না।’