ফুটবলে নিরপেক্ষ বলে নাকি সাধারণত কেউ থাকেন না। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দলকে সমর্থন করেই ফুটবল দেখতে বসেন। তবে নিরপেক্ষ কেউ থেকে থাকলেও এ মৌসুমে তাঁর রিয়াল মাদ্রিদের ভক্ত বনে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চ্যাম্পিয়নস লিগে নকআউট পর্বের প্রতি রাউন্ডেই যেভাবে অবিশ্বাস্য সব প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে কার্লো আনচেলত্তির দল, তাতে মুগ্ধ হননি এমন কজনই-বা আছেন!
বার্সেলোনা সমর্থকদের অনেকেরই হয়তো নিজেদের দুর্দিনের বিপরীতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের এমন অবিশ্বাস্য অর্জনে গা জ্বলেছে। তবে সবার যে অনুভূতি এক নয়, তা বোঝা যাচ্ছে বার্সেলোনারই ডিফেন্ডার দানি আলভেজের কথায়। রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যাবর্তনে মুগ্ধ ৩৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক নিজেই। মুগ্ধ তিনি রিয়ালের প্রাণভোমরা করিম বেনজেমার খেলায়ও। এমনই মুগ্ধ যে রিয়ালের ফরাসি তারকার ব্যালন ডি’অরের দাবির পক্ষে কথা বলছেন বার্সার আলভেজই!
একের পর এক অবিশ্বাস্য গল্প লেখার সর্বশেষ ধাপে গত বুধবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগোর ৯০ ও ৯১তম মিনিটের দুই গোলে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে আসা রিয়াল শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে বেনজেমার গোলে দুই লেগ মিলিয়ে জিতেছে ৬-৫ ব্যবধানে, উঠে গেছে ফাইনালে। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের পর রিয়ালের প্রশংসায় মেতেছিলেন আলভেজও।
রিয়ালের বারবার এভাবে ফিরে আসার পেছনে অনেকে ভাগ্যের হাত দেখলেও বার্সার ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক সোজাসুজিই বলে দিয়েছিলেন, ‘জীবনের মতো ফুটবলেও ভাগ্য বলে কিছু নেই, বন্ধু! হয় আপনি খেলাটাতে দাপট দেখাবেন, নতুবা খেলাটা আপনার ওপর ছড়ি ঘোরাবে।’ পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ান তরুণ রদ্রিগোর প্রশংসা করতে গিয়ে ব্রাজিলকে নিয়ে বললেন, ‘আহা! ব্রাজিলিয়ানদের ছাড়া যে ফুটবলের কী হবে!’
রদ্রিগোর প্রশংসা শেষে এবার বেনজেমার প্রশংসায় মেতেছেন দানি আলভেজ। গত মৌসুমেও বেনজেমার ব্যালন ডি’অরের দাবি উঠেছিল মাদ্রিদ ও ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিওনেল মেসি, রবার্ট লেভানডফস্কি আর জর্জিনিওর পেছনে চতুর্থই হতে পেরেছিলেন বেনজেমা। কিন্তু এ মৌসুমে ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে বেনজেমার মতো করে সম্ভবত আর কারও নাম উচ্চারিত হয়নি।
হবেই-বা কী করে? এ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ স্প্যানিশ লিগ জিতেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছে—এত সব সাফল্যের পেছনে তো বেনজেমারই অবদান। সংখ্যা বলবে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ৪০ ম্যাচে ৪১ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে আরও ১৩টি গোল করিয়েছেন বেনজেমা। সংখ্যার চেয়েও বেশি যা মনে থাকবে, তা হলো চ্যাম্পিয়নস লিগে তাঁর অবিশ্বাস্য সব কীর্তি।
শেষ ষোলোতে অসাধারণ হ্যাটট্রিকে পিএসজির বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনের গল্প লেখার পর শেষ আটেও চেলসির মাঠে হ্যাটট্রিক। শেষ আটের দ্বিতীয় লেগে চেলসির প্রত্যাবর্তনের গল্প থামিয়ে উল্টো রিয়ালের মহাকাব্য রচিত হয়েছে ৯৬তম মিনিটে বেনজেমারই গোলে। এরপর সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে রিয়ালকে ফাইনালে তোলা গোলসহ দুই লেগে বেনজেমা করেছেন তিন গোল।
এমন একজনের ব্যালন ডি’অরের কথা উঠবে না তো কার উঠবে! বার্সা-রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে দানি আলভেজও তাই বেনজেমার পক্ষে ঢোল বাজাচ্ছেন।
সোজাসুজিই বলে দিয়েছেন, ‘বেনজেমা ব্যালন ডি’অরের ওপর দাবিটা আরও বাড়াচ্ছে। খেলার দিক থেকে, অন্য অনেক ভাবেও ও রিয়ালকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে ওরা কিছুদিন আগে ছিল না। ও দলটাকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, ওরই ব্যালন ডি’অর প্রাপ্য।’
আলভেজ কথা বলেছেন নিজের দল আর নিজেকে নিয়েও। তাঁর চোখে বার্সেলোনার সমস্যাটা খেলোয়াড়দের মানসিক সাহসে। বার্সেলোনার উন্নতির জন্য কী দরকার, সেটিও বলে দিয়েছেন আলভেজ, ‘বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে আরও উন্নতি করা দরকার, খেলোয়াড়দের মনের দিক থেকে আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার।’
কিন্তু আগামী শুক্রবার ৩৯-এ পা দিতে যাওয়া আলভেজের কি বার্সায় থাকা হবে? এ মৌসুম শেষেই বার্সার সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষ, সেটি নবায়ন হওয়া নিয়েও সন্দেহ আছে। তবে নিজের বার্সায় থাকার প্রসঙ্গে আলভেজের কথা, ‘আমি বয়সের দিকে তাকাই না, আমি দেখি, নিজের মধ্যে কতটা অনুপ্রেরণা কাজ করছে, সেটি।’