রিয়ালের বাড়া ভাতে আবারও ছাই দিতে চাইছে পিএসজি
স্পেনের মাদ্রিদে ছোট্ট একটা ফ্রেঞ্চ কলোনি বানাতে চাইছেন জিনেদিন জিদান। রিয়াল মাদ্রিদে আগ থেকেই ছিলেন রাফায়েল ভারানে ও করিম বেনজেমা। গত মৌসুমে যোগ দিয়েছেন ফারলাঁ মেন্দি। দুই বেলজিয়ান থিবো কোর্তোয়া ও এডেন হ্যাজার্ড ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলেন। এতেই না থেমে আগামী মৌসুমে আরও তিন ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড় আনার পরিকল্পনা করছেন জিদান। তবে তাঁর স্বপ্নে বড় বাধা হয়ে উঠতে চাইছে প্যারিস সেন্ট জার্মেই।
প্রথম যেই ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড়কে জিদান দলে টানতে চাইছেন, তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজির এই ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডকে জিদান কত পছন্দ করেন সেটা কখনো লুকানোর চেষ্টা করেননি। এরপর জিদানের তালিকায় আছেন দায়োত উপামেকানো। লাইপজিগের এই ডিফেন্ডারকেই রামোসের উত্তরসূরি হিসেবে পছন্দ হয়েছে রিয়াল কোচের। আক্রমণ ও রক্ষণ সামলানোর পর এ দুইয়ের মাঝে সংযোগ রক্ষা করতে তাঁর পছন্দ হয়েছে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে। আর এখানেই বাধ সাধতে চাইছে পিএসজি।
এখনো আঠারো পূর্ণ হয়নি, কিন্তু ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত কম বয়সে ফ্রান্স দলের হয়ে কারও অভিষেক হয়নি। অভিষেকেই মুগ্ধ করেছেন। প্রতিপক্ষের মাঝমাঠকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন ঠান্ডা মাথায়। রেনেঁর জার্সিতে তাঁর খেলা যাঁরা দেখেছেন তাঁদের জন্য এ অবশ্য নতুন নয়। ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষিক্ত কামাভিঙ্গা গত এক মৌসুম ফ্রেঞ্চ লিগে প্রতি সপ্তাহেই এমন কিছু করে দেখিয়েছেন। এ কারণেই ১৭ বছরের এক ফুটবলারকে পাওয়ার জন্য এক মৌসুম ধরে চেষ্টা চালিয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে কাসেমিরোর উত্তরসূরি হিসেবে ফুটবল দুনিয়ায় এই কিশোরের চেয়ে ভালো কাউকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
এ মৌসুমেই কামাভিঙ্গা রিয়ালে খেলবেন, এ ব্যাপারে সবাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। ফ্রেঞ্চ লিগ কাপে আমিয়ঁর বিপক্ষে এক ম্যাচে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় তাঁর কাছে জার্সি চেয়ে নিয়েছিলেন। কারণ পরের মৌসুমেই তো এই মিডফিল্ডার রিয়ালে চলে যাবেন, তখন তো আর কামাভিঙ্গার বিপক্ষে খেলা হবে না, জার্সিও আর অদলবদল করার সুযোগ পাওয়া যাবে না। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ ও রেনেঁর চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই মৌসুমে তাঁকে পাওয়া হচ্ছে না জিদানের।
এমবাপ্পেকে একাদশের নিশ্চয়তা দিয়ে টেনে নিয়েছিল পিএসজি। কামাভিঙ্গার ক্ষেত্রেও রিয়ালকে হতাশ করার পরিকল্পনা পিএসজির
এ মৌসুমে না পাওয়া গেলেও আগামী মৌসুমে তো পাওয়া যাবে—এমন আশা নিয়েই বুক বেঁধেছে রিয়াল। কিন্তু সে আশাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে পিএসজি। ফ্রান্সের সেরা দল তারা। দেশটির সেরা তারকাদের নিজেদের কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা তো থাকেই দলটির। ২০১৭ সালে তো এমনভাবেই এমবাপ্পেকে নিয়ে এসেছে। সে সময়ও রিয়ালের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছিল পিএসজি। রিয়ালের সঙ্গে কথা পাকাপাকি হয়েই ছিল মোনাকোর, কিন্তু তখন ১৮ বছর বয়সী এমবাপ্পেকে বাড়তি বেতন ও নিজের শহরেই খেলতে পারার সুবিধা দেখিয়ে টেনে নিয়েছিল পিএসজি। কামাভিঙ্গার ক্ষেত্রেও রিয়ালের পরিকল্পনা হাতিয়ে নিতে চাইছে পিএসজি।
এমন এক মিডফিল্ডারকে পেলে যে দলের জন্য ভালো সেটা স্বীকার করেছেন কোচ টমাস টুখেলও। দলে কামাভিঙ্গাকে পাওয়ার সম্ভাবনার নিয়ে প্রশ্নে পিএসজির জার্মান কোচ বলেছিলেন, ‘অবশ্যই ও দারুণ সংযোজন হবে। সে লিগ আঁ-র অন্যতম সেরা খেলোয়াড় এবং দারুণ ভবিষ্যৎ। কিন্তু যে খেলোয়াড় আমার দলে নেই, তাকে নিয়ে কথা বলি না আমি। সে খুব ভালো এক ক্লাবে খেলে যারা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে। আমরা তো মনোপলি খেলছি না (টাকা থাকলেই কিনে ফেলা); এটা মোটেও এমন না। তবে (কেনার ব্যাপারে) আমি না বলব না।’
চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত হওয়ায় আর্থিক নিরাপত্তা পেয়ে গেছে রেনেঁ। তাই এ মৌসুমে প্রয়োজনীয় কোনো খেলোয়াড়কে বিক্রি না করলেও চলবে তাদের। কামাভিঙ্গাও ক্লাবের হয়ে অন্তত এক মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে চান। কিন্তু আগামী মৌসুমে তাঁকে পেতে লড়াইয়ে নামবে রিয়াল ও পিএসজি। জিদানের নাম ফ্রেঞ্চ যেকোনো খেলোয়াড়কে টানতে ব্যবহার করে রিয়াল। ওদিকে পিএসজির আছে ‘দেশে থেকেই বড় ক্লাবে খেলা’র অস্ত্র।
পিএসজির একাদশে নিয়মিত জায়গা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকবে কামাভিঙ্গার। কিন্তু জিদানের মিডফিল্ডে মদরিচ-ইসকোদেরও বেঞ্চে থাকতে হয় প্রায়। হামেস রদ্রিগেজ তো জায়গা না পেয়ে দলই ছেড়েছেন। তিন বছর আগে এমবাপ্পের রিয়ালের বদলে পিএসজিকে বেছে নেওয়ার পেছনেও একটা বড় কারণ ছিল একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। আগামী মৌসুমে কামাভিঙ্গাও সে কাজটা করতে পারেন।
শেষ পর্যন্ত যাই হোক, এমবাপ্পের পর আবারও এক খেলোয়াড়কে দলে টানতে পিএসজি-রিয়াল লড়াই হবে। এবার কে জিতবে?