রিয়ালে সাফল্যের জন্য বেনজেমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত রোনালদোর
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর প্রতি কেন এত বিরাগ আন্তোনিও কাসানোর, শুধু তিনিই ভালো বলতে পারবেন!
এর আগেও নানা সময়ে রোনালদোকে খোঁচা দিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন। কখনো রোনালদোকে স্বার্থপর বলছেন, তো কখনো বলেছেন জুভেন্টাসের রোনালদোকে সই করানো উচিত হয়নি। আবার সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকার সেরা পাঁচেও রোনালদোকে রাখবেন না বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। সেসব তা-ও মাস কয়েক আগের কথা, কিছু হয়তো বছর এক-দেড়েক পুরোনো। কদিন আগের কথা, কাসানো বললেন, বেনজেমা রোনালদোর চেয়েও শক্তিশালী নাম্বার নাইন!
সেই কাসানো যখন রোনালদোকে নিয়ে কিছু বলেন, সেটি যে রোনালদোর প্রশংসাসূচক কিছু হবে না, তা অনুমান করে নেওয়াই যায়। এবারও বেনজেমার প্রসঙ্গ ধরে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে খোঁচা মেরেছেন কাসানো। সাবেক ইতালিয়ান স্ট্রাইকারের কথা, রোনালদোর উচিত প্রতি সকালে প্রার্থনায় বসে বেনজেমাকে ধন্যবাদ দেওয়া।
কেন? রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদোর সাফল্যে যে বেনজেমারই অবদান দেখছেন কাসানো। ইতালির জার্সিতে ৩৯টি ম্যাচ খেলা স্ট্রাইকার ২০০৬ সাল থেকে দুবছর রোনালদো-বেনজেমাদের সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদেও খেলেছেন, যদিও এর মধ্যে এক মৌসুম সাম্পদোরিয়ায় ধারে ছিলেন। কিন্তু রিয়ালে কাসানো যা সেভাবে পাননি, তা-ই দুহাত ভরে পেয়েছেন রোনালদো—গোল আর শিরোপা। কাসানো শুধু একবার লিগ জিতেছেন রিয়ালে। রোনালদো রিয়ালে ৯ বছরে লিগ তো দুবার জিতেছেনই, চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন চারবার—এর মধ্যে টানা তিনবার!
সে সাফল্য এসেছে মূলত রোনালদোর গোলে চড়েই। কিন্তু কাসানোর চোখে রোনালদোর এত এত গোল আর সাফল্যের পেছনে বড় অবদান ছিল বেনজেমারই! বোবো টিভিতে কাসানো বললেন, ‘ফুটবলে গোল আর শিরোপাই সবকিছু নয়। জিদান গোল খুবই কম করেছে, কিন্তু সে তো ইতিহাসের সেরাদের একজন। (হুয়ান রোমান) রিকেলমেও।’
এর আগেও অনেকবার বুঝিয়েছেন, রোনালদো শুধু গোলই করেন। রিয়ালে রোনালদোর গোল করার সুবিধার জন্য বেনজেমা নিজের খেলা বিসর্জন দিয়েছেন, বুদ্ধিদীপ্ত দৌড়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে রোনালদোর জন্য জায়গা ফাঁকা করে দিয়েছেন...সে তো অনেকের বিশ্লেষণেই উঠে এসেছে। সংখ্যাও বলে, রিয়ালে রোনালদোর ৪৭টি গোল গড়ে দিয়েছেন বেনজেমা। সংখ্যা বলে না তাঁর ক্লান্তিহীন দৌড়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে রোনালদোর জন্য ফাঁক বের করার কথা।
সংখ্যা না বললেও কাসানো বলছেন। রোনালদোর গোলের চেয়েও বেনজেমার অবদান বেশি বোঝাতে এবার কাসানোও বললেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উচিত সকালে উঠে প্রার্থনায় বসা; বলা, “আমার সঙ্গে খেলার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, বেনজেমা।”’
হঠাৎ বেনজেমার সঙ্গে এত তুলনার কারণ কী, সেটি বুঝতে অবশ্য আইনস্টাইন হতে হয় না। রোনালদো ২০১৮ সালে রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ার পর থেকেই তো রিয়ালের প্রাণভোমরা বেনজেমা, তবে এই মৌসুমে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার।
মৌসুমে ৩৮ ম্যাচে ৩৮ গোল, চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দুই হ্যাটট্রিক পিএসজি ও চেলসির বিপক্ষে, বলতে গেলে রিয়ালের সেমিফাইনালে উঠিয়েছেন একা। এত গোলের সঙ্গে যোগ করে নিন, বেনজেমা গোল করিয়েছেন আরও ১২টি! কে বলবে তাঁর বয়স ৩৪!
রোনালদোকে খোঁচার পর কাসানোর মুখেও বেনজেমার প্রশংসা, ‘বেনজেমা গত বছর ও এই বছরে যা করছে...এই বছর গোল করা ও করানো মিলিয়ে ৫০ গোলে অবদান ওর, গত বছরে অবদান ছিল ৩০-এর বেশি গোলে। রোনালদো একজন গোলদাতা, সব সময়ই গোল পাবে, কিন্তু ও একটু ভিন্ন প্রকৃতির। বেনজেমা একজন নিয়মিত গোল পাওয়া সেন্টার ফরোয়ার্ড, তবে ও জিদানের মতোও। ও একজন নাম্বার নাইন, আবার নাম্বার টেনও। ও আসলে একজন নাম্বার নাইন অ্যান্ড আ হাফ!’
অনেকের মতেই, রোনালদো রিয়াল ছাড়ার পর নিজের চেনা ছন্দ ফিরে পেয়েছেন বেনজেমা। সংখ্যাও সে যুক্তিতে সমর্থন দেয়। রোনালদো রিয়ালে থাকার সময়ে ৯ বছরে ১৫৫ গোল করা বেনজেমা ২০১৮ সালে রোনালদো ক্লাব ছাড়ার পর ১৮৪ ম্যাচে গোল করেছেন ১২৫টি। এ সময়ে রোনালদো জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মিলিয়ে গোল করেছেন ১১৯টি। বেনজেমা যেখানে এই মৌসুমে রিয়ালের লিগ শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগেও দলকে উঠিয়েছেন সেমিফাইনালে, রোনালদোর ইউনাইটেড শিরোপাশূন্য মৌসুম কাটানোর শঙ্কায়।
সময়টা এখন বেনজেমারই!