রিয়াল মাদ্রিদের ‘১ নম্বর গলফার’ বেল
তিনি ১ নম্বর হবেন, এ আশাই তো করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর উত্তরসূরি হবেন, সে আশাতেই তো তাঁর জন্য দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে রিয়াল। ক্লাবের সর্বকালের সেরা গোলদাতা রোনালদোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর আশাতেই। ভাবা হয়েছিল, রোনালদো চলে গেলে দলের সেরা ফুটবলারের জায়গাটা বুঝে নেবেন গ্যারেথ বেল।
রিয়ালের সে আশা পূরণ হয়নি। দলে ব্রাত্য হয়ে উঠেছিলেন উল্টো। ফুটবল মাঠের চেয়ে গলফেই যেন বেশি নজর তাঁর। চোট আর অনীহা মিলিয়ে জিনেদিন জিদানের চোখে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠেছিলেন। গত মৌসুমে তো রিয়াল থেকে ধারেই চলে গিয়েছিলেন নিজের পুরোনো ডেরা টটেনহামে। এবার ফিরলেও চোটে পড়েছেন আবার। খেলা থেকে দূরে আছেন। এমন অবস্থাতে সাংবাদিকদের নতুন করে যা বলেছেন, তাতে সমর্থকদের ভালোবাসা পাওয়ার অবশ্য কোনো সম্ভাবনা নেই। নিজেকে রিয়াল মাদ্রিদের ‘১ নম্বর গলফার’ বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, ভরা গ্যালারির সামনে খেলার চেয়ে গলফ খেলাই নাকি কঠিন!
গলফের প্রতি বেলের ভালোবাসা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথাও ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালে রিয়াল সমর্থকদের খেপিয়ে তুলেছিলেন বেল। মাদ্রিদে ভালো করছেন না, চোটের জন্য খেলতে পারছেন না প্রায়ই; এ অবস্থায় জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। সে ম্যাচে জয়ের পর তাঁর সতীর্থরা এক ব্যানার নিয়ে এসেছিলেন, ‘ওয়েলস, গলফ, মাদ্রিদ। প্রাধান্যের তালিকাটা এমন।’ মাদ্রিদের চেয়ে গলফ বেলের কাছে প্রাধান্য বেশি পায়, এমন কথা রসিকতার সুরে বলা হলেও সমর্থকদের ক্ষোভ আরও বেড়েছিল।
জিনেদিন জিদানের অধীন বেলের ক্যারিয়ার এরপর প্রায় থেমেই গিয়েছিল। গত মৌসুমে তাঁকে টটেনহামে পাঠায় রিয়াল। এ মৌসুমে কার্লো আনচেলত্তি কোচ হওয়ায় ভাবা হয়েছিল, এবার অন্য রূপে দেখা যাবে তাঁকে। চুক্তির শেষ বছরে এসে জ্বলে উঠবেন ৩২ বছর বয়সী উইঙ্গার। আনচেলত্তির অধীন শুরুটা ভালোই হয়েছিল। তিন ম্যাচ খেলে একটা গোলও করেছেন। কিন্তু গত ২৮ আগস্ট রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে সেই যে চোট পেয়েছেন, আর মাঠে নামা হয়নি।
এখন পর্যন্ত যা খবর, নভেম্বরের আগে তাঁর মাঠে নামার কোনো সম্ভাবনা নেই। চোটের কারণে ফুটবল না খেললেও তাঁর ভালোবাসার গলফের ব্যস্ততা কমেনি। সপ্তাহান্তের স্প্যানিশ ওপেনে উপস্থিত হয়েছিলেন বেল। সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রিয়াল মাদ্রিদের সেরা গলফার কে? উত্তরে নিজের নামই বলেছেন বেল, ‘রিয়াল মাদ্রিদে মাত্র দুজন গলফ খেলে, তাই কোনো সন্দেহ নেই, আমিই দলের ১ নম্বর গলফার। আরেকজন হলো থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু সে আমার চেয়ে ভালো নয়।’
রিয়াল মাদ্রিদে গত তিনটি বছর খুব বাজে কেটেছে তাঁর। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু–ভর্তি দর্শক তাঁকে দুয়োও দিয়েছেন খেলায় অসন্তুষ্ট হয়ে। কিন্তু এমন বৈরী পরিস্থিতিও নাকি তাঁকে অতটা চাপে ফেলে না, যতটা চাপে ফেলে গলফ, ‘যখন আশপাশে কোনো গলফ টুর্নামেন্ট হয়, আমি দেখতে যাই। এই আবহ, ভিড়, আবহাওয়া দারুণ লাগে। আর তাঁরা এত দারুণ খেলেন! এই চাপের মধ্যেও এত ভালো খেলেন, অবিশ্বাস্য। ফুটবল এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। সেখানেও চাপ আছে, কিন্তু সেখানে একজন রেফারিও থাকে। এদিক থেকে গলফ অনেক বেশি মানসিক দক্ষতার খেলা। ৮০ হাজার দর্শকের সামনে খেলার চেয়ে এখানে আমি বেশি চাপ অনুভব করি।’