রিয়াল মাদ্রিদের বছর শুরু হারে
২০২১ সালে লিগে মাত্র ২ ম্যাচ হেরেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২২ সালের প্রথম ম্যাচেই আগের বছরের ব্যর্থতার অর্ধেক স্বাদ পেয়ে গেল রিয়াল। নতুন বছরের শুরুটা হার দিয়ে করেছে লিগের শীর্ষে থাকা দলটি। আজ হেতাফের মাঠে ১-০ গোলে হেরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১২ সালের পর লিগে এই প্রথম হেতাফের কাছে হেরেছে লস ব্লাঙ্কোরা। এই হারের পরও অবশ্য ২০ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
লিগে আগের ১৮ ম্যাচে মাত্র ১২ গোল করেছিল হেতাফে। পয়েন্ট পাওয়ার জন্য নিজেদের রক্ষণ গুছিয়ে প্রতি–আক্রমণেই মন দেয় দলটি। ওদিকে লিগে একমাত্র দল হিসেবে ম্যাচপ্রতি দুই গোল করে রিয়াল মাদ্রিদ। এই ম্যাচে হেতাফের জয়ের একটি উপায়ই ছিল, সেটা হলো লস ব্লাঙ্কোদের কোনো ভুল করা।
সেটাই হয়ে গেল ম্যাচের ৯ মিনিটে। নিজেদের ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়েছিলেন এদের মিলিতাও। কাছেই ছিলেন এনেস উনাল। তবে অতটা কাছে ছিলেন না যে চাপ অনুভব করতে হবে। মিলিতার পেছনেই ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। ডান পাশে ছিলেন লুকাস ভাসকেজ। মিলিতাও চাইলেই এঁদের পাস দিতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে নিজেই বলের ওপর দক্ষতা দেখাতে গেলেন। ওদিকে ক্রমাগত প্রেস করছিলেন উনাল। জয় হলো উনালেরই। বল দখলে নিয়ে শট নিলেন তুর্কি ফরোয়ার্ড, কোর্তোয়ার পক্ষে সেটা ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
এই গোলেই ম্যাচের মীমাংসা হয়ে গেছে। হেতাফের পরিকল্পনাই ছিল নিজেদের বক্স গুছিয়ে আক্রমণে যাওয়া। ৯ মিনিটেই পাওয়া উপহার পেয়ে আর দুবার ভাবেনি কিকে সানচেজ ফ্লোরেসের দল। তবু ১৪ মিনিটে আবারও রিয়াল রক্ষণ গোলমাল পাকিয়ে আরেকটি গোল উপহার দিতে বসেছিল। কিন্তু সেবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে রিয়াল।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নামতে পারেননি আজ। আর তাতেই যেন রিয়াল মাদ্রিদ তাদের সব ধার হারিয়ে ফেলেছে। এই মৌসুমে নিজেদের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ খেলার জন্য এই ম্যাচকেই বেছে নিয়েছিলেন করিম বেনজেমা ও টনি ক্রুস। দলের তিন সেরা খেলোয়াড়ের এমন ‘অনুপস্থিতি’র পর রিয়ালের পক্ষে ম্যাচে ফেরা কঠিন হতো। পুরো ম্যাচে বল রিয়ালের দখলেই ছিল। ৭৪ শতাংশ সময় নিজেদের পায়েই বল রেখেছিল। কিন্তু পোস্টে মাত্র চারবার শট নিতে পেরেছে রিয়াল।
পুরো ম্যাচেই ছন্দ ছাড়া খেলেছে রিয়াল। থ্রু পাস দেওয়ার পর দেখা গেছে, যাঁর উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে, তিনি দৌড় দেননি। বল সঠিক সময়ে পাস দেওয়া হয়নি, যখন পাস দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তখন সেই খেলোয়াড় জায়গামতো ছিলেন না। একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে আনচেলত্তিও হলুদ কার্ড দেখেছেন। এই মৌসুমে আনচেলত্তির দল ডি-বক্স ঘিরে রাখা দলের বিপক্ষে গোল বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রিয়াল কতটা অসহায়, সেটা জানিয়েছে অপ্টা জো। এ মৌসুমে চারটি দলের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি বলের দখল ছিল রিয়ালের। কাদিজ, শেরিফ, ওসাসুনা ও হেতাফে—এই চার ম্যাচেই জয় পেতে ব্যর্থ রিয়াল।
এই হারে আরেকটা অশনিসংকেত জেগে উঠতে পারে রিয়াল সমর্থকদের মনে। ২০১৪-১৫ মৌসুমেও দুর্দান্ত গতিতে লিগ শুরু করেছিল রিয়াল। আনচেলত্তির দল টানা ২২ জয়ের পর ২০১৫ সাল শুরু করেছিল হার দিয়ে। ২০২১–এর শেষে টানা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত রিয়াল ২০২২ সাল শুরু করল হার দিয়েই। এই হারে সেভিয়াকে লিগ টেবিলে ব্যবধান কমানোর সুযোগ করে দিয়েছে রিয়াল। ১৮ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট পাওয়া সেভিয়া পরের দুই ম্যাচ জিতলেই রিয়ালের সঙ্গে ব্যবধান ২-এ নেমে আসবে।