কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ ১১ জুলাই। ইউরোতে অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
গত বিশ্বকাপের চমক রাশিয়া ইউরো খেলতে যাচ্ছে তেমন কিছু করার আশা নিয়েই। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম বা খেলোয়াড়দের অবস্থা সে আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে না তেমন। কোচ স্তানিস্লাভ চের্চেসভ অবশ্য আশাবাদী হতে পারেন, গত বিশ্বকাপের আগেও দলের অবস্থা ঠিক এমনই ছিল! দুর্বল, এলোমেলো। কেউ আশা রাখেনি রাশিয়ার ওপর। কিন্তু স্বাগতিকেরা ঠিকই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল।
দল: রাশিয়া
ফিফা র্যাঙ্কিং: ৩৮
দলে আছেন যাঁরা
গোলরক্ষক
আন্তোন শুনিন (দিনামো মস্কো), মাতভেই সাফানভ (কুবান ক্রাসনোদার), ইউরি দিউপিন (রুবিন কাজান)
সেন্টারব্যাক
ইগর দিভিভ (সিএসকেএ মস্কো), গিওর্গি ঝিকিয়া (স্পার্তাক মস্কো), ফেদর কুদরিয়াশভ (আন্তালিয়োস্পোর), আন্দ্রেই সেমেনভ (আখনভ গ্রোজনি)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
মারিও ফের্নান্দেস (সিএসকেএ মস্কো), ভাচেস্লাভ কারাভায়েভ (জেনিত)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
ইউরি ঝিরকভ (জেনিত)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
দিমিত্রি বারিনভ (লোকোমোতিভ মস্কো), দানিল ফোমিন (দিনামো মস্কো), দালের কুজিয়ায়েভ (জেনিত), মাকসিম মুখিন (সিএসকেএ মস্কো), মাগোমেদ ওজদোয়েভ (জেনিত), রোমান জবনিন (স্পার্তাক মস্কো)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
আলেকসান্দার গোলোভিন (মোনাকো), আলেক্সেই মিরানচুক (আতালান্তা), রিফাত ঝেমালেতদিনোভ (লোকোমোতিভ মস্কো), দেনিস মাকারভ (রুবিন কাজান)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
ডেনিস চেরিশেভ (ভ্যালেন্সিয়া), আন্দ্রিই মস্তোভয় (জেনিত), আলেক্সেই ইওনোভ (ক্রাসনোদর)
স্ট্রাইকার
আর্তেম জিউবা (জেনিত), আলেক্সান্দার সোবোলেভ (স্পার্তাক মস্কো), আন্তোন জাবোলোতনি (সিএসকেএ মস্কো)
কোচ
স্তানিস্লাভ চের্চেসভ
অধিনায়ক
আর্তেম জিউবা
ইউরোতে সেরা সাফল্য
চ্যাম্পিয়ন (সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন, ১৯৬০)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
বেলজিয়াম (১২ জুন)
ফিনল্যান্ড (১৬ জুন)
ডেনমার্ক (২১ জুন)
শক্তি
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা স্ট্রাইকার আর্তেম জিউবা। সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার এই স্ট্রাইকার বল পায়ে যতটা দক্ষ, তার চেয়ে ঢের দক্ষ হেড করায়। পাকা গোলশিকারির মতো বক্সে ওত পেতে থাকেন। তাঁর মাথা লক্ষ্য করে ক্রস দিতে পারলেই বাজিমাত। গোলে শট নিতে পারলে খুব বেশি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না তাঁর। মিরানচুক, গোলোভিনের মতো মিডফিল্ডাররাও নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষের চিন্তার কারণ হতে পারেন।
গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ ঘরের মাটিতে খেলবে রাশিয়া। সে দুই ম্যাচ থেকেই মূলত পয়েন্ট পাওয়ার আশা করবে তারা।
গোলোভিন, মারিও ফের্নান্দেস ও মিরানচুকের সেট পিসের ওপর নির্ভর করবে রাশিয়ার কৌশলের একটা বিরাট অংশ। সেটপিস থেকে পাওয়া বলে জিউবা কিছু করে দেখাতে পারলেই, ব্যস!
দুর্বলতা
গত বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে স্প্যানিশ স্ট্রাইকার ইয়াগো আসপাসের পেনাল্টি পা দিয়ে ঠেকিয়ে রাতারাতি নায়ক বনে গিয়েছিলেন ইগর আকিনফিভ। দলকে দেড় দশক ধরে সেবা করে যাওয়া এই গোলকিপার নেই এবার। তাঁর জায়গায় সুযোগ পাওয়া শুনিন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কেমন করতে পারেন, এ নিয়ে সংশয় আছে।
মূল একাদশের অনেক খেলোয়াড়ই ত্রিশোর্ধ্ব। ‘বুড়ো’দের দল ডেনমার্ক কিংবা বেলজিয়ামের প্রেস কীভাবে সামলাতে পারে, সেটাও চিন্তার বিষয়। সার্বিয়া কিছুদিন আগে রাশিয়াকে ৫-০ গোলে হারিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, এ দলের অবস্থা অতটা ভালো নয়।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৩-৫-২)
সবার আগে রক্ষণ, রাশিয়ার মূলনীতি এটাই। গত বিশ্বকাপের অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এবার নেই, তাঁদের অনুপস্থিতিতে কোচ চের্চেসভ আরও বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে যেতে পারেন। আন্তোন শুনিনের সামনে তিনজন সেন্টারব্যাক থাকবেন। সাবেক অধিনায়ক গিওর্গি ঝিকিয়ার সঙ্গে অভিজ্ঞ কুদরিয়াশভ ও সেমেনভের খেলা মোটামুটি নিশ্চিত। দুই উইংব্যাক হিসেবে খেলবেন ডানদিকে মারিও ফের্নান্দেস ও বাঁ দিকে ইউরি ঝিরকভ কিংবা ভাচেস্লাভ কারাভায়েভের মধ্যে একজন।
ওপরে একক স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন অধিনায়ক আর্তেম জিউবা। ২০১৮ বিশ্বকাপে রাশিয়ার নায়ক ব্যক্তিগত অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে গত বছর সমালোচনার জন্ম দিয়ে দল থেকে বিদায় নিলেও ইউরো উপলক্ষে তাঁকে দলে ডেকেছেন চের্চেসভ। গোল করার পাশাপাশি এই স্ট্রাইকারের কাজ হবে বল ধরে রেখে পাশে থাকা দ্রুতগতির কোনো উইঙ্গার বা মিডফিল্ডারকে বক্সে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া।
গত বিশ্বকাপে যে কাজটা ভালোভাবে করেছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার উইঙ্গার ডেনিস চেরিশেভ, এবার হয়তো তাঁকে সেই ভূমিকায় দেখা যাবে না। ওই কাজটা করার জন্য হয়তো আতালান্তার মিরানচুক কিংবা মোনাকোর গোলোভিনকে নেওয়া হবে দলে। রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে দুজন থাকবেনই। এই ভূমিকায় জায়গা পাওয়ার জন্য লড়বেন ওজদোয়েভ, জবনিন ও বারিনভ।
আমরা টুর্নামেন্ট জিততে চাই। সত্যিকারের ক্রীড়াবিদদের লক্ষ্য সব সময় সেটাই থাকে। তবে আমরা জিততে চাই বলাটা অনেকটা তুরস্ক বা ডেনমার্ক ইউরো জিততে চায়, অমন বলার সমান।
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
রাশিয়ার মূল লক্ষ্য হবে কোনোভাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা। সে লক্ষ্যে ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গেই মূল লড়াইটা হবে তাদের। বিশ্বকাপে যেমন সবার প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল দলটা, এবারও অমন কিছু করার আশাই করবে রাশিয়ানরা। যদিও বয়সী স্কোয়াড সে লক্ষ্য কতটুকু পূরণ করতে পারবে, সে প্রশ্ন তোলাই যায়।