রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচার চেষ্টাও করুক জামালরা
বাফুফের রুচি একটু বেড়েছে! সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ মানেই ছিল প্রতিপক্ষ ভুটান, শ্রীলঙ্কা বা নেপাল দল। এবার সে বলয় থেকে বের হয়ে কিরগিজস্তানে তিন জাতি টুর্নামেন্ট খেলার ‘সাহস’ দেখিয়েছে বাফুফে। টুর্নামেন্টে স্বাগতিক কিরগিজস্তান দলের সঙ্গে অন্য দলটি ফিলিস্তিন। বাজে ফলাফলের শঙ্কা ভুলে র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে খেলার আগ্রহ প্রকাশের জন্য বাফুফের প্রশংসা এবার করতেই হয়।
র্যাঙ্কিংকে বলা যায় একটা দেশের ফুটবলের আয়না। সেখানে যথাক্রমে ১০১ ও ১০২ নম্বরে অবস্থান করছে কিরগিজস্তান ও ফিলিস্তিন। ৫ ও ৭ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ফিলিস্তিন ও কিরগিজস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ। এর বাইরে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কিরগিজ অলিম্পিক দলের বিপক্ষে আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আপাতত এই তিন ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১ থেকে ১৬ অক্টোবর মালদ্বীপে অনুষ্ঠেয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নিজেদের তৈরি করা।
২৩ সদস্যের দলে রাখা হয়েছে কানাডাপ্রবাসী রাহবার ওয়াহেদ খান ও ফ্রান্সপ্রবাসী তাহমিদ ইসলামকে। সাফের আগে তাঁদের পরখ করে দেখতে চান কোচ জেমি ডে। ভালো মানের প্রবাসী খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে এ দুজনকে জাতীয় দলে ডাকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সেটি বন্ধ করতে পারে রাহবার ও তাহমিদের পারফরম্যান্সই। কাল ভোররাতে বিশকেকে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা তাঁদের। এর আগে ঢাকা থেকে আজ দুপুরেই বিশকেকে পৌঁছে গিয়েছেন জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণরা। আগামীকাল থেকে শুরু হবে দলের অনুশীলন।
বিশকেকে পা রেখেও তপুর চোখ মালদ্বীপে। সেখান থেকে বাফুফের পাঠানো ভিডিও বার্তায় তপু বলেছেন, ‘লম্বা ভ্রমণ শেষে আমরা কিরগিজস্তান পৌঁছেছি। সবাই ক্লান্ত। কোচও সেটা বুঝেছেন। তাই কোনো অনুশীলন নেই। কাল থেকে অনুশীলন শুরু হবে। এখানে এসেছি তিনটা ম্যাচ খেলতে। আমার মনে হয়, এই ম্যাচগুলো দলের জন্য ইতিবাচক বিষয়। সামনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ আছে, সেটার প্রস্তুতিতে এই ম্যাচগুলো কাজে আসবে। এখান থেকে ভালো ও মন্দ বিষয়গুলো খুঁজে বের করা যাবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে যেকোনো প্রীতি ম্যাচ ও আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া মানেই কোচের মুখে খেলোয়াড়দের পরখ করা ও খেলোয়াড়দের মুখে অভিজ্ঞতা অর্জনের গল্প। অথচ এ ধরনের টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারলে যে মূল টুর্নামেন্টে আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করা যায়, সেদিকে খুব একটা আগ্রহ নেই! রথ দেখার সঙ্গে কলাটাও যে বেচা যায়, সে চেষ্টা করে দেখতে পারেন জামাল বাহিনী। এই স্পৃহাটা পাওয়া গিয়েছে ডিফেন্ডার তারিক রায়হান কাজীর কথায়, ‘এখানে এসে ভালো লাগছে। আবহাওয়াও অনেক ভালো। এখানে আমরা জয়ের জন্যই তিনটি ম্যাচ খেলব।’
যদিও কাজটা সহজ নয়। প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিনের নাম শুনলে সবার আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশের কথা চোখের সামনে ভেসে উঠলেও ফুটবলীয় চিত্রটা ভিন্ন। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুর ও ইয়েমেনকে পেছনে ফেলে গ্রুপে তৃতীয় হয়েছে তারা। সর্বশেষ দুই ম্যাচের একটিতে ইয়েমেনকে ৩-০ ও সিঙ্গাপুরকে তারা হারিয়েছে ৪-০ গোলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বশেষ খেলেছিল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে খর্ব শক্তির ফিলিস্তিন দলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল জামাল ভূঁইয়ারা। শক্তিতে কিরগিজস্তানও অনেক এগিয়ে। এই দলটির বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশের।
আগে পারেনি বলে যে এবার পারা যাবে না, তা নয়। এবার সাফের প্রস্তুতি পর্বে রথ দেখার সঙ্গে কলা বেচার চেষ্টাটাও হোক জামালদের।