‘যুদ্ধে সবার সামনে বুক পেতে দেওয়ার মানুষ মেসি নয়’
কারও চোখে তিনি সময়ের সেরাদের একজন। কারও চোখে অবিসংবাদিত সেরা। কারও চোখে সমকাল ছাপিয়ে সর্বকালেরই সেরাদের একজন তিনি। কারও চোখে সেখানেও ‘সেরাদের একজন’ নন, সেরাই!
তবে প্রসঙ্গ যখন সর্বকালের সেরা, মার্কো ফন বাস্তেন সেখানে তিনজনের ছোট্ট তালিকায় মেসিকে আর রাখেন না। ১৯৮৮ ইউরোজয়ী নেদারল্যান্ডসের স্ট্রাইকারের চোখে, সর্বকালের সেরা তিনে শুধু পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর তাঁর আদর্শ ইয়োহান ডি ক্রুইফই থাকবেন। আর মেসি? ফন বাস্তেনের চোখে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক ভালো খেলোয়াড়, তবে ‘যুদ্ধের ময়দানে সবার সামনে থাকার মতো’ নেতা তিনি নন। সেটিই ডাচ কিংবদন্তির কাছে পিছিয়ে রাখছে মেসিকে।
মেসির নেতৃত্ব নিয়ে এমন সমালোচনা অবশ্য ইদানীং কমই শোনা যায়। আর্জেন্টিনাকে নিয়ে একের পর এক ফাইনালে হারের সময়ে মেসির নেতৃত্বগুণ নিয়ে সমালোচনা হতো অনেক। একই ঢঙে সমালোচনা হতো বার্সেলোনায় তাঁর শেষ দুই-তিন বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগে দলের ভরাডুবির কারণেও।
কিন্তু ক্লাব ফুটবলে মেসি এখন আর বার্সেলোনার নন, পিএসজিতে গেছেন, এখনো বছরও গড়ায়নি। সে কারণে সেটির সাফল্য-ব্যর্থতার ভার সেভাবে একা মেসির ওপর চাপানো হয় না। আর আর্জেন্টিনার জার্সিতে? এক সময়ে যেটি মেসির জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিল, সেটিই যেন এখন একান্ত অপার সুখের উৎস।
লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনার কোচ হওয়ার পর থেকে দলটা মেসির পাশে তরুণ-প্রতিভাবানদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন। সে দলের অনুশীলনের, খেলোয়াড়দের একসঙ্গে সময় কাটানোর ছবিতেই বোঝা যেত, খেলোয়াড়েরা সময়টা উপভোগ করেন।
সুখী ড্রেসিংরুমে শিরোপাও এসেছে। কোপা আমেরিকা জিতেছে আর্জেন্টিনা, কদিন আগে জিতেছে লা ফিনালিসিমা। দি পল, মার্তিনেজ, লো সেলসো, পারেদেসরাও বারবারই মেসির ‘নেতৃত্ব গুণ’কেই সেটির পেছনে বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সব মিলিয়েই ‘নেতা’ মেসিকে নিয়ে সমালোচনা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু ফন বাস্তেনের কথার পর মেসির নেতৃত্ব গুণ নিয়ে আলোচনা আবার বাড়বে নিশ্চিত।
ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনে সর্বকালের সেরা নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছিল, সেখানে মেসিকে নিয়ে ফন বাস্তেন বললেন, ‘মেসিও অসাধারণ খেলোয়াড়, তবে ম্যারাডোনার সব সময় দলের ভেতরে অন্য রকম একটা ব্যক্তিত্ব থাকত। মেসি যুদ্ধের ময়দানে সবার সামনে বুক পেতে দেওয়ার মতো মানুষ নয়।’
তা রেকর্ড সাতটি ব্যালন ডি’অর জেতা মেসিকে তাঁর চোখে সর্বকালের সেরা তিনে না রাখার ব্যাখ্যা তো দিয়েছেন, তার আগে সর্বকালের সেরা তিনের ঘোষণাও তো ছিল। ফন বাস্তেনের সেই সেরা তিন কে? ‘পেলে, ম্যারাডোনা ও ক্রুইফ আমার চোখে ইতিহাসের সেরা তিন খেলোয়াড়। ছোটবেলায় আমি ক্রুইফের মতোই হতে চাইতাম। আমার বন্ধু ছিলেন তিনি। অনেক মনে পড়ে তাঁকে। পেলে আর ম্যারাডোনাও অবিশ্বাস্য ছিলেন।’
ওই তিনজনের পর মেসিকে নিয়ে বলেছেন ফন বাস্তেন, তবে সেখানেই তাঁর সর্বকালের সেরার আলোচনা থেমে থাকেনি, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, (মিশেল) প্লাতিনি বা (জিনেদিন) জিদানের কথাও ভুলে গেলে চলবে না।’