ম্যারাডোনাকে কেন ওভাবে গোল উৎসর্গ করেছেন মেসি?
লিওনেল মেসি দারুণ খেলেছেন। গোল করেছেন, বার্সেলোনাও কাল নিজেদের মাঠে ওসাসুনাকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-০ গোলে। তবে সব ছাপিয়ে কাল ক্যাম্প ন্যু-তে সবচেয়ে বেশি চোখে লেগে আছে মেসির গোল উদ্যাপনের ওই দৃশ্যটিই। গোল উদ্যাপনে যে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড!
বার্সার জার্সির ভেতরে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের ‘১০’ নম্বর জার্সি পরেই নেমেছিলেন মেসি। গোল করে বার্সার জার্সি খুলে নিওয়েলসের জার্সিটা পরা অবস্থায় আকাশে দিকে দুহাত তুলে ধরেন। ম্যারাডোনাকে সম্মান জানাতে এভাবে নিওয়েলসের জার্সিই কেন পরেছেন মেসি? সেটির ব্যাখ্যা জানিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা। ২০১৩ সালে আর্জেন্টাইন দৈনিক টিওয়াইসি স্পোর্টসে মেসির এক সাক্ষাৎকারে লুকিয়ে প্রশ্নটার উত্তর।
নিওয়েলস মেসির পুরোনো ক্লাব। ১৩ বছর বয়সে বার্সায় আসার আগে কৈশোরটা ওই ক্লাবেই কাটিয়েছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও নিওয়েলসে খেলেছেন ম্যারাডোনাও। আর সাত বছর আগে টিওয়াইসি স্পোর্টসে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছিলেন, নিওয়েলসে ম্যারাডোনার প্রথম ম্যাচের দিন বাবার সঙ্গে গ্যালারিতে গিয়েছিলেন মেসি!
দিনটা ছিল ৭ অক্টোবর, ১৯৯৩। বার্সেলোনা, নাপোলি আর সেভিয়ার হয়ে ইউরোপ অধ্যায় শেষ করে নিওয়েলসের জার্সি গায়েই চাপিয়েই আবার আর্জেন্টিনায় ফিরেছেন ম্যারাডোনা। ইকুয়েডরের ক্লাব এমেলেকের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে সেদিন নিওয়েলসের জার্সিতে অভিষেক ছিয়াশি বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির। গ্যালারিতে অন্য সবার সঙ্গে সেদিন শিহরিত ছিলেন ছয় বছরের ছোট্ট মেসিও।
‘খুব বেশি কিছু মনে নেই আমার, খুব ছোট ছিলাম তখন। তবে এমেলেকের বিপক্ষে তাঁর অভিষেকের দিন মাঠে ম্যারাডোনাকে খেলতে দেখেছিলাম আমি’—টিওয়াইসি স্পোর্টসে সাক্ষাৎকারটিতে বলেছিলেন মেসি। নিওয়েলসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউই সেদিনটা ভুলতে পারেন না, এখনো নিওয়েলসকে বুকে বয়ে নিয়ে চলা মেসিরও ভোলার কোনো কারণ নেই।
দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনার হাত ধরে সেদিন নিওয়েলসের জার্সি গায়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন ম্যারাডোনা। গ্যালারিতে তখন ‘মারাদোওওওওওও...’ ‘মারাদোওওওওওওও...’ চিৎকারে কান পাতা দায়। ম্যাচটা সেদিন নিওয়েলস জিতেছিল ১-০ গোলে, ৬৭ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটা ম্যারাডোনারই। গোলটা করেছিলেনও কীভাবে? গোলের ঢংয়ে দুজনের কী আশ্চর্য মিল!
ওসাসুনার বিপক্ষে কাল ম্যাচের ৭৩ মিনিটে মেসি বক্সের বাইরে থেকে গোলটা করেছিলেন বার্সার হয়ে, সেদিন নিওয়েলসের হয়ে ম্যারাডোনার গোলটাও ছিল বক্সের বাইরে থেকে শটেই। দুজনই গোলটা করেছেন কয়েকজন ডিফেন্ডারকে এড়ানো দৌড়ের পর! গোল করে সম্মান জানাতে হলে বুঝি এভাবে একই ঢংয়ে গোলও করতে হয়!
ম্যারাডোনা তো ১০ নম্বর জার্সিই পরতেন নিওয়েলসে, কাল ম্যাচের সময়ই তাই বার্সার জার্সির নিচে নিওয়েলসের ১০ নম্বর জার্সি পরে নামেন মেসি। সেদিন ম্যারাডোনা যেরকম জার্সি পরেছিলেন, ঠিক সেরকম জার্সি। গোল পাওয়ার পর বার্সার জার্সিটা খুলে রাখলেন মেসি, তাঁর গায়ে নিওয়েলসের ১০ নম্বর জার্সি। প্রার্থনার মতো ভঙ্গিতে দুহাত ওপরে তুললেন, নিওয়েলসের জার্সিতে ম্যারাডোনাও এভাবে গোল উদ্যাপন করেছিলেন।
নিওয়েলসে ম্যারাডোনার অধ্যায়টা খুব বেশি সময়ের নয়। মাত্র সাতটি ম্যাচ খেলেছিলেন, এর মধ্যে দুটি প্রীতি ম্যাচ। সাত ম্যাচে ম্যারাডোনা গোল করেছিলেন ১টি, করিয়েছিলেন আরও ১টি। কিন্তু ওই সময়ের স্মৃতিটাই সে সময়ের ৬ বছরের মেসির মনে গেঁথে ছিল ভালোভাবেই!
নিওয়েলসে ম্যারাডোনার অভিষেক ম্যাচটা অবশ্য আরেকটি কারণেও মনে থাকবে মেসির। ইংলিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জোনাথান উইলসন একটি তথ্য কদিন আগে জানিয়েছেন। সেটি এই, নিওয়েলসে ম্যারাডোনার অভিষেক ম্যাচের বিরতিতে এক ছোট্ট ছেলেকে বল নিয়ে কারিকুরি করতে মাঠের মাঝে নিয়ে আসা হয়। সেই ছেলের নাম? লিওনেল মেসি।