‘মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশও এখন শক্তিশালী’
‘আইস বাথ’ বেশ ভয় পান মারিয়া মান্দা, মাসুরা পারভীন, শামসুন্নাহার,মনিকা চাকমারা। বরফ মেশানো পানি ভরা বিশাল ড্রামে ডুব দেওয়া—অনুশীলনের পর বেশ কঠিন ব্যাপার এটি। বরফ পানিতে নামতে কেই–বা চায়! কিন্তু কাল মালয়েশিয়াকে ৬–০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর আজ এই ‘কঠিন’ ব্যাপারটিও উপভোগ করলেন তাঁরা। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুশীলনে সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তাররা আজ সারাক্ষণই ছোটখাটো খুনসুটিতে মেতে রইলেন। চেহারাতেই বোঝা যাচ্ছিল, কতটা নির্ভার হয়ে অনুশীলন করছিলেন মেয়েরা।
নারী ফুটবলের ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মালয়েশিয়ার অবস্থান ৮৫তম। বাংলাদেশ ১৪৬তম। ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা দলকে উড়িয়ে দিয়ে পাওয়া জয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে অনেক। এমন জয়ের পর র্যাঙ্কিংটা স্রেফ একটা সংখ্যাই মনে হচ্ছে মিডফিল্ডার সানজিদা আক্তারের কাছে, ‘আসলে সবাই র্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবে। সবাই বলে ওদের র্যাঙ্কিং এগিয়ে। বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং অনেক খারাপ, মালয়েশিয়ার বিপক্ষে না–ও জিততে পারে বাংলাদেশ। অনেকেই অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। ওদের র্যাঙ্কিং ভালো হলে কী হবে, আমরাও এখন শক্তিশালী দল।’
১৪ জুন এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দলকে ৪–১ গোলে হারিয়েছে মালয়েশিয়া। গতকালের জয়ে সেই হারের দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলতে চাইলেন সানজিদা, ‘ভাইয়াদের কিছুদিন আগে ওরা হারিয়েছিল। এই জয়ে সেই দুঃখটা ভুলতে চেয়েছি আমরা।’
বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা বরাবরই পারফরম্যান্সের ধারবাহিকতা ধরে রেখেছে। কিন্তু জাতীয় দলে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন সাবিনারা। ৯ মাস আগে খেলা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের কথাই ধরা যাক। গত বছর সেপ্টেম্বরে এএফসি ওমেন্স এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের জালে দুই ম্যাচে গুনে গুনে ১০ গোল দিয়েছিল জর্ডান ও ইরান। কিন্তু সানজিদার কণ্ঠে এবার আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া, ‘এর আগে ছোট ছোট কিছু ভুলের কারণে ম্যাচ হারতে হতো আমাদের। কিন্তু আমরা সেই ভুলগুলো শুধরে নিয়েছি। এখন আমরা মাঠের খেলায় সেটা প্রমাণের চেষ্টা করছি।’
আগামী আগস্টে নেপালে অনুষ্ঠিত হবে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বড় জয়ে সাফেও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন সানজিদা, ‘সাফে খেলার আগে এত বড় একটা ম্যাচ জিতলাম। এটা তো অবশ্যই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। আগস্টে সাফেও ভালো পারফরম্যান্স করার চেষ্টা করব।’
অবশ্য এক ম্যাচ জিতেই আত্মতৃপ্তিতে ভাসতে চান না বাংলাদেশ দলের স্ট্রাইকার কৃষ্ণা রানী সরকার, ‘গতকালের চেয়েও পরশুর ম্যাচটা ভালো খেলতে চাই। আমরা দর্শকদের আরও ভালো খেলা উপহার দেব। মাঠে আরও বেশি দর্শক এলে বেশি অনুপ্রেরণা পাব আমরা। এখনই কোনো উদ্যাপন করতে চাই না। শেষ ম্যাচ জিতেই আমরা উদ্যাপন করতে চাই।’