মেসির '৬০০' রাঙালেন আলকাসের!
গোলসংখ্যা বিবেচনায় লিওনেল মেসির সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ কোন দল? পরিসংখ্যান বলছে, সেভিয়া—৩০ ম্যাচে ২৯ গোল। ন্যু ক্যাম্পে আজ সেভিয়ার বিপক্ষে মেসির গোল করাটা তাই মোটামুটি প্রত্যাশিতই ছিল। ভক্তদের এই প্রত্যাশা মেসি মেটাতে না পারলেও বার্সেলোনার হয়ে গড়েছেন দারুণ এক মাইলফলক। তবে দলকে জেতানোর কাজটি সেরেছেন পাকো আলকাসের!
ন্যু ক্যাম্প কয়েক মৌসুম ধরেই সেভিয়ার কাছে ‘অজেয়’ দুর্গ। লা লিগায় বার্সার এ মাঠে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে তারা জয়ের মুখ দেখেনি। জয় না হোক, আজ অন্তত পয়েন্ট ভাগাভাগির সুযোগ পেয়েছিল দলটি। কিন্তু আলকাসের তা হতে দেননি। বার্সার প্রথম একাদশের হয়ে মাঠে নেমেই সুযোগের দারুণ সদ্ব্যবহার করেছেন এ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। ২৩ মিনিটে সেভিয়া ডিফেন্ডারের ভুলের সুযোগ নিয়ে প্রথমে এগিয়ে দিয়েছেন দলকে। এরপর দল যখন সমতায়, তখন এনে দিয়েছেন জয়সূচক গোলও। তাঁর জোড়া গোলে সেভিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে এবার লিগে অপরাজিত থাকার ধারাও ধরে রাখল বার্সা। ১১ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে ভ্যালভার্দের দল।
বার্সার হয়ে এটা ছিল মেসির ৬০০তম ম্যাচ। কাতালান ক্লাবটির কোচ আর্নেস্তো ভ্যালভার্দের মতে, মেসির এ মাইলফলক ‘দৈত্যকার’—যার সাক্ষী হয়ে থাকতে এদিন ন্যু ক্যাম্পে বৃষ্টি মাথায় নিয়েও হাজির ছিল প্রায় ৭০ হাজার দর্শক। কিন্তু ম্যাচের দুই অর্ধেই মেসি গোলের সুযোগ পেলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি, উল্টো যোগ করা সময়ে দেখেছেন হলুদ কার্ড। তবে মেসি না পারলেও আলকাসের বার্সার প্রথম একাদশের হয়ে মাঠে নামার ‘বিরল’ সুযোগ লুফে নিয়েছেন।
২৪ বছর বয়সী এ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এবার বার্সার হয়ে মাঠে নামার সুযোগ তেমন একটা পাননি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এটা ছিল বার্সার ১৮তম ম্যাচ। এর মধ্যে আলকাসের খেলেছেন মাত্র ৬ ম্যাচ। পরিসংখ্যানটা পাল্টে দিতেই হয়তো আজ বেশ মরিয়া ছিলেন তিনি। ২৩ মিনিটে লুই সুয়ারেজের উঁচু করে বাড়ানো বল গিয়ে পড়ে সেভিয়া লেফট ব্যাক সার্জি এসকুয়ের্দোর পায়ে। বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি তিনি। এ সুযোগে বেশ কাছাকাছি দূরত্ব থেকে মৌসুমের প্রথম গোলটি পেয়ে যান আলকাসের।
বিরতির পর ৫৯ মিনিটে গুইদো পিজারের গোলে সমতায় ফেরে সেভিয়া। তবে মাত্র ৬ মিনিটের জন্য। ৬৫ মিনিটে ইভান রাকিতিচের ক্রস থেকে বার্সার জয়সূচক গোলটি এনে দেন আলকাসের। বার্সা কোচ ভ্যালভার্দে শিষ্যের এই দারুণ পারফরম্যান্সের প্রতিদান দিয়েছেন, ঠিক এর পরের মিনিটেই তাঁকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে! যোগ করা সময়ের তিন মিনিটের মাথায় এসকুয়ের্দোর ওপর হুড়মুড় করে পড়ে হলুদ কার্ড দেখেন মেসি। এটুকু ছাড়া গোটা ম্যাচেই খেলেছেন নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে।
২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর পোর্তোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে বার্সার হয়ে অভিষেক ঘটেছিল মেসির। প্রায় ১৪ বছরের এ সময়ে বার্সার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৬০০ ম্যাচে তাঁর গোলসংখ্যা ৫২৩, অ্যাসিস্টসংখ্যা ২৩৪ এবং ৩৯টি হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে জিতেছেন মোট ৩০টি ট্রফি। অর্থাৎ একটি শিরোপা জিততে মেসিকে গড়ে খেলতে হয়েছে মাত্র ২০টি করে ম্যাচ! এই ৬০০ ম্যাচের মধ্যে ৪২৫ ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেছেন মেসি। ৬৯ ম্যাচে হারের পাশাপাশি ড্র করেছেন ১০৫ ম্যাচে। বার্সার হয়ে শুধু জাভি হার্নান্দেজ (৭৬৭) ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাই (৬৪২) তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। সূত্র: বিবিসি, এএস