মেসির বার্সেলোনা ছাড়ায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন কোমান
রোনাল্ড কোমানের রীতিমতো রাগ হচ্ছে। এই মৌসুমের শুরুতেই ক্লাব ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিকে হারিয়েছে বার্সেলোনা। দলের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় আঁতোয়ান গ্রিজমানকে ধারে পাঠানো হয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদে। যাকে রাইটব্যাক পজিশনের ভবিষ্যৎ বলে টানা হয়েছিল, মাত্র যোগ দেওয়া সেই এমারসনকে বিক্রি করে দিয়েছে। রীতিমতো অগোছালো এক দল নিয়ে লড়াইয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোমানকে।
ফলও মিলেছে। এমন দল নিয়ে লিগের শুরুতেই দৌড় থেকে ছিটকে গেছে বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকেও ১৭ বছর পর ছিটকে পড়েছে গ্রুপ পর্বে। অক্টোবরেই তাই চাকরি হারিয়েছেন কোমান। সে দায়িত্ব পেয়েছেন জাভি। নতুন কোচকে লড়াই করার মতো দল জোগাড় করতে বেশ চেষ্টা চালাচ্ছেন সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা। সাড়ে পাঁচ কোটি ইউরোতে ফেরান তোরেসকে কিনে এনেছে বার্সেলোনা। মুফতে পাওয়া গেছে দানি আলভেজ, পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াংয়ের মতো খেলোয়াড়দের।
অর্থের অভাবকে কারণ দেখিয়ে মেসিকে ছেড়ে দেওয়ার পর বার্সেলোনার এভাবে খেলোয়াড় টানার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দেখে বিস্মিত হচ্ছেন কোমান। তাঁর দাবি, মেসিকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে বার্সেলোনা সভাপতির অন্য কোনো কারণ ছিল।
মেসির বার্সেলোনা ছাড়া নিয়ে আচমকা এমন তথ্য জানানোর ইচ্ছা হলো কেন কোমানের? এ প্রশ্ন জাগতেই পারে। মেসির সঙ্গে অন্যায় হয়েছে আর সে চিন্তা কোমানকে ঘুমাতে দিচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন নয়। চাকরি হারানোর পর এ নিয়ে এত দিন মুখ খোলেননি কোমান। অবশেষে ডাচ পত্রিকা এডির সঙ্গে কথোপকথনে বার্সেলোনা থেকে তাঁর ছাঁটাই প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন কোমান। বার্সেলোনার সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে কিংবদন্তি তিনি, কিন্তু কোচ হিসেবে নিজের সে পরিচয়ে দাগ ফেলে দিয়েছেন। খেলার ধরনে সমর্থকদের বিরক্তির উদ্রেক করেছেন। আর শেষ দিকে টানা ব্যর্থতা তো চাকরিই কেড়ে নিল তাঁর।
এ প্রসঙ্গে কোমানের দাবি, বার্সেলোনা তাঁকে পর্যাপ্ত সময় দেয়নি। যেটা পাচ্ছেন বর্তমান কোচ জাভি। মেসির মতো একজনকে হারানোর পর গুছিয়ে ওঠার পর্যাপ্ত সময় নাকি পাননি কোমান। ওদিকে জাভিকে ক্লাব যেভাবে খেলোয়াড় এনে দিচ্ছে, সেটা দেখে তাঁর মনে সন্দেহ জেগেছে, যে যুক্তিতে মেসিকে ক্লাব থেকে বাইরে পাঠানো হয়েছে, সে যুক্তিতে কোনো গলদ ছিল লাপোর্তার।
এডিকে কোমান বলেছেন, ‘ক্লাবের উচ্চমহল থেকে জোর করা হচ্ছিল বলেই আমি কিছু খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছি, যাতে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা ঠিক থাকে। কিন্তু যখন দেখবেন, মেসিকে ছেড়ে দেওয়ার পরই তারা ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দিয়ে কাউকে কিনছে, তখন মনে হতে বাধ্য এখানে অন্য কিছু হচ্ছে। মেসিকে তাহলে ক্লাব ছাড়তে হলো কেন?’
কোমান বিদায় নেওয়ার পর বার্সেলোনার খেলায় বেশ উন্নতি হয়েছে। স্প্যানিশ সুপার কাপ কিংবা কোপা দেল রে থেকে বাদ পড়েছে, চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু লা লিগায় ঠিকই চারে উঠে এসেছে দলটি। ইউরোপা লিগেও প্লে অফ পর্ব পেরিয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছে।
ফেব্রুয়ারিতে চারটি ভিন্ন ম্যাচে চার গোল করে করেছে বার্সেলোনা। এর পেছনে অবশ্য নতুন যুক্ত হওয়া খেলোয়াড়দের অবদান আছে। ম্যানচেস্টার সিটি থেকে সাড়ে ৫ কোটি ইউরো দিয়ে কেনা ফেরান তোরেস ছাড়াও মুফতে অবামেয়াং ও আলভেজ যুক্ত হয়েছেন। উলভারহ্যাম্পটন থেকে ধারে যুক্ত হয়েছেন আদামা ত্রায়োরে।
কোমানের সময়টায় দলের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খেলোয়াড়ও চোটে ছিলেন। ফলাফলে এর প্রভাবও ছিল বলে দাবি কোমানের। ছাঁটাই করার সময় ক্লাব সেসব বিবেচনা করেনি বলেই দাবি তাঁর, বার্সেলোনাকে জাভিকে যে সময় দিয়েছে, ‘আমাকে সেটা দেয়নি। এখনো এটা কষ্ট দেয়। আমি অনেক চোটাক্রান্ত খেলোয়াড় নিয়ে কাজ করছিলাম। এখন পেদ্রি ফিরেছে, উসমান দেম্বেলে ফিরেছে। সব কোচেরই বোর্ডের কাছ থেকে সময় ও ধৈর্য প্রাপ্য।’
এ মৌসুমে কোমান যখন ছাঁটাই হচ্ছেন, বার্সেলোনা তখন লিগে নবম স্থানে। কোমানের অবশ্য দাবি, লাপোর্তার তাঁর প্রতি আগ থেকেই আস্থা ছিল না, ‘লাপোর্তা আমাকে হাজারবার বলেছে, জাভি তার কোচ হবে না, কারণ তার অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু আমিও লাপোর্তার কোচ নই। প্রথম দিন থেকেই আমি এটা টের পেয়েছি। যখন নির্বাচিত হলো (মার্চে), তখন থেকেই আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না। আমাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি।’
২০২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে উড়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। কোমান দায়িত্ব নেওয়ার পর লুইস সুয়ারেজ ও ইভান রাকিতিচ চলে গেছেন আর্থিক কারণে। সে দল নিয়েই লিগে তৃতীয় হয়েছেন, কোপা দেল রে জিতেছেন। তবু নাকি লাপোর্তার মন জিততে পারেননি, ‘আমি আসলেই বার্সেলোনায় সফল হতে চেয়েছি। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে সরাতে চায় লাপোর্তা কারণ, আমি তার নিয়োগ না। আমাকে ক্যাম্প ন্যুতে বেশ কিছুদিন দেখবেন না। আমি এখনো সেটা করতে পারব না। এই সভাপতি থাকলে, কিছু হয়নি—এমন ভাব দেখাতে পারব না।’