মেসির চিরন্তন স্বীকৃতির পরিকল্পনা বার্সেলোনার
বার্সেলোনার অনেক সমর্থকের কাছে তিনি ‘ভিলেন।’ আবার কারও চোখে তিনি ‘পরিবারের বড় ছেলে’—বৃহত্তর স্বার্থে যাঁকে প্রেম বিসর্জন দেওয়ার সাহস দেখাতে হয়েছে। লিওনেল মেসিকে ক্লাবে রাখতে না পারায় সমর্থকদের কাছে হোয়ান লাপোর্তার ভাবমূর্তি যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, এ নিয়ে সংশয় সামান্যই।
গত মৌসুমে মেসির বার্সেলোনা থেকে কান্নাভেজা বিদায়ের পর লাপোর্তার অনেক মন্তব্য মেসি আর লাপোর্তার সম্পর্কেও বিভেদের ইঙ্গিতই দিয়েছে। এমনকি মেসি নিজেই লাপোর্তার মন্তব্য নিয়ে বিরক্তি, হতাশা জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জনেরও শেষ নেই।
এত কিছুর মধ্যেও সেই লাপোর্তাই এখন জানাচ্ছেন, মেসিকে বার্সায় দারুণ কোনো উপায়ে সম্মান জানাতে চান তিনি। এমন কিছু, যেটা বার্সায় মেসির অসামান্য অবদানের চিরস্থায়ী স্বীকৃতি হয়ে থাকবে। আগেও এমন কথা দু-একবার বলেছেন লাপোর্তা, তবে বার্সার সর্বশেষ সাধারণ সভায় সে প্রতিশ্রুতি আনুষ্ঠানিকভাবেই দিয়েছেন।
বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির চুক্তি গত বছরের জুনে শেষ হলেও আগস্টে আবার নতুন করে চুক্তি হবে, এমনটাই পুরো জুন-জুলাই-আগস্টে শোনা গেছে। আগের সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউর প্রশাসনের হঠকারী অনেক সিদ্ধান্ত আর প্রশাসনিক ব্যর্থতায় বার্সার আর্থিক যে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে মেসির চুক্তি নবায়ন নিয়ে তখনো সংশয় ছিল।
কিন্তু মেসির চুক্তি নবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েই সভাপতি নির্বাচনে জেতা লাপোর্তা তখন সব সময় বলেছেন, চুক্তি নবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অথচ আগস্টে কী দেখা গেল?
ছুটি কাটিয়ে আগস্টের শুরুতে মেসি বার্সেলোনায় ফিরেছিলেন চুক্তিতে সই করতে, আগের চুক্তির চেয়ে ৫০ শতাংশ বেতন কমাতে নির্দ্বিধায় রাজি হয়েই চুক্তি সই করতে প্রস্তুত ছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। কিন্তু যেদিন চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল, সেদিন হঠাৎ শেষবেলায় বার্সেলোনা জানিয়ে দিল, লা লিগার বেতনের সীমার কড়াকড়ির কারণে মেসির চুক্তি নবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
তেমন কিছু যদি হবেই, সে ক্ষেত্রে লাপোর্তা কেন আগে থেকে সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেননি মেসিকে, কেন সব সময় ‘ফাঁপা আত্মবিশ্বাস’ দেখিয়েছেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক। বার্সার সিদ্ধান্ত দিতে এত দেরি না হলে মেসির ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার সুযোগও খোলা থাকত কি না, এ নিয়েও বিতর্ক হয়।
কিন্তু সেসব ছাপিয়ে লাপোর্তার অনেক মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে অনেক বেশি। একবার বললেন, মেসি কেন ফ্রি-তে খেলতে রাজি হলেন না! অথচ স্প্যানিশ আইনে আগের চুক্তির ৫০ শতাংশের বেশি বেতন কমানোর নিয়মই নেই।
সেটির জবাবে মেসি তখন বললেন, তাঁকে যত বেতন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সবই তিনি বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন। আরও কিছুর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি এক পায়ে খাঁড়া ছিলেন সেটি করতে। এত কিছুর পরও লাপোর্তার এমন কথায় কষ্ট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মেসি।
দুদিন আগে হয়ে যাওয়া বার্সার সাধারণ সভায় মেসিকে নিয়ে যে প্রশ্ন থাকবে, সেটি তো অনুমিতই ছিল। সেখানে অবশ্য কোনো বিতর্কের জোগান আর দেননি লাপোর্তা। এ বছরের শুরুর দিকে একবার বলেছেন, মেসিকে যেতে দিতে হওয়ার সিদ্ধান্তটা তাঁর ‘জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত’ ছিল, তবে ‘সেটি নিয়ে কোনো অনুতাপ ছিল না, কারণ ক্লাবই সব সময় সবকিছুর আগে।’
এবার যখন সাধারণ সভায় মেসির অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠল, সেটির জবাবে লাপোর্তা বললেন, ‘মেসিকে সম্মান জানানোর ব্যাপারে কারও কাছে দারুণ কোনো ভাবনা থাকলে আমি নিজেই সেটিকে সমর্থন দেব, সে পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দেব। ও বার্সাকে যা দিয়েছে, এরপর ওকে আমাদের চিরন্তন কোনো স্বীকৃতি দিতেই হবে।’
মেসির সঙ্গে সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক শীতল হয়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন বার্সা সভাপতি, ‘আমার খুব মন খারাপ হয় এটা ভাবলে। যে পর্যন্ত এটা আবার ঠিকঠাক না হবে, আমার এই কষ্টটা যাবে না। সে সময়ে আমাদের যা করতে হতো, তা-ই করেছি আমরা। তবে সেটার কারণে আমাদের কাছ থেকে ওর যে বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্য, সেটি নষ্ট হতে দিতে পারি না।’
বার্সার জন্য মেসি কী, সেটির প্রকাশেও উচ্ছ্বসিতই দেখা গেল লাপোর্তাকে, ‘আমাদের এত এত আনন্দ আর অর্জনের মুহূর্ত এনে দেওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য এমন কিছু (মেসিকে সম্মাননা জানানো) খুব তাড়াতাড়িই করতে পারব বলে আশা করি। ওকে ছাড়া বার্সেলোনার গত ২০টি বছর কল্পনাই করতে পারবে না কেউ। সে সময়ে ক্লাবের সবগুলো দলের প্রেরণাই হয়ে ছিল ও।’
ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন জানাচ্ছে, বার্সায় চায় ২০২৪ সালে ক্যাম্প ন্যু-তে দারুণ কোনো আয়োজনে মেসিকে তেমন সম্মাননা জানাতে চায় বার্সা, এবং কাতালান ক্লাবটির আশা, মেসি সেটিতে রাজি হবেন। ২০২৪ কেন? সেটি যে বার্সেলোনার ১২৫তম বার্ষিকী!