মেসিকে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া একটা ‘কেলেঙ্কারি’
নির্বাচিত ১৮০ জন সাংবাদিকের ভোটে ব্যালন ডি’অরের জন্য মনোনীত করা হয় ৩০ জন ফুটবলার। এরপর বিশেষজ্ঞ ৫০ জন সাংবাদিক তালিকা ছেঁটে করেন ৫ জনের। এরপর শুরু হয় ভোটাভুটি। ভোটার বিশ্বের বিভিন্ন জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কেরা। এই ভোটাভুটিতে ৬১৩ পয়েন্ট পেয়ে এবারের ব্যালন ডি’অর জিতেছেন লিওনেল মেসি। দ্বিতীয় সেরা বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডফস্কি পেয়েছেন ৫৮০ পয়েন্ট। চেলসির জর্জিনিও তৃতীয় সেরা হয়েছেন ৪৬০ পয়েন্ট পেয়ে।
ব্যালন ডি’অরের এই ফল কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না জার্মানরা। লেভানডফস্কি না পেয়ে পুরস্কারটা মেসি পাওয়াতে ক্ষোভে ফুঁসছে তারা। জার্মানির সংবাদমাধ্যম, সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়—সবাই মিলে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন। জার্মানির পত্রিকা বিল্ড ব্যালন ডি’অর নিয়ে তাদের লেখা খবরটির শিরোনাম দিয়েছে এ রকম, ‘এটা কীভাবে সত্যি হয়! এটা রীতিমতো একটা কেলেঙ্কারি।’
২০২০ সালের ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইয়ে একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে ছিলেন লেভানডফস্কি। ২০১৯–২০ মৌসুমে বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়নস লিগ, জার্মান কাপ ও জার্মান সুপার কাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। কিন্তু গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পুরস্কারটি দেয়নি ফ্রান্স ফুটবল। গত মৌসুমেও লেভা ছিলেন দুর্দান্ত। বায়ার্নকে বুন্দেসলিগা ও জার্মান সুপার কাপ জিতিয়েছেন তিনি। বুন্দেসলিগা জয়ের পথে গড়েছেন অনন্য এক গোলের রেকর্ড। ৪১ গোল করে ভেঙেছেন বুন্দেসলিগায় এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের কিংবদন্তি গার্ড মুলারের ৪৯ বছরের রেকর্ড। এ মৌসুমেও পোলিশ স্ট্রাইকার আছেন দারুণ ছন্দে। এখন পর্যন্ত বায়ার্নের হয়ে ২০ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৫ গোল।
অন্যদিকে মেসি গত মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে তেমন কিছুই জিততে পারেননি। বার্সেলোনার জার্সিতে ভুলে যাওয়ার মতো একটি মৌসুমই কাটিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। এ মৌসুমে পিএসজিতে নাম লেখালেও চোট–টোট মিলিয়ে অনেকটা সময়ই ছিলেন মাঠের বাইরে। তবে এ বছর আর্জেন্টিনার হয়ে কাটিয়েছেন শিরোপা–খরা। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন বড় কোনো শিরোপা। মেসি নিজেও মনে করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২১ কোপা আমেরিকা জয়ই তাঁকে এনে দিয়েছে ক্যারিয়ারের সপ্তম ব্যালন ডি’অর।
কিন্তু এসব যুক্তি মানতে পারছেন না বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানির সাবেক অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউস। ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ঘোষণার পর ১৯৯০ বিশ্বকাপ জয়ী ম্যাথাউস বলেছেন, ‘লিওনেল মেসি এবং মনোনীত বাকি সব খেলোয়াড়ের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, লেভানডফস্কির চেয়ে বড় দাবিদার আর কেউই নয়। ফ্রান্স ফুটবল গত বছর পুরস্কারটি দেয়নি। তবে শুধু শিরোপার হিসাব করা হলেও ২০২০ সালে লেভানডফস্কি ব্যালন ডি’অর জয়ে ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী।’
ম্যাথাউস এখানেই থামেননি। এবারও যে লেভানডফস্কি ছিলেন সবচেয়ে বড় দাবিদার, সেটা বলার সঙ্গে তিনি যুক্তিও দেখিয়েছেন, ‘এমনকি শুধু ২০২১ সালকেও যদি বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলেও বাকিদের চেয়ে এগিয়ে সে। সে গার্ড মুলারের রেকর্ড ভেঙেছে। সব ধরনের প্রতিযোগিতারই সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় আছে সে। জাতীয় আর আন্তর্জাতিকভাবে বাকি সবাইকে সে পেছনে ফেলেছে।’
বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে লেভার ব্যালন ডি’অর জিততে না পারা নিয়ে কথা বলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুস। তাঁর কথা, ‘এমনটা ঘটা উচিত হয়নি।’ রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক গোলকিপার ইকার ক্যাসিয়ার এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘কোনো সন্দহে নেই যে দশকের সেরা ফুটবলার মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তবে এ বছর তাদের দুজনের চেয়ে অন্যরা এগিয়ে আছে।’