মেসিকে খাঁচায় ভরে রাখলেন এক 'দাঁতের ডাক্তার'
>প্রথম ম্যাচেই আর্জেন্টিনাকে রুখে দিয়েছে আইসল্যান্ড। মেসিকে খাঁচাবন্দী করে রাখার পুরো কৃতিত্বটা আইসল্যান্ডের কোচ হেইমির হলগ্রিমসনের। পেশায় তিনি একজন দাঁতের চিকিৎসক
শেষ বাঁশি বাজার পর মুখে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকলেন নিজের জায়গায়। এরপর শরীরটা টেনে নিয়ে চললেন সামনের দিকে। আর্জেন্টিনার স্বপ্নের প্রতীক হয়ে ছিলেন, হতাশার সাগরে ডুবে যাওয়া সেই দলটির প্রতীকও তিনিই—লিওনেল মেসি!
আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গত সন্ধ্যার ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা। মেসি করেছেন পেনাল্টি মিস। যার ওপর দলের সবচেয়ে বড় ভরসা, তাঁর জন্যই কি ডুবল দল? অনেকেরই কথাটাতে আপত্তি থাকতে পারে। কিন্তু আর্জেন্টিনা তো ডুবেছেই। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর দুইবারের রানার্সআপরা যখন বিশ্বকাপে নবাগত এক দলের সঙ্গে জিততে পারে না—সমর্থকদের কাছে সে ফল তো হারের সমানই।
মেসিকে কাল পুরোপুরি বোতলবন্দী করে রেখেছিলেন এক দাঁতের ডাক্তার। আইসল্যান্ডের কোচ হেইমির হলগ্রিমসনের পেশা দন্ত চিকিৎসকের। হোর্হে সাম্পাওলির মতো পুরোদস্তুর পেশাদার কোচ তিনি নন। দাঁতের চিকিৎসা করার ফাঁকে-ফোকরে তিনি একজন ফুটবল কোচ। কিন্তু কাল সন্ধ্যার পর এই হলগ্রিমসনের ওপর নজর গোটা ফুটবল বিশ্বেরই। এই যে প্রতিপক্ষের সেরা ফুটবলারকে একটা গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা, আর্জেন্টিনার মতো এত এগিয়ে থাকা দলকে চাপে ফেলে পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া, এর পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই তাঁর। শিষ্যদের আলট্রা ডিফেন্সিভ (পড়ুন দৃষ্টিনন্দন ডিফেন্ডিং) ফুটবল খেলিয়ে তিনি দেখালেন, কী ভাবে সাম্পাওলির মগজকে ভোঁতা করে দেওয়া যায়।
মেসিকে খুব ভালো করেই পড়ে ফেলেছিলেন হলগ্রিমসন। অন্যরা মেসিকে যেভাবে ঠেকাতে চান আইসল্যান্ড কোচ ঠিক সেভাবে ভাবেননি। অন্যদের মতো কোনো নির্দিষ্ট ডিফেন্ডারকে মেসির পেছনে লেলিয়ে দেননি। তিনি মেসিকে রেখেছিলেন জোনাল মার্কিংয়ে। মেসির পায়ে বল গেলে একজন বাঁধা দিয়েছেন, পেছনে একজন থাকলেন কভারিংয়ে, একজন ব্যালেন্সও ছিলেন—এটি প্রতিপক্ষের যেকোনো ভালো খেলোয়াড়কে ঠেকাতেই করা হয়। এ ছাড়া ক্রমাগতভাবে পেছন থেকে মেসিকে তাড়া করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন হলগ্রিমসন। এভাবেই হাসি মুখে দাঁতে দাঁত কামড়ে পুরোটা সময় ডিফেন্ডিং করে দেখাল আইসল্যান্ড। পরিকল্পনার এমন নিখুঁত বাস্তবায়ন হলে কোচকে তো কৃতিত্ব দিতেই হবে।
মেসির পায়ে বল গেলে ঝাঁকুনি খায় গোটা পৃথিবী। কিন্তু কাল সেই কাঁপুনিটা সৃষ্টি করল আইসল্যান্ড। সেই কাঁপুনির নেপথ্যে একজন আধা-পেশাদার ফুটবল কোচ। বিশ্বকাপ শেষ যিনি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে।